শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২২ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি:বরগুনার তালতলী উপজেলার শারিকখালী ইউনিয়নের বাদুরগাছা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন দখল করে সভাপতি তার ধানের গুদাম বানিয়ে সেখানে ধান ও চাল মাড়াই করছেন।ধান ও চাল মাড়াই মেশিনের শব্দে প্রায় এক মাস ধরে ক্লাশ বন্ধসহ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মারাত্মক বিঘœ ঘটছে।বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে,১৯৭৩ সনে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়।প্রতিষ্ঠার পর ২০১৭ সালে বিদ্যালয়টির ৩ তলা নতুন ভবন তৈরী করা হয়।নতুন ভবন হওয়া পর বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য মো:ইছাহাক হাওলাদার জোরপূর্বক বিদ্যালয় ভবনের নীচ তলার পুরো অংশ দখল করে সেখানে তার খেতের আউশ ধান রাখার গুদাম ঘড় বানিয়েছেন।
বিদ্যালয় ভবন দখল করে শুধু গুমাদ ঘড় বানিয়েই ক্ষান্ত হননি সভাপতি ইছাহাক হাওলাদার।এখানেই আবার ২টি মেশিন বসিয়ে ধান এবং চাল মড়াই করছেন। নিজের ধান এবং চাল মাড়াইসহ বানিজ্যিক ভাবে এ কাজটি করছেন তিনি।নিজের ২টি মেশিনের মাধ্যমে এলাকার বোরো এবং আউশ মৌসুমের ধান ও চাল মাড়াইর ব্যবসা করছেন বিদ্যালয় ভবন দখল করে।বিদ্যালয়ের ক্লাশের সময় ২টি মেশিনের প্রচন্ড শব্দের কারনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ক্লাশ করতে পারেন না।তখন নিরুপায় হয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাশ ছেড়ে বাড়ি চলে যান।শিক্ষকরা তখন অসহায়ের মত দাড়িয়ে থাকেন।সভাপতির এরকম আচারনের কারনে আউশ মৌসুমের ধান ও চাল মাড়াইর শব্দের কারনে ক্লাশ চলে নামে মাত্র।শব্দের কারনে অনেক সময় শিক্ষার্থীরা ক্লাশে না থাকায় শিক্ষকরা ক্লাশ বন্ধ রাখতে বাধ্য হন।বিদ্যালয়ের এরকম অবস্থা চলছে প্রায় ১ মাস ধরে।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া আকতার বলেন,স্কুলের সময় মেশিন চালায়।এসময় প্রচন্ড শব্দে আমরা ক্লাশে স্যারেগো কোন পড়া বুঝতে পারি না।এতে আমাগো লেখাপড়ায় অনেক সমস্যা হয়।তৃতীয় শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী মো:ইমন জানান,স্কুলের সময় মেশিনের শব্দে মোগো মাথাব্যথা করে।হেরপর আর ক্লাশে থাহি না বাড়ি চইল্যা যাই।বাদুরগাছা গ্রামের অভিভাবক মো:বশার সিকদার জানান,স্কুলের ঘর দখল কইরা সভাপতি ইছাহাক হাওলাদার হ্যার ধান রাহার গুদাম বানাইছে।হেরপর আবার হেইহ্যানে বইয়া ধান ও চাউল বানায় (মাড়াই করে) এতে মোগো পোলাপানের ল্যাহাপড়ায় অনেক ক্ষতি অয়।মোরা এইয়া মানা করলেও হে হোনে (শোনে) না।গ্রামের আরো অনেক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিনিধিকে জানান,সভাপতি ইছাহাক হাওলাদার এর আগেও প্রভাব খাটিয়ে দোতালার একটি কক্ষ দখল করে তার নিজের বাংলো বানিয়ে ব্যবহার করতেন।তার কারনে নতুন ভবনের নান্দনিক দৃশ্য এখন মেশিনের ধোয়া আর ময়লায় ভরে স্কুল ভবন এখন ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে উঠছে।আমরা এর প্রতিকার চাই।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সহ-সভাপতি মো:মিজানুর রহমান জানান,বিদ্যালয় ভবন দখল করে এভাবে ধান রাখলে ছাত্র ছাত্রীদের লেখা পরার পরিবেশ নষ্ট হয়।দ্রুত ধান সরানোর ব্যবস্থা করা হবে।অভিযুক্ত সভাপতি ইছাহাক হাওলাদার বিদ্যালয় ভবন দখল করে ধানের গুদাম এবং ধান ও চাল মাড়াইর কথা স্বীকার করে বলেন,নীচ তলা খালি থাকায় ধান রেখে তা মাড়াই করে শুকিয়ে চাল করে বাড়ি নেই এতে দোষের কিছু নেই।
মেশিন বসিয়ে ধান ও চাল মাড়াইর ব্যবসা করার বিষয়ে বলেন,বৃষ্টির সময় জায়গা না থাকায় ওখানে মেশিন রেখেছি।বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুনা লায়লা জানান,সভাপতিকে বিদ্যালয় ভবন দখল করে ধান ও মেশিন রাখার বিষয়ে নিষেধ করা সত্ত্বেও ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জোর পূর্বক তিনি একাজটি করেছেন।তালতলী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কাজী মনিরুজ্জামান রিপন বলেন,বিদ্যালয় ভবন দখল করে যদি কেউ ধান বা মেশিন রাখে তা অবশ্যই বেআইনী।সরেজমিনে তদন্ত করে দ্রুত ধান এবং মেশিন সরানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান জানান,বিষয়টি শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply