মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০৮ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে এক যুগ পর পরিবারে ফিরলেন জগুনা বিবি (৭০)। তিনি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জাজিরা ইউনিয়নের ডেঙ্গর বেপারীকান্দির লাল মিয়া বেপারীর স্ত্রী। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাতে কলকাতা থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে নিজ বাড়িতে ফেরেন তিনি।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন যগুনা বিবি কাউকে কিছু না বলে মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন।
পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসতেন। সর্বশেষ ২০১১ সালে তিনি নিখোঁজ হন। স্বজনরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাননি। এরপর কেটে যায় এক যুগেরও বেশি।
গত রমজান মাসে জাজিরা উপজেলার মাসুদ রানা নামের এক যুবকের ফেসবুক আইডিতে কমেন্ট করেন কলকাতার মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী আজিজুল শেখ। তাঁর কাছে আট বছর ধরে জাজিরার একজন বৃদ্ধা আছেন বলে জানান তিনি। এরপর মাসুদ রানা ‘প্রাণের জাজিরা’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে জগুনা বিবিকে নিয়ে পোস্ট দেন। সেখান থেকেই খোঁজ মেলে জগুনা বিবির পরিবারের।
এরপর তারা কলকাতার আজিজুল শেখের সাথে যোগাযোগ করে ৩০ এপ্রিল তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে।
জগুনা বিবিকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া যুবক মাসুদ রানা বলেন, ‘আমার ফেসবুকের একটি পোস্টে আজিজুল শেখ নামের একজন কমেন্ট করেন। তারপর তার সাথে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়। তিনি কলকাতার বাসিন্দা। জানতে পারি তার কাছে জগুনা বিবি নামের একজন বৃদ্ধা আছেন।এরপর তার সাথে কথা বলে সব তথ্য নিয়ে প্রাণের জাজিরা নামক ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিই। সেখান থেকেই জগুনা বিবির পরিবার আমার সাথে যোগাযোগ করে। এরপর তাদের সাথে কলকাতার আজিজুল শেখের সাথে কথা বলিয়ে দিই।
জগুনা বিবির ছেলে জয়নাল বেপারী গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমার মা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। মা নিখোঁজ হওয়ার পর অনেক জায়গায় খুঁজেছি; কিন্তু কোথাও তার খোঁজ পাইনি। পরে মাসুদ রানা ভাইয়ের দ্বারা কলকাতার ওই ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে তার কাছে আমার মায়ের ভোটার আইডি কার্ড, জন্ম নিবন্ধন, জিডির কপি ও চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট দিই। পরে আল্লাহর রহমতে কলকাতার ওই ভাইয়ের অসিলায় মাকে পেয়ে পরিবারের সবাই খুশি।’
এ বিষয়ে জানতে কথা হয় জগুন বিবির আশ্রয়দাতা কলকাতার আজিজুল শেখের সাথে। তিনি বলেন, ‘আট বছর আগে আমার দোকানের সামনে জগুনা বিবিকে ভারসাম্যহীন ও অসুস্থ অবস্থায় পেয়ে বাড়িতে নিয়ে যাই। তিনি দেখতে পুরো আমার দাদির মতো। আমার দাদি নেই। তাই তাকে বাড়িতে নিয়ে আসি। আমার বাড়ির সবাই এই বুড়িমাকে পেয়ে আনন্দিত হয় এবং তাকে সেবাযত্ন করে। চার মাস আগে বুড়িমা বড় ধরনের স্ট্রোক করেন। ভাবিনি তিনি বেঁচে ফিরবেন। তবে আল্লাহর বিশেষ রহমতে তিনি সুস্থ হন।
তিনি সুস্থ হওয়ার পর আমাদের কাউকেই আর চিনতে পারছিলেন না। তিনি তার ছেলেমেয়ে ও আগের বাসস্থানের কথা বলতে থাকেন এবং সেখানে যাওয়ার জন্য উতলা হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় আমি তার বলা ঠিকানাসহ তথ্য দিয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মাসুদ রানা নামের এক তরুণের সাথে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানাই। তিনি এই বুড়িমার পরিবারের সাথে আমাকে যোগাযোগ করিয়ে দেন। পরে আমরা তার সকল তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে আবেদন করলে অনুমতি পাওয়ার পর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে তার পরিবারের কাছে পাঠাতে সক্ষম হই। বুড়িমাকে ছাড়া আমাদের খুবই খারাপ লাগছে; কিন্তু আমাদের মনে একটা শান্তি হচ্ছে যে তার পরিবারের কাছে তাকে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। আমরা অবশ্যই বাংলাদেশে এই বুড়িমাকে দেখতে যাব।’
জগুনা বিবি পাসপোর্টবিহীন ভারত থেকে কিভাবে বাংলাদেশে আসার সুযোগ পেলেন জানতে চাইলে বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘যদি কারো পাসপোর্ট হারিয়ে যায় কিংবা কোনো কারণে কেউ পাসপোর্টবিহীন অন্য দেশে প্রবেশ করে কিন্তু কোনো অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত না হয়―এমন ব্যক্তিদের দুই দেশের সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে আউটপাস বা ট্রাভেলপাসের মাধ্যমে নিজ দেশে ফিরিয়ে আনা বা নেওয়া যায়।’
এ ব্যাপারে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, ‘এতটা সময় ধরে নিখোঁজ হওয়া জগুনা বিবিকে তার পরিবার ফিরে পেয়েছে, এটি অত্যন্ত খুশির সংবাদ। তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। এখন যদি জগুনা বিবি অসুস্থ থাকেন প্রয়োজনে আমরা তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।’
Leave a Reply