হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ব্যাপারে উদাসীনতা ছিলো অধ্যক্ষ ও ছাত্রলীগের Latest Update News of Bangladesh

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২৪ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ব্যাপারে উদাসীনতা ছিলো অধ্যক্ষ ও ছাত্রলীগের

হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ব্যাপারে উদাসীনতা ছিলো অধ্যক্ষ ও ছাত্রলীগের




বরগুনা সংবাদদাতা॥ বরগুনা সরকারি কলেজ এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলো বন্ড ০০৭ গ্রুপের সদস্যরা। কলেজ শিক্ষার্থী এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, কলেজ ক্যাম্পাস এবং রোড এলাকায় মাদক কারবার থেকে শুরু করে, মারামারি, ছিনতাইসহ নানা অভিযোগ ছিলো এই গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধে।

এইদিকে বন্ড ০০৭ গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড এবং রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী রিফাত ফরাজীকে (২৩) নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে গিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি রামদা উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার পৌনে ১০টার দিকে বরগুনার সরকারি কলেজের ক্যান্টিনের পূর্ব পাশের ডোবা থেকে রামদাটি উদ্ধার করা হয়। এই রামদা দিয়েই রিফাত ফরাজী প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়েছিলো। এদিকে কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের জনমনে উদ্বেগ আর আতঙ্ক বিরাজ করছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, রিফাত ফরাজীকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র কোথায় রেখেছিল সে কথা স্বীকার করায় সোমবার সকালে তাকে সাথে নিয়ে তার দেখানো ডোবা থেকে রামদাটি উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রিফাত হত্যা মামলায় সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে রিফাত শরীফ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আরিয়ান সাবা নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বাসা বরগুনা পৌর শহরের বাজার সড়কে। বাবার নাম ইউনুস সোহাগ।

এর আগে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানিয়েছিলেন, সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে পরিবেশ ছিলো রীতিমতো ভয়ংকর। সেখানে তারা বন্ড ০০৭ গ্রুপের সদস্যদের বিভিন্ন নির্যাতনের কথা জানাচ্ছেন। আরও জানিয়েছেন, অধ্যক্ষের প্রশ্রয়ে ও ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতাদের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে তারা এখানে আস্তানা গেড়ে বসেছিলো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি কলেজের একজন প্রভাষক বলেন, লেখাপড়া করার পরিবেশই নষ্ট হয়ে গেছিলো এ কলেজে, এখানে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে, এখানকার ছাত্র রাজনীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে, এগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত এখানে বন্ধ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এখানে লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরবে না৷

স্থানীয়রা জানান, মাদকসেবী ও বহিরাগতরা দিনের পর দিন তাণ্ডব চালিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানোর অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিলো। এসব নিয়ে কথা বলার কেউ ছিলো না। প্রতিবাদ করলে জেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতাদের ভয় দেখিয়ে তাদের বিভিন্নভাবে হেনস্থা করা হতো। শিক্ষার্থীদের সাথে এ প্রসঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, ইভটিজিং, মারামারি, চুরি-ছিনতাই করা, অস্ত্রের মুখে জোর পূর্বক টাকা আদায় এবং সামান্য কারণে হোস্টেলে প্রবেশ করে হুমকি ধামকি দেয়া ছিল এদের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এরা ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে বহু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছেন। তারা আরও জানান, কলেজ প্রশাসন ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে এ প্রসঙ্গে অভিযোগ জানিয়েও কোনোদিন আমরা কোনো প্রতিকার পাইনি। উল্টো অপদস্ত হতে হয়েছে। রীতিমত ভীতিকর পরিস্থিতি মধ্য আমরা সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা জিম্মি অবস্থায় ছিলাম। আরও জানা যায়, এই গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রসস্ত্র লুকিয়ে রাখতে কলেজের ভেতরের ক্যাম্পাসকেই ব্যবহার করতো৷

বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৪ সালে বরগুনায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরপরই সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে জুবায়ের আদনান অনিককে আহবায়ক এবং ইলিয়াস আকন, মাহমুদ মিরাজ, বেলাল হোসেন সুজন ও ইউসুফ হোসেন সোহাগকে যুগ্ম আহবায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি গঠিত হওয়ার কয়েক মাস পরে জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনেও অনিক সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পরেও অনিক কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির পদটি ছাড়েননি। সেখানেও জেলা ছাত্রলীগের মতোই তার একাধিপত্য।

সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামিরা জেলা ছাত্রলীগ নেতাদের ক্যাডার হিসেবে শহর দাপিয়ে বেড়াত। তাদের মধ্যে রাব্বী আকন, সায়মন ও চন্দন জেলা ছাত্রলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতাকর্মী বলছেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের খুব কাছের ছিলেন তারা।

সাবেক এমপি ও বর্তমানে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার দুই ছেলে রিশান ফরাজী ও রিফাত ফরাজীর কোনো পদবি না থাকলেও কমিটির নেতাদের সঙ্গে ছিল সুসম্পর্ক। এ ছাড়া মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড ছিল ছাত্রলীগ সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিকের বিশ্বস্ত সহচর। যেকোনো প্রয়োজনে নয়নকে অপারেশনে পাঠাতেন তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, শহরের দোয়েল চত্বরে সিফাত চৌধুরী নামে একজনের ওষুধের দোকান ছিল। চার বছর আগে জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতির ভাইয়ের বিরুদ্ধে ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়ায় নয়ন বন্ডকে পাঠিয়ে অনিক তাকে বেদম প্রহার করিয়েছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীরের ছেলে অনিকের বিরুদ্ধে নয়ন বন্ড, রিশান ও রিফাত ফরাজীদের ‘ক্যাডার বাহিনী’ নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ বহু পুরনো।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক বলেন, রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কোনো আসামির সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। আসামিদের কেউ কেউ বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে থাকতে পারেন, তবে কারও পদ নেই। এ হত্যা মামলার আসামি রাব্বী আকনের বিষয়ে তিনি বলেন, রাব্বী আকন নামে (কমিটিতে) কোনো সদস্য নেই। তবে মো. রাব্বী নামে এক সদস্য রয়েছেন। তবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হত্যা মামলার আসামি রাব্বী আকনই মূলত ছাত্রলীগের কর্মী মো. রাব্বী।

বর্তমান কমিটির কর্মকাণ্ডে হতাশা প্রকাশ করে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমান ছাত্রলীগের সাথে আমরা যারা বিগত দিনের ছাত্রলীগ করেছি, আমাদের খাপ খাইয়ে নিতে কষ্ট হয়। তিনি আরও বলেন, আমাদের সময়ে আমরা আদর্শগত জায়গা থেকে ছাত্রলীগ করেছি। কিন্তু ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির নেতা কর্মীদের দেখলে উচ্ছৃঙ্খল মনে হয়। তাছাড়া তাদের কর্মকাণ্ডও এখন সংগঠনের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ছাত্রলীগের আরেকজন সাবেক নেতা বলেন, বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের এ অবস্থা একদিনে হয় নি। দীর্ঘদিন ধরে চলতে চলতে এ অবস্থায় এসেছে৷ তাছাড়া বর্তমান কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ অনেক দিন যাবত। তিনি ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনতে ও রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে দ্রুত ছাত্রলীগের জেলা সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আনার দাবি জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, এর আগে বরগুনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিলো, অধ্যক্ষ দিনের পর দিন কলেজ ক্যাম্পাসে বন্ড ০০৭ গ্রুপের অপরাধ আড়াল করে রাখার চেষ্টা করেছেন। রিফাত শরীফ কুপিয়ে জখম করার ঘটনার সময় কলেজের সামনের রাস্তায় জনৈক ব্যক্তির দূর থেকে ধারণ করা ও ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি থেকে প্রকাশ্যে হামলাকারীদের ছবি পাওয়া গেলেও কলেজের ভেতর থেকে কারা রিফাত শরীফকে বের করেছিল তা কলেজের সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পাওয়ার কথা। কিন্তু, হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই কলেজের ভেতরে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ দাবি করেন, তাদের কলেজের সব ক্যামেরাই ভালো ছিল। কিন্তু, ২৪ জুন বজ্রপাত হওয়ার কারণে মনিটর নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে কোনও ফুটেজ ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

তবে কলেজ শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের দাবি, ২৪ জুন বরগুনা শহরে বজ্রপাতের কোনও ঘটনাই ঘটেনি। তাদের ধারণা, অধ্যক্ষই কোনো প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে খুনিদের অপরাধ আড়াল করতে সিসিটিভি নষ্টের নাটক করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিকের নিকটাত্মীয়।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD