ঈদে ঝুঁকি নিয়েই ঘরে ফিরবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ! Latest Update News of Bangladesh

বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১২:৪৯ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




ঈদে ঝুঁকি নিয়েই ঘরে ফিরবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ !

ঈদে ঝুঁকি নিয়েই ঘরে ফিরবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ !




নিজস্ব প্রতিবেদক ॥  বরিশাল অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ রাজধানী থেকে বাড়িতে অথবা ঢাকামুখী যাতায়াতের ক্ষেত্রে নৌ-পথই প্রথম পছন্দ হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু কালবৈশাখী’র মৌসুমে এই যাত্রা কখনোই সহজবোধ্য হয় না। মৌসুমের এই সময়টাতে ঝুঁকি বাড়ে নৌ-পথের যাত্রীদের। ঝড়ের মৌসুম এলেই নদী বেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলে নৌ-দুর্ঘটনায় যাত্রীদের প্রাণহানি ঘটে। সূত্র বলছে, আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরকে কেন্দ্র করে প্রায় ৪২ লাখ মানুষের আগমন ঘটবে দক্ষিণাঞ্চলে।

যাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নদী পথ। তাই নিরাপদ ঈদ যাত্রার লক্ষ্যে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে ড্রেজিং ও বয়া-বিকন সহ সকল সমস্যা সমাধান হয়েছে এরই মধ্যে। ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ২৫০ যাত্রীবাহী লঞ্চ। তবে সংশি¬ষ্টরা বলছেন, ঝড় মৌসুম ও অবৈধ মালবাহী জাহাজের কারণে ঈদে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে নৌ-পথ। পাশাপাশি সদরঘাটে লঞ্চের তুলনায় পন্টুন অনেক কম থাকায় যাত্রী ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে।

লঞ্চ সংশি¬ষ্টরা বলছেন, ভরা ঝড় মৌসুমে ঈদ হওয়ায় কুলকিনারাহীন নদীতে বয়া বাতি না বসালে ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে নদীপথ। তবে বিআইডবি¬উটিএ বলছে, ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে চার ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। তার পরেও নিরাপদ ঈদ যাত্রায় সর্বমহলের মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাড়িয়েছে কার্গো ও বাল্কহেড। ঈদে ব্যস্ততম নদী পথে দুর্ঘটনার অন্যতম কারন হয়ে দাড়াতে পারে এই নৌ-যানগুলো।

বরিশাল সদর নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল¬াহ আল মামুন জানান, যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত ফোর্স প্রদানের জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন করা হয়েছে। যদিও এখনো ফোর্স পাইনি; তবে নিয়মিত নিরাপত্তার অংশ হিসেবে আমরা কাজ করছি।

এই কর্মকর্তা জানান, নৌ-পথে মাদক যেন বরিশালে ঢুকতে না পারে, ছিনতাইকারী চক্র বা মলম বাহিনী যেন সক্রিয় হয়ে না উঠতে পারে সেজন্য এখন থেকেই নৌ-পুলিশের অভিযান চলছে। বরিশাল নৌ বন্দর সূত্রে জানাগেছে, আগামী ৩০ মে ঢাকা থেকে শুরু হবে ঈদের বিশেষ সার্ভিস। ওইদিন রাতে সদর ঘাট থেকে নাড়ীর টানে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে লঞ্চগুলো।

বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের এমভি সুন্দরবন-৮ এর প্রথম শ্রেণির মাস্টার মজিবর রহমান বলেন, পূর্বের তুলনায় বরিশাল-ঢাকা নৌ পথ এবার অনেক নিরাপদ। নেই ডুব চরের ভয়। কোন কোন জায়গাতে যাও রয়েছে তাতে তেমন কোন ক্ষতি হবে না। কেননা এখন বেশিরভাগ লঞ্চেই ইকো সাউন্ডার রয়েছে। তাই চরে আটকে যাবার ভয় নেই। তাছাড়া কিছু পয়েন্টে মার্কিং বাতি ও বয়া-বিকনের যে সমস্যা ছিলো তাও সমাধান হয়েছে।

তিনি বলেন, এবারের ঈদ যাত্রায় প্রধান বাঁধা মেঘনা নদীর মিয়ার চর চ্যানেল, কার্গো এবং বাল্কহেড। বিশেষ করে কার্গো ও বাল্কহেড ঈদ যাত্রায় দুর্ঘটনার বড় কারন হতে পারে। এরই মধ্যে বাল্কহেড এর কারনে মেঘনার মিয়ার চর চ্যানেল লঞ্চ চলাচলে ঝুকিপূর্ণ হয়ে গেছে। গত ২৫ মে মেঘনার মিয়ারচর পয়েন্টে বাল্কহেড ডুবে ওই চ্যানেলকে ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলেছে। ওই চ্যানেলে এখন লঞ্চ চলাচল করতে পারছে না।

এমভি সুরভী-১১ এর প্রথম শ্রেণির মাস্টার আলম জানান, মিয়ার চর চ্যানেলের বিকল্প মেঘনা নদীর উলানিয়া-কালিগঞ্জ হয়ে নৌ পথ রয়েছে। কিন্তু ওই রুট এতোটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে কোন লঞ্চ বা জাহাজ চলাচল করতে সাহস পায়না। কালিগঞ্জ নদীতে এতোটাই উত্তাল যে বড় জাহাজও ডুবে যাওয়ার ভয় রয়েছে। তার মধ্যে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ডুব চর রয়েছে। তিনি বলেন, কালিগঞ্জ হয়ে লঞ্চ চলাচল করলে দীর্ঘ পথ ঘুরে যাওয়ায় ৪ ঘন্টা সময় বেশি লাগে।

পুড়তে হয় অতিরিক্ত চার ব্যারেল (৮০০ লিটার) জ্বালানী তেল। তার পরেও বাল্কহেড ডুবির কারনে বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমতি সাপেক্ষে আপাতত কালিগঞ্জ হয়েই ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চ চলাচল করছে। কিন্তু ঈদের আগে পরে এই রুটে চলাচল সম্ভব হবে না। কারন বর্ষাকাল হওয়ায় যে কোন সময় ঝড় বা বৃষ্টিতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ডুবে যাওয়া বাল্কহেডটি উদ্ধার করা জরুরী। অপরদিকে মিজান শিপিং কোম্পানির এমভি মানামী লঞ্চের মাস্টার জানিয়েছেন, বর্তমানে বরিশাল-ঢাকা নৌ পথে ডুব চরের কোন ঝুঁকি নাই। নিরাপদ নৌ-যান চলাচলে একমাত্র ঝুকির কারন এখন বাল্কহেড।

এনালক পদ্ধতির এসব নৌ-যান যারা পরিচালনা করেন তারাও অদক্ষ। যে কারনে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। বিশেষ করে চাঁদপুরের পর থেকে বাল্কহেড কার্গোর চলাচল এতোটাই বেশি থাকে যে লঞ্চ চলাচল কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছে। তিনি বলেন, গত ২৫ মে রাতে মেঘনার শেষ প্রান্তে বিশাল আকৃতির একটি বাল্কহেড এমভি মানামীর মাঝ বরাবর আছড়ে পড়ে। এতে তৃতীয় তলায় কেবিন ব্লকের অংশ বিশেষ ভেঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে যায়।

তবে অল্পতে কেবিনে থাকা যাত্রীরা রক্ষা পায়। বর্তমানে মানামী ক্ষতিগ্রস্থ স্থান সংস্কারের জন্য ডক ইয়ার্ডে রয়েছে। তাই ঈদে নৌ-পথ ঝুঁকিমুক্ত রাখতে হলে কার্গো ও বাল্কহেড চলাচল বন্ধ রাখা জরুরী বলে মনে করছেন লঞ্চ মাস্টাররা। লঞ্চ সংশি¬ষ্টরা বলছেন এই বিপুল সংখ্যক মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে শুধু আশ্বাস নয়, প্রয়োজন ঝড় মৌসুম ও ঝুঁকিপূর্ণ মালবাহী নৌযানের কথা বিবেচনায় রেখে সবগুলো সংস্থার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।

বিআইডব্লিউটিএ’র পরিদর্শক মৌজে আলী সিকদার বলেন, বরিশাল থেকে লাল খারাবাদ পর্যন্ত বরিশাল আঞ্চলিক নদী পথের দুরত্ব ৩৮ কিলোমিটার। নদী পথ চিহ্নিত করণ ও দুর্ঘটনা মুক্ত রাখতে ৩৮ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৫০টি মার্কা, ১০টি বিকন বাতি, ৮টি বয়া বাতি ও ২টি স্প্যারিক্যাল বয়া রয়েছে। যার সবগুলোই এখন সচল অবস্থায় রয়েছে। চরবাড়িয়ায় ২টি বিকন বাতি, চরমোনাইতে ১টি, পোটকার চরে ১টি, রাজাপুরে ১টি, গাজীর চরে ২টি, চর শিবলি ১টি, বামনির পরে ১টি ও কাউরিয়ায় ১টি বিকন বাতি ছিলো না। সম্প্রতি পরিদর্শন করে ওগুলো লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।

মৌজে আলী বলেন, এগুলো লাগানোর কিছু দিন পর পরই চুরি হয়ে যায়। যা নিয়ে গত এক বছরে ২০ থেকে ২৫টি’র মত জিডিও করা হয়েছে। তিন বছর পূর্বে পটুয়াখালীতে চুরির সময় আটক করা এক চোরের ৩ বছরের কারাদন্ডও হয়েছে। বর্তমান সময়ে মেহেন্দিগঞ্জের জয়নগর ও জাংগালিয়া ইউনিয়নে চুরির ঘটনা বেশি ঘটছে। যা প্রতিরোধে ইতিপূর্তে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের সহযোগিতাও চাওয়া হলেও আমরা কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না।

সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটের মধ্যে মিয়ার চর লঞ্চ চলাচল সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই ঝুঁকিমুক্ত রাখতে এখানে নিয়মিত ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে। যে কারনে ডুব চরের কোন ভয় নেই। তাছাড়া মিয়ার চর চ্যানেলে ডুবে থাকা বাল্কহেডটি টাগবোর্ড দিয়ে সোজা করে দেয়া হয়েছে। এটি আড়াআড়ি ভাবে ডুবে যাওয়ায় লঞ্চ চলাচলে সাময়িক বিলম্ব হয়েছিলো।

তাছাড়া নিরাপদ লঞ্চ চলাচলের জন্য ওই স্থানে লাল পতাকা ও বয়া দিয়ে দিয়েছি। মাস্টার ও চালকরা একটু সতর্কতার সঙ্গে চলল্যে দুর্ঘটনার কোন সুযোগ নেই। বরিশাল নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, যাত্রীদের নিরাপদ ঈদ যাত্রার শার্থে যা করনিয় আমরা তাই করবো।

নদী পথ ঝুঁকিপূর্ণ রাখতে যাতে বাল্কহেড চলাচল করতে না পারে সে বিষয়টিতে নজর দিচ্ছি। যাত্রীদের নিরাপত্তায় নদী বন্দরেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি মেরিন একাডেমি ও স্কাউট সদস্যরা কাজ করবে।

বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, যে কোন মূল্যে নদী পথকে নিরাপদ রাখতে নৌ বন্দর, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঈদ যাত্রা নিরাপদ রাখতে ঈদে আগে- পরে ১৪ দিন বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নির্দেশ উপেক্ষিত হলে বাল্কহেড জব্দ ও সংশ্লিষ্টদের সাজা দেয়ার জন্য নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটদের নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। তাই আমরা আশা করছি এবারের ঈদ যাত্রা নির্বিঘœ ও নিরাপদ থাকবে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD