লাঞ্ছিত মনীষা : এই কলঙ্ক বরিশালবাসীর প্রত্যেক নাগরিকের Latest Update News of Bangladesh

বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪, ০৫:১৮ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




লাঞ্ছিত মনীষা : এই কলঙ্ক বরিশালবাসীর প্রত্যেক নাগরিকের

লাঞ্ছিত মনীষা : এই কলঙ্ক বরিশালবাসীর প্রত্যেক নাগরিকের




 

ডা. মনীষা চক্রবর্তীকে আমি চিনি না। চেনার কোনো কারণ ছিল না। সাম্প্রতিক বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় এই নামটি দেশের রাজনীতি সচেতন মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করে।

মনীষা যে দলের প্রার্থী হয়েছিল, সে দলের অর্থাৎ বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বা বাসদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমার গভীর পরিচয় আছে। বুঝতে পারি তিনি বাম চিন্তায় উদ্বুদ্ধ বাংলাদেশের বর্তমান তরুণ প্রজন্মের একজন প্রতিনিধি। শুধু রাজনৈতিক বিশ্বাসে নয়, পেশায় চিকিৎসক হিসেবে তিনি এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলে জেনেছি।

বরিশালের প্রত্যেকে তাকে গরিবের বন্ধু হিসেবে চেনে এবং সেই গরিবেরা তাদের সঞ্চিত সামান্য অর্থ থেকে মনীষার নির্বাচনী তহবিলের অংশীদার হয়েছিলেন। বাংলাদেশের গণরাজনীতির ক্ষেত্রে এ এক তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন।

কিন্তু সে মনীষাও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছেন। একমাত্র ফ্যাসিবাদী শাসন ছাড়া অন্য কোনো শাসনব্যবস্থায় এ আচরণ দেখা যায় না। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে মনীষা হয়তো একদিন বিষয়টি ভুলে যাবেন।

এটাও বিশ্বাস করি তিনি প্রতিহিংসার রাজনীতি করবেন না এবং যারা তার ওপর হামলা করেছে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দানে বিরত হবেন না। লাঞ্ছিত হওয়ার এই কলঙ্ক মনীষা চক্রবর্তীর নয়, এই কলঙ্ক বরিশালবাসীর প্রত্যেক নাগরিকের।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যিনি জয়লাভ করেছেন, তার এই কলঙ্কিত জয়ের প্রয়োজন ছিল না। তিনি এবং তার দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলে আসছিল বরিশালে নৌকার পক্ষে যে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে তাতে অন্যরা ভেসে যাবে।

প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি’র কথা জানি না; কিন্তু জোয়ার ঠেকানোর ক্ষমতা মনীষা চক্রবর্তী বা তার দলের ছিল না। তবুও তাকে জোয়ারের স্রোতে নয়, বদ্ধ জলাশয়ের পঙ্কিল আবর্তে পতিত হতে হয়েছে। বদ্ধ জলাশয়ের জল পচে যায় একথা মানতেই হবে।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সারাদিন যেসব ঘটনা ঘটেছে তা মিডিয়ার কল্যাণে দেশবাসী দেখেছে, অন্য কেউ না হোক বরিশালবাসীর চোখের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করেনি। প্রার্থীদের মধ্যে একমাত্র মনীষাই ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন করেছেন।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিজয়কে প্রশবিদ্ধ করেছে। কেন এ আচরণ? দু’ভাবে এর ব্যাখ্যা করা যেতে পারে : বিজয়ী প্রার্থী বিজয় সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন না অথবা তার দলের প্রার্থীরা অন্যান্য নির্বাচনে যে ধরনের আচরণ করে বিজয়ী হয়েছেন এক্ষেত্রেও সেটা করা যাবে বলে মনে করেছেন।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে পুলিশ প্রশাসন একজন প্রার্থীর পক্ষে দাঁড়িয়ে আছেন। এমন অবস্থায় নিরস্ত্র বিরোধীদের পক্ষে আত্মরক্ষা করাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

যত রকমের অনিয়মের প্রয়োজন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তার সবই ঘটেছে। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিজয়ীরা আরেকটি বিষয় প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি মাত্র ১১ হাজার মানুষের সমর্থন পেয়ে টিকে আছেন।

দু’দিন আগে তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিশেষ করে বরিশাল ও রাজশাহীতে যা ঘটেছে তা অনেকেরই দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ভোট শুরু হওয়ার দু’ঘণ্টার মধ্যেই ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া, ভোট শেষে ব্যাগে করে সিল মারা ব্যালট পেপার নিয়ে আসা এসব দৃশ্য টেলিভিশনে দর্শকরা দেখেছেন।

সংবাদপত্রের প্রতিবেদন বলছে, রাজশাহীতে বিকাল ৪টার পর শাহ মখদুম কলেজ কেন্দ্রের ভোটের বাক্স খুলে জড়ো করা হয়েছিল একটি কক্ষে। ওই কক্ষে ভোটের বাক্সের সঙ্গে একটি কালো ব্যাগ ভর্তি ছিল সিলমারা ব্যালটে। ভোট গণনা শুরুর ঠিক আগে এ দৃশ্য দেখা যায়। ওই কেন্দ্রের দায়িত্বরতরাই জানিয়েছেন কাণ্ডটি ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের।

