মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৫:৩৩ অপরাহ্ন
শামীম আহমেদ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ এর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশজুড়ে উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। এর অংশ হিসেবে বরিশালের বানারীপাড়া ও উজিরপুরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়িত হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গত এক যুগে বরিশালের এ দুই উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়িত হয়েছে এবং চলমান রয়েছে। উন্নয়ণের ছোঁয়ায় গ্রামীণ জনপদ এখন অবয়বে শহুরে জনপদে রূপ নিয়েছে। ফলে চোখে পড়ার মতো সরকারের এ উন্নয়নের জয়গান এখন এলাকাবাসীর মুখে মুখে।
২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে আওয়ামী লীগের এমপি(তৎকালীন) মো. মনিরুল ইসলাম মনি প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু করেন। যার সিংহভাগ কাজ তার মেয়াদে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং গত প্রায় এক যুগ ধরে নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।
উজিরপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করে অবহেলিত বন্দর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পৌর শহরের সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। বানারীপাড়া পৌরসভায় প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতল পৌর ভবন নির্মাণ, সন্ধ্যা নদীর তীরে বাঁধের আদলে ব্রিজসহ বৃহৎ আকারের রাস্তা ও ওয়াটার সাপ্লাই চালু, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, প্রেস ক্লাবের ভবন, গোরস্থান ও শ্মশান ঘাট এবং রাস্তা, ড্রেন, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণসহ পৌর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ১০ কোটি টাকার অধিক ব্যয়ে (প্রতিটি ৫ কোটি টাকার উপরে) বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
বানারীপাড়ার লবণসাড়া গ্রামে ১০ শয্যা শিশু হাসপাতাল নির্মাণ করার পাশাপাশি প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। বানারীপাড়া ও উজিরপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলার মানুষ সহজ পথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধে শ্রদ্ধা জানাতে যেন যেতে পারেন সে জন্য এমপি মো. মনিরুল ইসলাম মনি জাইকা প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ের বাইশারী ইউপির শিয়ালকাঠি থেকে বিশারকান্দি ইউপি পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও ৯৮টি ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করেছেন।
এছাড়া কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে উজিরপুর শহর থেকে ধামুড়া-হারতা-সাতলা-কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া সড়ক পাকাকরণ ও অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সাতলা নদীতে ১২০ কোটি ও হারতা নদীতে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহৎ আকারের ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। বানারীপাড়ার বিশারকান্দি ইউপির চৌমোহনা বাজার সংলগ্ন নদীতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রিজ নির্মাণ ও অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয়ে বানারীপাড়ার বাইশারী ইউপির শিয়ালকাঠি ফেরিঘাট থেকে উদয়কাঠি ইউপি হয়ে বিশারকান্দি ইউপি পর্যন্ত প্রস্থর কার্পেটিং রাস্তা ও অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। বিশারকান্দির চৌমোহনা ব্রিজসহ এ রাস্তা নির্মাণের ফলে বরিশালের উজিরপুর-আগৈলঝাড়া, পিরোজপুরের নাজিরপুর, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়ার সঙ্গে বানারীপাড়ার সেতুবন্ধন সৃষ্টি হবে। এছাড়াও বানারীপাড়া ও উজিরপুরে শতাধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল,মাদরাসা এবং কলেজে বহুতল ভবন ও সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে এবং বেশকিছু ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
এ দুই উপজেলায় প্রায় কয়েকশ’ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ পাকা সড়ক পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। গত প্রায় এক যুগে এ দুই উপজেলায় কমপক্ষে দুই শতাধিক ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। বানারীপাড়া-বরিশাল সড়কের রায়ের হাটে আধুনিক ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর ওপর স্বপ্নের সেতু নির্মাণ ও বিশারকান্দিতে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ও চাখারে শের-ই বাংলা হাইটেক পার্ক স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই ও স্থান নির্ধারণের প্রাথমিক কাজ এরমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও মসজিদ, মন্দির, গির্জা, চার্চ, প্যাগোডা, ক্লাবসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। এরমধ্যে এ দুই উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়েছে।
২০০৯ সালে তৎকালীণ এমপি মো. মনিরুল ইসলাম মনির আমলে শুরু হওয়া উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ২০১৪-১৮ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখেন এমপি ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস। সেই ধারাবাহিকতায় এ আসনের বর্তমান এমপি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শাহে আলম বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলাকে আরো উন্নত, সমৃদ্ধ আলোকিত উপজেলায় রূপান্তরের জন্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসহ সব দফতর শতভাগ ডিজিটালাইজড করাসহ উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
সম্প্রতি বানারীপাড়া ও উজিরপুর পৌর শহরে আধুনিক মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজে ছয়তলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। বানারীপাড়া পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র ডাকবাংলো মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ভাস্কর্য (ম্যুরাল)নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরে ঘরে ফ্রি সৌর বিদ্যুৎ স্থাপনের পরে এখন বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কের উজিরপুরের গুঠিয়া থেকে বানারীপাড়ার বিশারকান্দি ইউপি ও উজিরপুরের ইচলাদি থেকে সাতলা ইউপি পর্যন্ত সড়কে স্ট্রিট লাইট স্থাপনের কাজ চলছে।
এর ফলে দুই উপজেলার পৌর শহরসহ ১৭টি ইউপি আলোকিত হবে। এদিকে বরিশালের এ দুই উপজেলায় যে পরিমাণ দৃশ্যমাণ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে তা অনেক প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের এলাকায়ও হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুনাম এখন এলাকার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
Leave a Reply