শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন
মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি॥ পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ না করে বিল উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে।
অর্থ বছর শেষ হওয়ার অজুহাতে উপজেলা প্রকৌশলী নাম মাত্র পে-অর্ডার রেখে কাজের অর্ধেক বিল ছাড় করেছেন। অথচ উত্তর রানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ হয়েছে ১০% ও পশ্চিম-দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া বিদ্যালয়ে কাজ ২০% হয়েছে বলে জানিয়েছেন বর্তমান উপজেলা প্রকৌশলৗ মো. শেখ আজিম উর রশিদ। কাজ না করেই দুইটি বিদ্যালয়ের ৫০% বিল বিল উত্তোলন করে নিয়েছে।
উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মির্জাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম-দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া ও উত্তর রানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করে মির্জাগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি বিভাগ।
এনএনজিপিএস প্রকল্পের আওতায় ভবন নির্মাণ কাজের জন্য ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি ঠিকাদার নিযুক্ত হয় মেসার্স কে কে এন্টারপ্রাইজ পটুয়াখালী ও রানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঠিকাদার নিযুক্ত হয় পটুয়াখালীর বাউফলের মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজ।
আমড়াগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঠিকাদারের সাথে চুক্তিমূল্য ৭৯ লাখ ৪ হাজার ২১৯ টাকা ও উত্তর রানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চুক্তিমূল্য ৭৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৩৬ টাকা।
ভবন নির্মাণের জন্য দুই ঠিকাদারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর থেকে ওই অর্থ বছরে কাজ শুরু না করে টালবাহানা শুরু করেন। পরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুন ক্লোজিং এ টাকা ফেরত যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সুলতান হোসেনকে ম্যানেজ করে কোন কাজ না করেই কে কে এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে ৩৫ লক্ষ ৭২ হাজার ৯৭৭ টাকা বিল উত্তোলন করে এবং মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে ৩৭ লাখ ৪৮ হাজার ৩৭২ টাকা বিল উত্তোলন করেন।
প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি শেষ হলেও এখন পর্যন্ত ১০% কাজ হয়েছে বলে জানান উপজেলা প্রকৌশলী।
বিদ্যালয় ভবন দুইটি দেড় বছরেও শেষ না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে দুই বিদ্যালয় প্রায় পাঁচ শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ছোট্ট একটি দোচালা টিনের ঘরে কোন রকম গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে বছরের পর বছর। অথচ দেড় বছর হয়ে গেলেও ভবনটি নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজের ৫০% বিল উত্তোলন করে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা যায়।
এব্যাপারে উত্তর রানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল বারি বলেন,বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ শুরু না করেই উপজেলা প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করে বিল উত্তোলন করে নিয়েছে। অথচ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দেখে বারবার উপজেলা প্রকৌশলীকে অবহিত করেছি তাতে কোন লাভ হয়নি। ইউএনও স্যারকেও বিষয়টি অবহিত করেছি।
পশ্চিম-দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসলে উদ্দিন মিন্টু মিয়া বলেন, আমার বিদ্যালয়ের দেড় বছরে ২০% কাজ হয়েছে। অথচ ঠিকাদার বিদ্যালয়ের কাজ না করেই ছাদের বিলও নিয়ে গেছে শুনেছি।
এব্যাপারে পশ্চিম-দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিযুক্ত ঠিকাদার মো. কবির হোসেন বলেন, আমার ফার্মের নামে পটুয়াখালীর এক ব্যক্তি কাজটি পেয়েছেন। তিনি কাজ না করে বিল উত্তোলন করেছেন কিনা তা আমি জানি না।
পটুয়াখালী নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারকে আমি লিখিত ভাবে অবহিত করেছি আমার ফার্মের নামে চেক দেয়ার জন্য। কিন্তু আমার ফার্মের নামে একাউন্ট-পে চেক না দিয়ে নগদ টাকা কিভাবে উত্তোলন করেছেন তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পরে আমি জানতে পারি যে, তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী মো. সুলতান হোসেনের সহায়তায় নগদ ৩৫ লক্ষ ৭২ হাজার ৯৭৭ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। কাজের নগদ টাকা কিভাবে উত্তোলন করেছে তা আমার জানা নেই। আমার ফার্মের নামে কোন বিল দেয়া হয়নি। এখন সমস্যা হলে আমার ফার্মের নামেই হবে। তাই আমি সকলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করব।
তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলীর ভারপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষক মো. মাহাবুব হোসেব বলেন, একাউন্ট পে চেক না দেয়া আমার ভুল হয়েছে। তবে উপজেলা প্রকৌশলী মো. সুলতান হোসেন স্যার নগদ টাকা উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে আমাকে বলেন।
তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী মো. সুলতান হোসেন বলেন, বিদ্যালয় নির্মাণ কাজ শেষ না হলেও ঠিকাদারের কাজ থেকে পে-অর্ডার রাখা হয়েছে। টাকা ফেরত যাওয়ার কারণে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। এগুলো তো আপনাদের বিষয় না। বিদ্যালয়ের কাজ হয়নি তা নিয়ে আপনাদের এত খোঁচা-খুঁচির দরকার কি?।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. শেখ আজিম উর রশিদ বলেন,আমি এখানে যোগদান করার পর থেকেই দেখছি ঠিকাদার কাজ না করেই বিল উত্তোলন করে নিয়েছে।
তবে কিভাবে নিয়েছে সেটা আমি জানিনা। ঠিকাদারের সাথে চুক্তিবদ্ধ অনুযায়ী কাজের মেয়াদ চলতি বছরের জানুয়ারিতে শেষ হয়েছে। তবে ঠিকাদারদের দিয়ে ১০% ও ২০% পর্যন্ত কাজ করাতে পেরেছি। ঠিকাদারকে ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। ঠিকাদার কাজ না করে টালবাহানা করছে।
Leave a Reply