সহজেই অনুমেয় এ কালো ব্যাগে কোন্ প্রার্থীর পক্ষে সিল মারা ব্যালট পেপার ছিল। রাজশাহীতে অনেক ক্ষেত্রেই ভোটাররা মেয়র পদের ব্যালট পর্যন্ত পাননি। ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার উদাহরণ অনেক দীর্ঘ।

যারা জিতেছেন তারা বলবেন আমরা নির্বাচনে জিতে এসেছি, ভালোমানুষি দেখানোর জন্য নয়। ক’দিন আগে এ পাতাতেই মন্তব্য করেছিলাম: এ মাসে আরও তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের যে ফলাফল হবে তা অনুমেয়।

ফলাফল বাগিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্য হবে দুটি : উচ্চকণ্ঠে জনগণকে বলা যে আওয়ামী লীগ জনপ্রিয় দল, তার জনপ্রিয়তায় কোনো ঘাটতি নেই। দ্বিতীয় লক্ষ্য হচ্ছে, এর ফলে প্রধান বিরোধী পক্ষ উত্তেজিত হয়ে জাতীয় নির্বাচন থেকে দূরে সরে যাবে।

বাংলাদেশে শতভাগ শুদ্ধ নির্বাচন সম্ভব কিনা সে বিষয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেন; কিন্তু নির্বাচনী ময়দানে যদি প্রশাসন ও পুলিশ সরকারদলীয় প্রার্থীর পক্ষে দাঁড়িয়ে যায় তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

এ ধরনের অবস্থান প্রতিহিংসার জন্ম দেয়। রাজনীতিতে প্রতিহিংসা কোনো শুভ লক্ষণ নয়। কিন্তু এ প্রতিহিংসা যারা ঠেকাতে পারে সেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি নিজেরাই ব্যায়োনেট হয়ে ওঠে, তাহলে পরিস্থিতি জটিল হতে বাধ্য।

নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়ে থাকে। তারা নির্বাচনসংক্রান্ত সব কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রক। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন ক্রমান্বয়ে প্রমাণ করছে তারা নির্বাচন পরিচালনার জন্য উপযুক্ত নন।

ক’দিন আগে খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার আলোকে নির্বাচন কমিশন শিক্ষাগ্রহণ করবে বলে বলেছিলেন। শিক্ষা তারা গ্রহণ করেছেন; কিন্তু সেটা সুশিক্ষা হয়নি। চাকরি জীবনে অনুগত থাকতে অভ্যস্ত মানুষেরা সাহসে বুক বেধে অনেক কাজ করতে পারেন না।

দুঃখজনক ব্যাপার যে, নির্বাচন কমিশনের অনেক সাবেক সদস্যই কর্মজীবন শেষে মিডিয়ার কল্যাণে দেশবাসীকে হেদায়েত করতে পছন্দ করেন; কিন্তু নিজের অতীত জীবনের কর্মকাণ্ডের জন্য গ্লানিবোধ করেন না।

সাম্প্রতিক সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে একটি মজার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনের দু’দিন আগে একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে তিন সিটি কর্পোরেশনের

নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে পূর্ভাবাস দেয়া হয়েছিল। বাস্তবে দেখা গেল মাঠ পর্যায়েও একই ঘটনা ঘটেছে। হয়তো সেটা ছিল ঐশী বাণী।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে খুব বেশি বলার প্রয়োজনীয়তা নেই। খুব সামান্যসংখ্যক মানুষ বাদ দিলে দেশের সবাই স্বীকার করবেন নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব পালনে ক্রমান্বয়ে ব্যর্থ হচ্ছে।

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগের দিন একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন এটা নাকি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ড্রেস রিহার্সাল। তিনি ভেবেচিন্তে কিনা জানি না, সঠিক কথাটিই বলেছেন।

নাটকে ড্রেস রিহার্সালের প্রয়োজন হয় নাটক দর্শকপ্রিয় করার ও সম্ভাব্য ভুলভ্রান্তি এড়ানোর জন্য। পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যে ড্রেস রিহার্সাল আমরা দেখছি তাতে একটি চিত্র কল্পনা করা অত্যন্ত সহজ।

নির্বাচন কমিশন হয়তো এই ভেবে স্বস্তিবোধ করছে যে, ব্যালট ছিনতাই, ব্যাগ ভর্তি করে ব্যালট পেপার নিয়ে যাওয়া, প্রার্থীকে লাঞ্ছিত করা কোনো কিছুই জনগণের প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় না।

নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা হয়তো পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করবেন, আবার কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সরেও যেতে বাধ্য হতে পারেন। তাই বলতে ইচ্ছা করে, হায় নির্বাচন, হায় নির্বাচন কমিশন! ঈশ্বর এদের মঙ্গল করুন।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD