সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩০ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ ঝালকাঠিতে যুব নেতাদের অনুসারী হয়ে আড্ডার দিকে ঝুঁকছে উঠতি বয়সী কিশোর-তরুণরা। জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। স্কুল-কলেজে যাওয়ার নাম করে তারা ইউনিফর্ম পরে পার্কে, গাবখান ব্রিজে ও চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছে। বিকেল হলে গ্রুপভিত্তিক অবাধ বিচরণ দেখা যায়। সেই বিচরণ চলে রাত ১০টা-১২টা পর্যন্ত।
ফলে জেলায় কিশোর ‘গ্যাং, সামাজিক ও মানবিক অবক্ষয় রুখতে মাঠে নেমেছেন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার (এসপি) ফাতিহা ইয়াসমিন। তাকে সহযোগিতা করছে সদর থানা পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
সন্ধ্যার আগেই তরুণদের বাড়ি ফেরানো, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সমন্বয়ে অভিভাবক সমাবেশ ও স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং সভাসহ নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন এসপি ফাতিহা ইয়াসমিন। যার ফলে অভিভাবকদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে।
জানা গেছে, জেলার বখাটেপনা বন্ধে শহরের অলিগলির সব চায়ের দোকান কিংবা পার্ক অথবা আড্ডাস্থল থেকে তরুণদের সন্ধ্যার পূর্বেই বাসায় ফেরার নির্দেশ দিয়েছেন এসপি ফাতিহা ইয়াসমিন। সন্ধ্যার পরই শহরে আকস্মিক পরিদর্শন শুরু করেছেন কিশোরদের সম্ভাব্য আড্ডা স্থলে। এ সময় কাউকে পাওয়া গেলে সাময়িক শাস্তি অথবা অভিভাবককে ডেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন। দ্বিতীয়বার পেলে অভিভাবকদের এসে জিম্মায় নিয়ে যেতে হবে অথবা জেলে যেতে হবে বলে সতর্ক করে দিচ্ছেন তিনি।
এছাড়াও পারিবারিক সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সমন্বয়ে জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিভাবক সমাবেশ এবং মা’দক, জঙ্গিবাদ, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, যৌতুকবিরোধী জনসচেতনতামূলক সভা ও স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং সভা করছেন। সন্তানরা কোথায় যায়, কি করে, ঠিক মত স্কুলে যায় কি-না, নিয়মিত পড়াশুনা করে কি-না, পার্কে আড্ডাবাজি করে কি-না সে সম্পর্কে এসব সমাবেশে তিনি অভিভাবকদের সন্তানের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান। এসব কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ঝালকাঠি শহরকে যানজটমুক্ত করার জন্য শহরের গুরুত্বপুর্ণ পয়েন্টসমূহে গাড়ি চেকিং ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সরেজমিনে নিজে উপস্থিত থেকে কাজ করছেন এই পুলিশ সুপার।
পুলিশ সুপারের এসব কার্যক্রম নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, ইতোপূর্বে জেলায় যতো পুলিশ সুপার এসেছেন তারা যেসব কাজ করতে পারেননি বর্তমান পুলিশ সুপার তা করে সফলতা দেখিয়েছেন। অল্প দিনেই তিনি তার কর্মকাণ্ডে অভিভাবকসহ সর্বমহলে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। তার কর্মকাণ্ডে অল্প দিনেই শুধু ঝালকাঠি জেলা নয়,বরিশাল বিভাগ জুড়ে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে।
বাহের রোডের বাসিন্দা অভিভাবক আব্দুল আলিম খলিফা বলেন, আমার ছেলেদের নিয়ে আমি খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছিলাম। ক্রমেই যেন অবাধ্য হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎই ঝালকাঠি জেলার পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিন আমার জীবনে আশির্বাদ হয়ে এসেছেন। আমি মনে করি শুধু আমি নয়, জেলার অনেক অভিভাবকের জীবনেই এমনটা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের সন্তানদের প্রতি যে দায়িত্ব পালনে আমরা ব্যর্থ হয়েছি, সেই দায়িত্ব তিনি পালন করছেন। যার ফলে বিপথগামী সন্তানরা এখন স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হচ্ছে।
ঝালকাঠি পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আফজাল হোসেন বলেন, আমি একজন অভিভাবক হিসেবে মনে করি ফাতিহা ইয়াসমিনের মতো পুলিশ সুপার পেয়ে ঝালকাঠিবাসী ধন্য। তিনি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন সদিচ্ছা থাকলে সমাজের ভালো করা সম্ভব।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠির পুলিশ সুপার (এসপি) ফাতিহা ইয়াসমিন বলেন, আমি ঝালকাঠিতে আসার পর দেখেছি এখানে উঠতি ছেলেদের রাতভর আড্ডাসহ বিভিন্ন ধরনের সমাজ ও আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড হচ্ছে। কিন্তু আমি এখন পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছে আমার জেলায় এসব হবে না। যারা এসব বেআইনি কাজ করছেন তাদের সম্পূর্ণরুপে শুদ্ধ হয়ে চলতে হবে। নতুবা তাদের বি’রুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, আমি মা’দক কারবার, চাঁ’দাবাজি বা জুয়া খেলা কিংবা কোনো অ’পরাধমূলক কাজ মেনে নেব না। আমার ঝালকাঠি জেলা থাকবে মা’দক ও দুর্নীতিমুক্ত।
এসপি ফাতিহা ইয়াসমিন বলেন, শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে দিন থেকে শুরু করে রাত ১২টা নাগাদ তরুণ প্রজন্ম আড্ডা দেয়। এটা যেমনি সমাজের দৃষ্টিতে খারাপ তদ্রুপ পরিবারের জন্যও। তাছাড়া ওই সময় অনেক ছেলে বখাটেপনা করে। তাই আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে জানিয়ে দিতে চাই যে, ঝালকাঠিতে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া সকল তরুণদের সন্ধ্যার পূর্বেই পড়ার টেবিলে ফিরতে হবে।
তিনি আরো বলেন, শুধু বাসস্টেশন ও লোক সমাগম এলাকাগুলো বাদ দিয়ে শহরের বাকি সকল অলিগলিতে সন্ধ্যার পর দলবদ্ধ আড্ডা মেনে নেয়া হবে না। আইনের ঊর্ধ্বে আমরা কেউ নই। তাই সবাই যখন আইন-কানুন মেনে চলবো তখনই সুন্দর ও বাসযোগ্য শহর গড়ে উঠবে।
এসপি ফাতিহা ইয়াসমিন বলেন, লেখাপড়া ফাঁকি দিয়ে যেসব শিক্ষার্থী চায়ের দোকান এবং পার্কসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করছে তাদেরকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠানোর জন্য আমরা একটি বিশেষ অভিযানে নেমেছি। লেখাপড়া ফাঁকি দিয়ে আড্ডার ফলে যুব সমাজ যাতে ধ্বংসের পথে পা বাড়াতে না পারে সেদিকে খেয়াল রেখে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
Leave a Reply