রাজনৈতিক অভিনয়ে সেই লিটন মোল্লা Latest Update News of Bangladesh

রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৪ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩
সংবাদ শিরোনাম:




রাজনৈতিক অভিনয়ে সেই লিটন মোল্লা

রাজনৈতিক অভিনয়ে সেই লিটন মোল্লা




  • শাকিব বিপ্লব:নানান ঘটনায় অঘটন পটিয়াসি লিটন মোল্লা নামটি বরিশাল নগরীর পশ্চিম জনপদের বসতিদের কাছে এক আতঙ্ক। সন্ত্রাসের রাজত্ব থেকে রাজনীতির মঞ্চে এসে পাক্কা অভিনেতা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপনে আপতত সফল বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। কৌশলী ভূমিকা রেখে পরিবহন শ্রমিক আন্দোলনে আফতাব হোসেনকে পদচ্যুত করার পর বরিশাল বাস মালিক সমিতির সভাপতি হতে তার জান-পরাণ চেষ্টার আভাস-আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সেখানেও তার অভিনয় নিয়ে নগরীতে আলোচনা চলছে। এবার আফতাবের রেখে যাওয়া চেয়ারে বসতে আন্দোলনের আবহ তৈরিতে শ্রমিক ছদ্মবেশে বহিরাগতদের কাফনের কাপড় পরিয়ে সিটি মেয়রের কাছে দাবী ছুড়ে দিয়ে নিজের আকাঙ্খার কথা সবেমাত্র আনুষ্ঠানিক বসা।

 

গত সপ্তাহজুড়ে শ্রমিক আন্দোলন তীব্র করতে তার নেপথ্যে ভূমিকা এবং উদ্দেশ্য নিয়ে তখনই শ্রমিকাঙ্গনে কথা উঠেছিল লিটন মোল্লার চাওয়া পাওয়া কি? কিন্তু পরিস্থিতি তার অনুকূলে চলে যাওয়ায় আফতাবের মতো নেতা যেখানে ধরাশয়ী, সেখানে সাধারণ শ্রমিকদের প্রতিবাদে এগিয়ে আসার উপায় ছিল না।

 

যার বর্তমান প্রেক্ষাপটে নথুল্লাবাদ পরিবহন শ্রমিকাঙ্গনে হঠাৎ করে লিটন মোল্লা অনেকটাই একক আধিপত্য বিস্তার করে নেতৃত্বের অগ্রভাগে চলে আসতে সক্ষম হয়েছেন। এখন অবশিষ্ট বাস মালিক সমিতির চেয়ারে আনুষ্ঠানিক বসা।

 

গত দুদিন ধরে শ্রমিকাঙ্গনের নানা সূত্রের সাথে আলাপে যে অভিমত মিলেছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে, লিটন মোল্লা একজন টেম্পু শ্রমিক নেতা হয়ে গোটা পরিবহন শ্রমিকদের বাস মালিক সমিতির বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নেয়ার পরিস্থিতি তৈরিতে ভূমিকা রাখা এতটা সহজতর ছিলনা। এর পেছনে কোন রাজনৈতিক শক্তি তাকে সার্বিক সহায়তা দিয়েছে। সবকিছুর মূলেই ছিল বাস মালিক সমিতির নেতা আফতাবকে টার্মিনাল থেকে সরিয়ে দেয়া। এক্ষেত্রে লিটন মোল্লাকে ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র।

 

কারণ লিটন মোল্লার আপন মামাতো ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় শ্রমিকদের একত্রিত করার সহজতর ভেবেই একটি আন্দোলনের পথ-পরিক্রমা সৃষ্টির পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই নেয়া হয়েছিল।

 

এই দুই নেতার বাড়ি একই জায়গায় কাশিপুর সংশ্লিষ্ট এলাকায় বাস টার্মিনাল হওয়ায় সাজানো শ্রমিক আন্দোলনের সাথে অনেককেই কৌশলে ব্যবহার করা হয়।

 

যে কারণেই সামান্য বিষয় নিয়ে বাস মালিক সমিতির সভাপতি আফতাব হোসেনের সাথে একজন বাস চালকের বিবাদে হঠাৎ শ্রমিক আন্দোলন ফুঁসে উঠে।

 

তখনি লক্ষ্যনিয় বিষয় ছিল, শ্রমিক আন্দোলন চলছে বটে কিন্তু গাড়ির চাকা সচল। বহিরগতরাই মিছিল-সমাবেশ করে আফতাবের পদত্যাগের দাবী তড়ান্বিত করতে ভূমিকা রাখার অভিযোগ রয়েছে।

