বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটে বিলাসবহুল লঞ্চ ! Latest Update News of Bangladesh

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটে বিলাসবহুল লঞ্চ !

বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটে বিলাসবহুল লঞ্চ !




এম.কে. রানা ।।বাংলাদেশের নৌপথে কয়েক বছর ধরেই শুরু হয়েছে বিলাসবহুল লঞ্চের প্রতিযোগিতা। আর এর প্রভাব পড়ছে দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চ মালিকদের মধ্যেও।ফলে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এবং ডিজিটাল সুযোগ সুবিধাসহ নিত্যনতুন বিলাসবহুল প্রাসাদসম লঞ্চ নামছে পানিতে। প্রতিবার যেসব বাণিজ্যক অর্থাৎ যাত্রীবাহী নৌযান জলে ভাসছে, তার প্রতিটিতে ২৫-৩০টি এসি ক্যাবিন এবং বিলাসবহুল ভোজনালয় রয়েছে।

ফলে এসব লঞ্চে ভ্রমন করলে মনে হবে কোন রাজপুরীতে প্রবেশ করেছেন। বরিশাল বিআইডবি¬উটিএ সূত্রে জানা যায়, বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটে সরাসরি চলাচলরত সুন্দরবন-১০, ১১, সুরভী- ৭, ৮, ৯, কীর্তনখোলা-২, পারাবাত-১২; অ্যাডভেঞ্চার-১, গ্রিনলাইন- ২ ও ৩ ও মানামী সহ মোট ১১টি লঞ্চে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। সম্প্রতি মানামী ও কুয়াকাটা-২সহ নতুন ও আধুনিকায়ন করা এসব লঞ্চগুলোতে জিপিএস, ইকো সাউন্ডার, ফগ লাইট, হাইড্রোলিক ও ইলেক্ট্রনিক হুইল, আধুনিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করে থাকে।

আবার এরমধ্যে সুন্দরবন কোম্পানির ২টি লঞ্চে সিসিইউ এবং লিফলেটের ব্যবস্থাও রয়েছে। আর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পুরনো লঞ্চগুলোকেও আধুনিকায়নের চেষ্টা করছে মালিকরা। কেউ আবার পুরনো নাম বাদ দিয়ে নতুন নামেও ফিরে আসছে। নামে বিলাসবহুল লঞ্চ হলেও সিসি ক্যামেরার আওতায় আসেনি সব লঞ্চ।

পারাবত- ২, ৯, ১০; দ্বীপরাজ; সুরভী কোম্পানির একটিসহ প্রায় ডজনখানেক লঞ্চে নেই কোনো সিসি ক্যামেরা। পাশাপাশি অনেক লঞ্চেই নেই আনসার কিংবা নিজস্ব সিকিউরিটি সার্ভিসের ব্যবস্থা। তাই বিলাসবহুল লঞ্চে যাত্রীরা অনেকটাই অনিরাপদ যাতায়াত করছেন। অপরদিকে বিলাসবহুল ও আধুনিকায়নের তকমা লাগানো দ্বীপরাজ, পারাবত- ২, ৯, ১০; কীর্তনখোলা-১; সুন্দরবন-৮; টিপু-৭ সহ ১৩টি লঞ্চে রাডার ছাড়া নেই তেমন কোনো আধুনিক সরঞ্জাম।

বিলাসবহুল নামে যে লঞ্চগুলো জলে ভাসছে তা যেন রীতিমত পাঁচতারা হোটেল। তাতে রয়েছে বিনোদন স্পেস, বড় পর্দার টিভি, দেশ-বিদেশের চ্যানেল দেখতে ডিশ, অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম, ইন্টারকম যোগাযোগের ব্যবস্থা, রেস্টুরেন্ট, উন্মুক্ত ওয়াইফাই সুবিধাসহ আধুনিক সব ব্যবস্থা। ঈদ উপলক্ষে বিলাসবহুল যে লঞ্চগুলো প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছে তার প্রায় প্রতিটি লঞ্চেরই সিঁড়ির ধাপগুলোর ভেতরের দিকে যুক্ত করা হয়েছে এলইডি টিভি।

আলোকসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে নজরকাড়া আধুনিক ঝাড়বাতিসহ বিভিন্ন ধরনের এলইডি লাইট। লঞ্চের সৌন্দর্য দেখে যে কেউ বিস্মিত হবেন। কারণ দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যের সঙ্গে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সব কিছুই রয়েছে লঞ্চগুলোতে। চোখ ধাঁধানো কাঠের কারুকাজ, নান্দনিক ডিজাইন ও আধুনিক সাজসজ্জা দেখলে মাথা ঘুরে যাবে। মনে হয় ভেতরে জলে ভেসে চলা রাজকীয় এক প্রাসাদ। তবে বিলাসবহুল এ লঞ্চগুলোতে যাতায়াতকারী একাধিক যাত্রীর সাথে আলাপকালে তারা জানান, আধুনিক সরঞ্জাম সব লঞ্চে থাকলে নৌ-যাত্রা সর্বদা নিরাপদ থাকতো।

যেমন নদীতে পানি মাপার জন্য ইকো সাউন্ডার দরকার। পুরাতন নৌ-যানগুলো রঙচটা ভাব নিয়ে বিলাসবহুল বললেও আধুনিকতার ছোয়া নেই ভেতরে। ফলে মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন যাত্রীরা। ঢাকা-বরিশাল রুটের একাধিক যাত্রী জানিয়েছেন, সুরভী-৭, ৯; সুন্দরবন-১০,১১,১২; পারাবত-১২; কীর্তনখোলা-২ ও অ্যাডভেঞ্চার-১ ছাড়া তেমন কোনো লঞ্চে বিলাসবহুলের ছোঁয়া নেই। প্রায় সব লঞ্চেই ডেকের যাত্রী প্রথম শ্রেণীর কেবিনের সামনেই চাদর পেতে যাতায়াত করছেন। আবার অনেক লঞ্চের কেবিনে ছাড়পোকার জ্বালাও রয়েছে, রয়েছে কেবিনের বেডে দুর্গন্ধ।

অনেক লঞ্চের কেবিনে টেলিভিশন, ফ্যান নষ্ট বা না থাকলেও ভাড়ায় কোনো কমতি হচ্ছে না। তাই নতুন লঞ্চগুলোতেই যাত্রীদের চাপ বেশি থাকে। ফলে কখনো কখনো বিলাসবহুল লঞ্চে প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়েও যাত্রীসেবা দেয়া হয়। এছাড়া ঈদ মৌসুম এলেই এক প্রকার অলিখিত প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। ডাবল ট্রিপের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে প্রায় প্রতিটি লঞ্চই।

ফলে দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রায়শ:ই। বিভিন্ন নৌপথে এবার ঈদ উপলক্ষে নৌযানগুলোর বিশেষ সেবা শুরু হওয়ার আগেই নয় দিনের ব্যবধানে অন্তত তিনটি লঞ্চ দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় এই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে গত শুক্রবার সাত ঘণ্টার ব্যবধানে এই নৌপথে দুটি লঞ্চ দুর্ঘটনার কবলে পড়লে এর কয়েক হাজার যাত্রী অল্পের জন্য রক্ষা পায়। ফলে নামে বিলাসবহুল ও আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন হলেও সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন যাত্রী সাধারণ।

২১ মে রাত পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে ভোলার উদ্দেশে ছেড়ে আসা গেøারি অব শ্রীনগর-২ নামের একটি দোতলা লঞ্চের সঙ্গে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া এলাকায় বালুবাহী একটি বাল্কহেডের ধাক্কা লাগে।

এতে লঞ্চের তলা ফেটে যায়। অল্পের জন্য রক্ষা পায় লঞ্চটির প্রায় এক হাজার যাত্রী। গত শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে বরিশাল থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী এমভি মানামী-১ লঞ্চের সঙ্গে ওই একই জায়গায় ধাক্কা লাগে বালুবাহী আরেকটি বাল্কহেডের। এতে লঞ্চটির পাশের রেলিং ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এক যাত্রী গুরুতর আহত হয়।

গত শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া এমভি যুবরাজ ৭ নামের অপর একটি লঞ্চ বরিশালের হিজলা উপজেলার মিয়ারচর চ্যানেল অতিক্রমের সময় অপর একটি বাল্কহেড এসে ধাক্কা দিলে লঞ্চটির তলা ফেটে যায়। এতে লঞ্চের প্রায় ৪০০ যাত্রী অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পায়। পরে অপর একটি লঞ্চ সেখানে গিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার করে ঢাকায় নিয়ে যায়। অপরদিকে আধুনিকায়নের নামে দ্রæত গতি সম্পন্ন যে লঞ্চগুলো দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করছে তাতে করে বাড়ছে নদী ভাঙনের পরিমান।

বিশেষ করে এ্যাডভেঞ্জার, গ্রিনলাইন, মানামী, কুয়াকাটা-২ যে গতিতে চলে তাতে নদী ভাঙন বাড়বে বৈকি কমবে না। কেননা দক্ষিণাঞ্চলের নির্দিষ্ট কিছু স্থান দিয়ে দ্রæতগতির এ লঞ্চগুলোকে ধীরে চলার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলেও তারা তা মানছেন না। নৌ, রেল ও সড়কপথে যাত্রীদের অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি তুষার রেহমান বলেন, নৌপথে নিরাপত্তার বিষয়টি এখন মারাত্মক উদ্বেগের। এ জন্য ঈদের আগেই পর্যাপ্ত বয়া, বিকনবাতি ও মার্কার স্থাপন করার পাশাপাশি নৌ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড ও বিআইডবিøউটিএর সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করা প্রয়োজন। লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ঢাকা-বরিশাল পথে সরাসরি ও ভায়াপথে ৩২টি লঞ্চে যাত্রী পরিবহন করা হবে।

এ ছাড়া বরগুনা, পটুয়াখালী, আমতলী, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুরসহ অন্য পথগুলোয় নিয়মিত লঞ্চ ছাড়াও বিশেষ সেবা দিতে অতিরিক্ত অন্তত ২০টি লঞ্চ চলাচল করবে। একই সঙ্গে ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-বরিশাল হয়ে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পথে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডবিøউটিসি) নিয়মিত তিনটি স্টিমার ও দুটি জাহাজ বিশেষ সেবায় যাত্রী পরিবহন করবে। লঞ্চ মালিক সমিতি কেন্দ্রিয় কমিটির সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, ১ জুন থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চে ডাবল ট্রিপ (বিশেষ সার্ভিস) শুরু হচ্ছে। ওইদিন ঢাকার সদর ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলো মধ্যরাতে বরিশাল নদী বন্দরে যাত্রী নামিয়ে ফের ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।

পরদিন নিয়মিত সার্ভিসের পাশাপাশি বিশেষ সার্ভিসের ওই লঞ্চগুলো সদরঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে। ঈদের আগে ৪ জুন পর্যন্ত ঢাকা প্রান্ত থেকে বিশেষ সার্ভিস চলবে বলে জানিয়েছেন সাইদুর রহমান রিন্টু। বিআইডবিøউটিএ বরিশাল কার্যালয়ে নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপপরিচালক আজমল হুদা বলেন, বয়া, বিকনবাতি ও মার্কার না থাকা এলাকাগুলোর ব্যাপারে লঞ্চচালকদের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে।

বিশেষ সার্ভিস শুরুর আগেই পর্যাপ্ত বয়া, বিকনবাতি ও মার্কার দেওয়া হবে। যেসব স্থানে ডুবোচর আছে, সেসব স্থানে সাবধানতার সঙ্গে অতিক্রম করার জন্য লঞ্চচালকদের সতর্ক করা হবে। এ ছাড়া ঈদ সার্ভিস শুরু হওয়ার আগেই রাতের বেলা বাল্কহেডসহ পণ্যবাহী নৌযান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD