মাদক পাচারকারী চক্র রুট পরিবর্তন করে বেছে নিয়েছে নৌ-পথ Latest Update News of Bangladesh

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৫ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




মাদক পাচারকারী চক্র রুট পরিবর্তন করে বেছে নিয়েছে নৌ-পথ

মাদক পাচারকারী চক্র রুট পরিবর্তন করে বেছে নিয়েছে নৌ-পথ




এম. কে. রানা:মাদকের ব্যাপারে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থানে প্রশাসনও। ইতিপূর্বে বন্দুকযুদ্ধে র‌্যাব, কোস্টগার্ড,পুলিশের হাতে মরণ নেশা ইয়াবার একাধিক গডফাদার নিহত হওয়ার পর বেকায়দায় পড়ে যায় গডফাদারসহ খুচরা বিক্রেতারা। স্থলপথে কড়াকড়ি আরোপ করায় মাদক পাচারকারী চক্র রুট পরিবর্তন করে বেছে নিয়েছে নৌ-পথ।আর এক্ষেত্রে সাগর-নদীবেষ্টিত দক্ষিণা লকে নিরাপদ রুট মনে করছে ইয়াবা কারবারীরা।পাচারের প্রধান বাহন দেশি ইঞ্জিনবোট। লাখ লাখ পিস ইয়াবাবাহী এসব ইঞ্জিনবোট বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা উপকূলের ঘাটে ঘাটে খালাস করছে চাহিদামাফিক ইয়াবা। পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি, কোস্টগার্ড, সিআইডি, আবগারিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব সংস্থার সদস্যরা রাত-দিন ইয়াবাবিরোধী অভিযানে থাকেন। প্রায় প্রতিদিনই হাজার হাজার পিস ইয়াবা জব্দ হয়, আটক হয় ইয়াবা পাচারকারী, বিক্রেতাসহ সেবনকারীও। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না, বন্ধ হচ্ছে না ইয়াবার স্রোত। ইয়াবার থাবা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা যেমন বাড়ছে তেমন পাল্লা দিয়ে বদলে যাচ্ছে পাচারকারীদের কলাকৌশল।

প্রশাসনিক এতসব তৎপরতার মুখেও মাদক পাচারকারীদের সরবরাহ ব্যবস্থা সচল থাকছে। কখনো মাথায় নকল চুলের ভাঁজে, পায়ুপথে, মাছের পেটে, মসলার প্যাকেটে, ডাবের মধ্যে ও শুকনা মরিচের ভিতর লুকিয়ে মাদক পাচার হয়। এছাড়া ফলমূল, মাছ ও শুঁটকির প্যাকেট, পান ও বরইয়ের বস্তা, মাছ ধরার ট্রলার, নৌকা, গাড়ির টায়ারে, সিটের নিচে, নারী বাসযাত্রীর জুতার ভিতর এমনকি পাচারকারীদের পেট থেকেও পলিথিন মোড়ানো ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারের বহু ঘটনা ঘটছে। দক্ষিণের সাগর-নদী বেষ্টিত জনপদ এখন ইয়াবা বাণিজ্যে নিরাপদ রুট হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ধরাও পড়ছেন অনেক ইয়াবার ডিলার।

গত মঙ্গলবার (৯এপ্রিল) পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা সমুদ্র বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেল সংলগ্ন গভীর বঙ্গোপসাগর থেকে পাঁচ লাখ পিস ইয়াবাসহ দু’জনকে আটক করেছে কোস্ট গার্ড। বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে দুটি ইঞ্জিন চালিত মাছ ধরা ট্রলারসহ তাদের আটক করা হয়। অভিযুক্তরা হলেন কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের মোশারেফ হোসেন ও টিপু শিকদার। বুধবার সকালে কোস্টগার্ড নিজামপুর স্টেশনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কোস্টগার্ড স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার নাজিউর রহমান জানান, রবিবার টেকনাফ থেকে রওনা হওয়া মোশারেফের মালিকানাধীন এফবি মাসুম নামের ইজ্ঞিন চালিত মাছ ধরা ট্রলারে উদ্বারকৃত ইয়াবা নিয়ে টিপুসহ মহিপুরের উদ্দেশ্যে রওনা করে। পথিমধ্যে ট্রলারের ইজ্ঞিন নষ্ট হলে পাচাকারী চক্রের সদস্য এফবি আলাউদ্দিন ট্রলারের মালিক আল-আমিন, সোহরাব, জহির, বেল্লার এবং নিজাম তাদের উদ্ধারে যায়। সংবাদ পেয়ে কোস্টগার্ড পায়রা বন্দর, নিজামপুর ও ভোলা কন্টিজেন্স যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। মহিপুর থানার ওসি মো. সাইদুল ইসলাম জানান, জব্দকৃত ইয়াবা ও আটককৃতদের কোস্ট গার্ডের সদস্যরা থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এছাড়া গত ১ এপ্রিল বরিশাল নদীবন্দরে ঢাকা থেকে আগত এমভি পারাবত-১১ লে র তৃতীয় তলার ৩৪ নম্বর কেবিনে অভিযান চালিয়ে একটি টিস্যুবক্সের ভিতর লুকিয়ে রাখা ৯ হাজার ৮০০ পিস ইয়াবাসহ বহনকারী নাসির মাতব্বরকে আটক করে পুলিশ। তার কাছ থেকে মুঠোফোন উদ্ধার করা হয় তিনটি। জব্দকৃত ইয়াবার বাজারমূল্য প্রায় ৪৯ লাখ টাকা। ওই সময় ইয়াবার চালান গ্রহণ করতে বরিশাল নদীবন্দরে যাওয়া বরিশালের মাদকসম্রাট ভাটিখানা এলাকার মোঃ আজিম হোসেন হাওলাদার ওরফে ফেন্সি আজিমকে আটক করে পুলিশ।