 

এ সময় লিটন মোল্লার বক্তব্য ছিল, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর আদেশেই তিনি আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছেন। বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বিষয়টি ফয়সালা করতে উদ্যোগী হলেও আন্দোলনে মেয়রের সমর্থন রয়েছে এমন কথায় তারাও চুপসে যায়।

 

 

কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর দৃশ্যমান হস্তক্ষেপ চোখে পড়েনি। একটি সূত্রের জোর দাবি, আন্দোলনের প্রথম দিনেই লিটন মোল্লা বরিশাল লঞ্চ ঘাটে প্রভাবশালী এক আ.লীগ নেতার সাথে এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা-পরামর্শ শেষে মাঠ গরমে নিজেকে সামনে নিয়ে আসে।

 

তারই ধারাবাহিকতায় শ্রমিক ইউনিয়নকে চাপের মুখে রখে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়া। এর একদিন পরই ০৮ জানুয়ারি কোণঠাসা হয়ে পড়া আফতাব সমিতি থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হন।

 

সেই সাথে শ্রমিক আন্দোলনের উত্তাপ ৩ জানুয়ারী শুরু ৮ জানুয়ারী সমাপ্তি টানে । জানা গেছে- দীর্ঘকাল নেতৃত্বে থাকা আফতাবের বিরুদ্ধে ঢের জুলুমবাজীর অভিযোগে শ্রমিকদের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও তা ছিল অভিমানের সীমানায়।

 

কিন্তু লিটন মোল্লার সাথে আফতাবের নিরব পূর্ব বিরোধ অনেকটাই ক্রমান্বয়ে বৃহৎ আকার ধারণ করে। অন্যদিকে একটি মহলও চায়নি টার্মিনাল আফতাবের নিয়ন্ত্রণে থাকুক।

 

এই দুই ইস্যু এক মেরুতে চলে আসে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কারণে। সেই সুযোগে লিটন মোল্লার নিজস্ব কোন পরিবহন না থাকলেও তিনি টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা হিসেবে টার্মিনালে অবস্থান নিয়ে প্রভাব বিস্তারের প্রাথমিক অধ্যায় রচনা করে। গত চার বছরকাল টেম্পু শ্রমিক ইনিয়নের এই নেতার বহুমুখি অপকর্মের খবর কে না জানে। পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছেন বার বার।

 

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়- প্রয়াত আ.লীগ নেতা জল কাদের মোল্লার পুত্র হিসেবে লিটন মোল্লার উত্থান ছিল এলাকা ভিত্তিক অপরাধ বিস্তারে। পিতার সুনাম ও প্রভাব ব্যবহার করে আলোচনায় এসে আ.লীগের রাজনীতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করার সুযোগ পান।

 

এমনকি সহজতর পন্থায় কাশিপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে তার ক্ষমতার পরিধিও বাড়তে থাকে।

ব্যাতিক্রম শুধু দা-কুড়ালের রাজনীতি ছেড়ে ঝুকে পরেন নেশার জগতে। তার ঘনিষ্ঠজনেরা জানায়, টে¤পু শ্রমিক ইউনিয়নের নামে গাড়ি প্রতি প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা চাঁদার বৃহৎ অংশ প্রশাসন ও মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর নামে বরাদ্দ দেখিয়ে লিটন মোল্লা ভোগ করেণ।

 

কিন্তু সাদিক আব্দুল্লাহর বাসায় এই অর্থ যে পৌছায় না তা শ্রমিকরা অবহিত সত্বেও নীরব থাকতে হয়।

চাঁদাবাজির এই অবৈধ অর্থ কিভাবে ব্যয় হয়, তা পরোখ করতে গেলে নগরীর নতুন বাজারে একটি ভবনে তার কার্যালয় দিন-রাত ধূমা উড়ার সাথে বিস্কুটের সুগন্ধতে অনুমান করা যায়।

ওই ভবনে কি রঙ্গলীলা চলে তা স্থানীয়দের সাথে কানাকানিতে শোনা যায় কত রমনী আসে যায়।

 

 

দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানে সম্ভবত একমাত্র লিটন মোল্লাই ছিল অবিচল-নিরাপদ। তার ওই কার্যালয় প্রায় দেখা যায় প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্তা ব্যক্তিদের আনাগোনা।

প্রশাসনের এক কর্তা নাম প্রকাশে অস্বীকৃতির শর্ত জানিয়ে বলেন, চল-বলনে এবং গায়-গতরে পছন্দ না হলেও যুব বয়সী কথিত এই নেতাকে কুনিশ করেই চলতে হচ্ছে ক্ষমতার ইশারায়।

 

 

ফলে দিনোত্তর বেপরোয়া এই নেতার দৃষ্টি পরে টার্মিনালের একক কর্তৃত্বের উপর। টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়ন অপেক্ষা বাস মালিক সমিতির ভারত্ব ও আয়ের উৎস লোভনীয় হওয়ায় বেশ কিছু দিন ধরে তিনি নতুন ছকে এগুচ্ছিলেন। অর্থ্যাৎ বাস মালিক সমিতির নেতৃত্বের আসার আগে প্রভাবশালী নেতা আফতাব হটাও পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ খুঁজছিলেন।

 

পাশাপাশি একটি মহলেরও আকাঙ্খা ছিল আফতাবের পতন।

 

একজন প্রত্যাক্ষদর্শীর দাবি, ব্যাটে-বলে এই অভিন্ন চাওয়া-পাওয়া অনেকটা কাকতালীয়ভাবে মিলে যায় ৩ জানুয়ারি। লিটন মোল্লার বাড়ির পাশের বাসিন্দা গাড়িচালক আলমগীর হোসেনকে বেপরোয়া গাড়ি রাখার অভিযোগ আফতাব লাঞ্ছিত করলে ঘটনা মোড় নেয় ভিন্ন দিকে।

 

বিভিন্ন এলাকার পরিচিত মুখদের টার্মিনাল এলাকায় এনে শ্রমিকদের ব্যানারে তাকে অপসারণের আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে লিটন মোল্লার সাথে তার মামাতো ভাই পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন একট্টা হয়ে আন্দোলন রচনায় ভূমিকা রাখেন।

 

লিটন মোল্লা সামনে থাকলেও জাহাঙ্গীর ছিলেন অন্তরালে। জানা গেছে, ব্যাপক ক্ষমতাধর কাশিপুরের বাসিন্দা আফতাবের নিজস্ব লোকবলের মধ্যে উপদলের সৃষ্টি এবং অনুসারীদের মধ্যে চাওয়া পাওয়া নিয়ে বঞ্চনার ক্ষোভে দূরাত্বে একাকী হয়ে পড়ায় সামান্য টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা লিটন মোল্লার কৌশলের কাছে অসহায় আত্মসমার্পন করতে বাধ্য হন।

 

এর পরই লিটন মোল্লা বাস মালিক সমিতির সভাপতির চেয়ারে বসতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেন। একটি সূত্রে দাবি, স্থানীয় আ.লীগ নেতৃত্বের একটি অংশ তাকে এই পদে দেখতে চাইলেও বিতর্ক এড়াতে অন্তত এখনি সিদ্ধান্ত নিতে নারাজ।

 

কিন্তু সময়ক্ষেপন করায় লিটন মোল্লা নিয়েছেন পাল্টা কৌশল। সেই বহিরাগতদের আবার ব্যবহার করে গায়ে কাফনের কাপড় পড়িয়ে সিটি কর্পোরেশরেন মেয়রের কাছে বাস মালিক সমিতির সভাপতি হিসেবে তার প্রতি সমর্থনের চিত্র তুলে ধরতে সাজিয়ে ফেলে আরেকটি নাটক।

 

 

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর কালিবাড়ি সড়কে অর্ধশত যুবকের সাদা কাপড় পরে যেভাবে সুয়ে পরে এই দাবি তোলে তা দেখে অনেকের মধ্যে হাস্য-রহস্যের সৃষ্টি করে। নির্ভযোগ্য একটি সূত্র জানায়, বাহিরে যতখানি গর্জন শোনা যায়, ভিতরে ততখানি বর্ষায় না।

 

অর্থ্যাৎ মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ রাজনীতির একটি বলায় ধরে রাখতে লিটন মোল্লার প্রতি কিছুটা দুর্বল থাকলেও মনে প্রাণে অতটা ভালো জানেন না।

 

লিটন মোল্লা নিজও তা জানেন, নানা অভিযোগে প্রায় তাকে শাসানো হয়। প্রতি উত্তরে অভিনয় রপ্ত করেছেন নেতাকে কিভাবে কাবু করে সহানুভূতি আদায় করা যায়।

 

উত্থানপর্বে কাশিপুরে ঘোরাঘুরি করা এই যুবক এখন শহরমুখী এসে সেই দক্ষতার বুনিয়াদি নিজের বাস গাড়ি না থাকলেও মালিক সমিতির নেতৃত্ব হাতে চান। নথুল্লাবাদে পা ফেললে এমন মন্তব্যই শোনা যায়।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD