সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ০২:২২ অপরাহ্ন
বাকেরগঞ্জ প্রতিনিধি॥ গত ৫ বছরে বাকেরগঞ্জ উপজেলার কারখানা নদী গ্রাস করেছে প্রায় দেড় হাজার বসতবাড়ি, অনন্ত ১৫শ’ একর ফসলি জমি। ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে স্থানীয় একটি বাজার। এ ছাড়াও ১টি সড়ক ও ২টি বিদ্যালয় রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। বর্ষার শুরুতে ফের আগ্রাসী হয়ে উঠছে কারখানা নদী।
স্থানীয়রা বলছে, যে কোনো সময় নদীর মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে বিদ্যালয় ২টি। হুমকির মুখে আছে নতুন করে গড়ে উঠা কবাই বাজার, যে কোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা এলাকাবাসীর। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে নদী তীরবর্তী কয়েক হাজার পরিবারের।
বসতবাড়ি হারিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে রাস্তার ওপর দিন কাটছে শতাধিক পরিবারের। বর্ষার শুরুতেই আবারও ভয়াবহ হয়ে উঠছে কারখানা নদী। ভাঙনের তীব্রতা এত বেশি এখনই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে কবাই, হানুয়া, লক্ষ্মীপাশা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা স্থানীয়দের। সরেজমিন দেখা গেছে, হানুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও হানুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যে কোনো মুহূর্তে বিলীন হয়ে যেতে পারে নদীগর্ভে।
স্থানীয় লোকজন জানান, গত বর্ষার মধ্যের দিকে ওই বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হয়। এতে কোনোরকম টিকে আছে বিদ্যালয় ২টি। তার পরও নদীর তীব্র স্রোতে আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। গত বর্ষায় ওই দুটি গ্রামের দেড় শতাধিক বসতবাড়ি ও ১০০ একর ফসলি জমি নদীতে গেছে। এতে ওই এলাকার অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো বাজারে, নদীর পাড়ে, রাস্তার পাশে বা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এ দিকে কবাই বাজারে রয়েছে অন্তত দেড়শ’ দোকানপাট। যা নতুন করে আবারও ভাঙনের কবলে।
স্থানীয় লোকজনের তথ্যমতে, আতিকুল হাওলাদার, আজাহার হাওলদার, শাহিন হাওলাদার, ইছাব মাল বেগম, আবু সরদার, নূর ইসলাম সরদারসহ দুই গ্রামের শতাধিক পরিবার গত এক বর্ষায় তাদের বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
গত বর্ষায় নদী ভাঙনের শিকার কবাই বাজারে ব্যবসায়ী ইছাহক জানান, তিনবার নদীতে বিলীন হয়েছে বসতবাড়ি। প্রায় ৩৫ একর ফসলি জমি ছিল তাদের, সবই এখন নদীতে। সর্বশেষ ২ একর ৫৬ শতাংশ জমিতে ছিল বসতবাড়ি। ওই বসতবাড়ির ফলফলারি বিক্রি করেই সংসার চলে যেত। তা নদীতে ভেঙে এখন ১৫ শতাংশ আছে। ওই জমিতে এক কোণে ঝুপড়ি ঘর তুলে তার পরিবার বসবাস করছে। যে কোনো মুহূর্তে তা নদীতে যেতে পারে। শাহিন হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের ৭৫ শতাংশের ওপর বসতবাড়ি ছিল। তা নদীতে ভেঙে এখন আমরা পথের ফকির।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. জহিরুল তালুকদার জানান, ‘ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। ভাঙনরোধে বড় ধরনের বরাদ্দ দরকার।
বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে বাকেরগঞ্জের নদী ভাঙনে কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে যারা নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের তালিকা করে সাহায্য দেয়া হবে।
Leave a Reply