শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন
পটুয়াখালী প্রতিনিধি॥ জীবনযুদ্ধ যে কাকে বলে তার বাস্তব দৃষ্টান্ত মোসাঃ কলি বেগম (৩০)। পটুয়াখালী জেলার সদর থানার কালিকাপুর ইউনিয়নের আউলিয়াপুর গ্রামের গরীব ঘরের মেয়ে কলি।
১৬ বছর পূর্বে একই গ্রামে মানসিক ভারসাম্যহীন মোঃ সেলিম মোল্লার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধের মাধ্যমে হাজারো স্বপ্ন নিয়ে সূচনা হয় তাদের সংসার জীবন।
কলি বেগম জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ইগলু কোম্পানীর ফ্যাক্টরিতে প্রত্যাহিক দিন মজুরের কাজে যোগ দেন। তাদের কোল আলোকিত করে আসে বৈশাখি ও সামিয়া। বড় মেয়ে বৈশাখী ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে এবং ছোট মেয়ে সামিয়া সবে মাত্র ০৫ বছর। সংসার নামক প্রস্তরটাকে কলি বেগমকে বহন করতে হয়। প্রতিদিন ভোর ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত চলে তার জীবনযুদ্ধ।
গত ইং ১৭-০৭-২০২০ তারিখে যথারীতি কাজ শেষে ঘরে ফিরে আসেন কলি বেগম।কিন্তু এসে দেখতে পান তার স্বামী ও কলিজার টুকরো ছোট মেয়ে সামিয়া বাসায় নেই। মা কলি বেগম দিশেহারা হয়ে পড়েন। ইং ১৯/৭/২০ তাং দুপুর অনুমান ১২.৪০ ঘটিকায় কুয়াকাটায় কর্তব্যরত টহল পুলিশ তাকে কান্নারত অবস্হায় দেখতে পেয়ে মহিপুর থানার নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ডেস্কে নিয়ে আসা হয়।
শিশু সামিয়াকে সাধ্যমত পরম মমতায় পরিসেবা দেয়া হয়। খেলার ছলে তার কাছ থেকে মায়ের ও পটুয়াখালী শহরের নানা বাড়ীর পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
অতঃপর ঢাকায় বসবাসরত কলি বেগমকে খবর দেয়া হয়। জানা যায় যে, স্ত্রীকে না জানিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন সেলিম মিয়া তার ০৫ বছরের শিশু সামিয়াকে নিয়ে ১৭ জুলাই ঢাকা থেকে রওয়ানা দেয়।
লঞ্চ ও সড়ক পথে ১৯ জুলাই কুয়াকাটা আসে। কুয়াকাটা এসে সেলিম মিয়া শিশু সামিয়াকে রেখে হারিয়ে যান। অবশেষে ২০ জুলাই ২০২০ খ্রিঃ সন্ধ্যায় আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
সামিয়ার মা খবর পেয়েই সেই সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মহিপুর থানায় এসে পৌছায়। কলি বেগম তার ছোট শিশু মেয়েকে দেখে অঝোরে কাঁদতে থাকে।
এ কান্না সুখস্মৃতি বিজড়িত অকৃত্রিম ভালোবাসার কান্না। এ কান্না নিখাদ ও পবিত্র।পরিশেষে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ডেস্কের মাধ্যমে শিশু সামিয়া ও তার মাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে নানাবাড়ির উপস্থিত লোকজনের সম্মুখে নাড়ীছেড়া ধনকে বুকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।হারানো মেয়ে সামিয়াকে ফিরে পেয়ে কলি বেগম শ্রদ্ধাবনত চিত্তে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
Leave a Reply