এদিকে গত জুন মাসে আলীপুর বন্দর থেকে ৩৯৫০ পিস ইয়াবাসহ ফাতেমা আক্তার সানজিদাকে (২৭) পুলিশ গ্রেফতার করার পরে এ তথ্য বেরিয়ে আসছে। ফাতেমার দেয়া তথ্যমতে ইয়াবা পাচারের মূল হোতা চিটাগংএর এক ট্রলার মাঝি আবুল হোসেন। আবুল হোসেন ও ফাতেমার বাড়ি কক্সবাজার হলেও তারা দীর্ঘদিন আলীপুর বন্দরে বসবাস করে আসছে। ফাতেমার স্বামীর নাম সৈয়দ হোসেন। তারা আলীপুরের ব্যবসায়ী পান্না মোল¬ার বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করে আসছে। সৈয়দ হোসেন একটি বোটের জেলে। ফাতেমার মতো এভাবে নারীদের অংশগ্রহণে এতো বেশি ইয়াবার চালান এখানে আর ধরা পড়েনি। তবে একাধিক রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যরাও এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে। এভাবে ট্রলারে মাছ শিকারের পাশাপাশি ইয়াবা-গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকের রমরমা ব্যবসা চলে আসছে। পুলিশও সক্রিয় রয়েছে মাদকের এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে। মূলত ট্রলারে শত শত জেলের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় মুসলিম, হিন্দু, রাখাইন ছাড়াও কক্সবাজার, রামু, টেকনাফ এলাকার লোকজন। রয়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গা। এদেরকে আবার স্থানীয় প্রভাবশালী ট্রলার মালিক কিংবা আড়ত মালিকরা ভোটার করে স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন।

সুত্রে জানা গেছে, ইয়াবা বেচা-কেনার অভিযোগে মেহেদী হাসানকে পুলিশ ১১ মে গভীর রাতে লতাচাপলী ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে। এসময় তার বাবা মূল হোতা হাবিব মুন্সী পালিয়ে যায়। পুলিশ মেহেদীর কাছ থেকে ৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। ১৩ মে সন্ধ্যার পরে সাত পিস ইয়াবাসহ ভাড়াটে হোন্ডাচালক ইউসুফকে (২৫) পুলিশ আলীপুর বন্দও থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ইউসুফের বাড়ি লতাচাপলীতে। তার বাবার নাম কাশেম মাঝি। ২৪ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে কলাপাড়া থানা পুলিশ ইয়াবা বিক্রির অভিযোগে মিজানুর রহমান মাস্টার ও সোহেলকে কলাপাড়া পৌরসভার মুসলিমপাড়ার ফিরোজ তালুকদারের বাসা থেকে গ্রেফতার করে। এসময় ১৩ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত দুইটায় মহিপুর থানার বিপিনপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৩৩১ পিস ইয়াবা জব্দ করে। এসময় বিক্রির অভিযোগে ইসমাইল সিকদারকে গ্রেফতার করা হয়। ২০মে রাতে মোঃ মিষ্টি ও সীমা দম্পতিকে ১৫ গ্রাম গাঁজা এবং পাঁচ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে। কলাপাড়া পৌরসভার মাদ্রাসা সড়ক থেকে এ দম্পতিকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন ধারাবাহিক অভিযানে ইয়াবা ব্যবসায়ীসহ সেবনকারী গ্রেফতার হলেও বন্ধ হয় না ইয়াবা ব্যবসা। বর্তমানে ইয়াবা ব্যবসার দৌরাত্মে দখিনের গ্রামীণ জনপদেও সাধারণ মানুষ শঙ্কিত। দখিনের জনপদ কলাপাড়া সদর মহিপুর-আলীপুর, কুয়াকাটা, বালিয়াতলী, বানাতিপাড়া, ডালবুগঞ্জ, বাবলাতলা, চাপলী, লক্ষ্মীর বাজার, পাটুয়া, দেবপুর, পায়রা পোর্ট এলাকা, রজপাড়া, নাচনাপাড়া, চৈয়াপাড়া চৌরাস্তা, শেখ কামাল সেতুর সংযোগ সড়ক এলাকা, পাখিমারা বাজার, হাজীপুর স্ট্যান্ড, ছোট বালিয়াতলীসহ অসংখ্য স্পটে ইয়াবা-গাঁজাসহ মাদকের রমরমা বাণিজ্য চলছে। অনেক রাজনৈতিক ক্যাডার আবার এসব ব্যবসার গডফাদার বনে আছেন। রাতারাতি বিত্ত-বৈভবের মালিক হতে এ পথ বেছে নিয়েছেন তারা। ধারণা করা হচ্ছে অনেক ইয়াবার গডফাদার এখন নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে দক্ষিণা লে অবস্থান করছেন। নতুন নদীপথের এ রুট বন্ধে ব্যাপক অভিযান চালানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মানুষ। বরিশাল পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, মাদক নির্মূলে র‌্যাব-পুলিশসহ সকল বাহিনী জিরো টলারেন্স নীতিতে চলছে। কোনক্রমেই মাদকের মূল হোতাদের ছাড় দেয়া হবে না বলেন ওই কর্মকর্তা।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD