শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৪ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ জামাল মিয়া শোভনের বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারী সহ ডাক্তার, কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার, ইমার্জেন্সীতে আসা রোগীদের দালালের মাধ্যমে কৌশলে তার নিজস্ব ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া, কর্মচারীদের বাধ্যতামূলক তাকে মাশোহারা দিতে গোপন নোটিশ, প্রতিবন্ধীদের সত্যায়িত সনদ দিতে উৎকোচ গ্রহণ ও অফিস টাইমে রোগীদের থেকে টাকা নেয়া, তার হুকুমের যথাযথ তাবেদারী না করলে কথায় কথায় সোকজ ও বদলীর হুমকি, চিকিৎসা নিতে আসা নারীদের স্পর্শ কাতর জায়গায় হাত দেয়া, সুন্দরী নার্সদের একাধিক কুপ্রস্তাব সহ তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটির ঝাড়–দার শহিদুল ছাড়া তার বিরুদ্ধে সকলের মাঝে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও তিনি এর পূর্বে মঠবাড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারী পেশায় কর্মকালীন এক নারী রোগীর সাথে অসমাজিক আচারণের দায়ে রাতের আধাঁরে পালিয়ে পাশ্ববর্তী বামনা উপজেলায় স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনার কর্মকর্তা পদে যোগদান করে সেখানে দূর্নীতির আখড়া গড়েন।
অফিস টাইমে রোগীদের থেকে ভিজিট গ্রহণ সহ সকল ধরনের নোংরামীর জনক হিসেবে অল্প দিনেই তিনি খ্যাতি লাভ করেন। যে কারণে তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বামনার সর্বস্তরের জনতা তার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি ও বদলীর দাবী জানিয়ে মানব বন্ধন সহ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে স্মারক লিপি প্রদান করেন। তদন্ত মূলক যার একাধিক প্রমান পেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ক্ষুব্দ হয়ে শাস্তি মূলক তাকে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা থেকে আবাসিক মেডিকেল অফিসার পদে ডিমোশন করেন।
একাধিক প্রবাদ বাক্য আছে কয়লা ধৌত করলে ময়লা যায় না। প্রত্যেক বস্তু তার গোড়ার দিকে ধাবিত হয়। যে নোংরা চরিত্রের কোন দিন সে ভাল হতে পারে না। যে হীন মানসিকতার সে যত সম্পদশালী হউক সে ওই ধরনের লোকের সংষ্পর্শ খুঁজে বেড়াবে। মঠবাড়িয়ায় আবার সে যোগদান করে দু এক মাসের ব্যবধানে অনেকগুলো আলোচিত ঘটনার ইতোমধ্যেই তিনি জন্ম দিয়েছেন। যে ঘটনায় সচেতন মহল ফুঁসে উঠতে শুরু করেছে। চলমান বছরের জানুয়ারী মাস থেকে শুরু করে হাসপাতালের উন্নয়নের নামে ইমার্জেন্সী ও আউটডোরে আসা রোগীদের থেকে মাথাপিছু ২ টাকা করে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হলেও এ পর্যন্ত ঐ টাকা কোথাও খরচ না করে চলতি সপ্তাহে তিনি আত্মসাৎ করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সে নাকি প্রায়ই কথার মাঝে বলে থাকেন জীবনে দুটি জিনিস থাকলে আর কি চাই। সেটি হল নারী আর কড়ি। অনর্গল তার চেহারায় টাকার ক্ষুধা ও মুখে কুরুচিপূর্ন নারী ঘটিত কথা লেগেই থাকে। তিনি বলেন নারী পুরুষ উভয়ের সম্মতিতে যৌন চাহিদা মেটাতে অন্যায় কিছু দেখি না। অনুসন্ধানে জানা গেছে বামনার সংবাদ কর্মীরা তার এই দুর্নীতি পত্রিকায় তুলে ধরলে সেখানে তার গনেশ উল্টে যায়। যে কারণে তিনি মঠবাড়িয়ায় যোগদানের সাথে সাথে তিনটি মিডিয়া সংগঠনের সাথে পর্যাক্রমে নিজের অগ্রনী ভূমিকায় মত বিনিময় সভার আয়োজন করেন। অফিস কালীন তার কাছে রোগীরা চিকিৎসা পত্র নিতে গেলে তিনি বলেন আমি এখন ব্যস্ত আছি বিকালে আমার চেম্বারে আসুন। আমড়াগাছিয়ার দুলাল বলেন, তার কাছে অফিস টাইমে আমার অসুস্থ মাকে চিকিৎসা দিতে গেলে বলেন, বিকালে আমার চেম্বারে গেলে তাকে দেখব এভাবে পাঁচ শত টাকা তিনি আমার কাছ থেকে হাতিয়ে নেন। হাসপাতালে খাবার সরবরাহকারী সেলিম তাকে ম্যানেজ করে নি¤œ মানের খাবার রোগীদের মাঝে পরিবেশন করছেন। দক্ষিন মিঠাখালীর বাচ্চু মিয়া জানান আমার ভাতিজার পা দায়ের কোপে কেটে গেলে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে তাকে নিয়ে গেলে ডাক্তার জামাল মিয়া শোভন সে জায়গায় চিকিৎসা দিতে না দিয়ে তার ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে চার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক সুন্দরী নার্সকে তিনি কুপ্রস্তাব দিয়েছেন এবং তার স্পর্শ কাতর জায়গায় হাত দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অফিস সূত্রে জানাগেছে, চলমান বছরে ভেষজ বাগানে চারা রোপনের জন্য ৩৪ হাজার টাকা বরাদ্ধ এসেছে যা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ঝাড়–দার শহিদ গিলে খাবার অপেক্ষায় রয়েছেন। ভেষজ বাগানের দায়িত্ব পালনের কথা একজন সহকারী হারবালের। অথচ তা পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে তার বিশ্বস্ত হাসপাতালের একমাত্র ঝাড়–দার শহিদকে। অতিরিক্ত ৪ হাজার টাকা বেতন দিয়ে তার জামাল নাহার ট্রমা সেন্টারে কেয়ার টেকার পদে শহিদকে তিনি নিয়োগ দিয়েছেন। তার এ অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কোন ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারী কথা বললে তার বদলীর জন্য সুপারীশ করে ডিরেক্টর ও ডিজির কাছে কারো বিরুদ্ধে একাধিকবার চিঠি চালাচালিও করেছেন তাতে তিনি আশানুরুপ ফল পাননি। তার ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ভাল করে জানেন কি জন্য তিনি এসব করছেন। মানুষ দুনিয়ায় ভাল কিংবা খারাপ কাজ করে ইতিহাস গড়ে। তার পর্যালোচনায় এসেছে মন্দের দিকটি তার জীবনে অনেক প্রলম্বিত। অবুঝ শিশুর হাতে শানিত অস্ত্র দিলে যে ভাবে এলোপাথারী কোপাতে থাকে তার অবস্থা যেন অনুরুপ। তিনি ক্ষমতার ভারসাম্য ধরে রাখতে পারছেন না। যা কিছু করছেন শুধু মাত্র নিজের আখের গোছাতে। এতে কেউ তার বাধার সৃষ্টি হলে তার চরম পরিস্থিতির জন্য তাকে প্রস্তুত থাকতে হয়। যে কারণে জঙ্গলে যেমন বাঘের ভয়ে হরিণ সর্বদা তটস্থ থাকে তেমনি হাসপাতালে কর্মরত প্রতিটি লোক তার ষড়যন্ত্রের অদৃশ্য চোরাবালিতে আটকে যাবার ভয়ে আতংকিত। তার ভয়ে কেউ সরাসরি মুখ খুলছে না। ভিসুভিয়াসের ফুটন্ত লাভার মত নিরবে জ্বলছে যন্ত্রনা গুলো জ্বালানী হয়ে যার যার মনের গহিনে। বর্তমানে কয়েকজনের মাথায় তার অত্যাচারের খড়গ ঝুলছে। তা শুধু তার অন্যায় আবদার তারা মেনে নেয়নি সে জন্যে। বামনায় দুর্নীতির দায়ে কর্মজীবনে চরম ছন্দ পতন হয়েছে তাতে তার শোধরে যাওয়া উচিৎ ছিল। বরং পাগলা ঘোড়ার মত তার নোংরা আকাঙ্খা গুলোর তিনি লাগাম ছেড়ে দিয়েছেন। এ প্রসংগে রাসূল (সাঃ) এর বর্নিত একটি হাদিসের কথা মনে পড়ে যায়। তিনি বলেন তোমাদের মধ্যে কেউ যদি বলে দুশ্চরিত্র লম্পট লোক ভাল হয়ে গেছে তা বিশ্বাস করবে না। যদি শোন পাহাড় একস্থান থেকে অন্য স্থানে হেঁটে গেছে সেটি বিশ্বাস কর। তার বিরুদ্ধে জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে অবৈধ উপায় অর্জিত টাকায় মঠবাড়িয়ার গয়ালীপাড়া সহ পৌর শহরে একাধিক ভিটির মালিক হয়েছেন। এছাড়াও চারিত্রিক বিষয়টি নিয়ন্ত্রনহীন হওয়ায় স্ত্রী ডাক্তার নাহার তার অফিসে এসে তাকে পাহাড়া দেন। আবার সে কাহিনী চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের তিনি দম্ভের সাথে বলেন আপনারা দেখেন আমার স্ত্রী আমাকে বিশ্বাস করে না বিধায় আমাকে পাহাড়া দিচ্ছে। অপরদিকে আঙ্গুলকাটার নাছির উদ্দিনকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে তার কিডনী তিনি অকেজো করে ফেলেন বলে তিনি লিখিত অভিযোগ করেছেন। একপর্যায়ে তার স্বজনরা ঢাকা মিরপুর কিডনী ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ভুল চিকিৎসায় তার কিডনী নষ্ট হয়েছে বলে ডাক্তররা জানান। নাছির উদ্দিন বলেন, নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে আল্লাহর অশেষ করুনায় বেঁেচ আছি। সর্বশান্ত হয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় বেঁচে আছি। বাকি পথ চলা কিভাবে হবে তা জানি না। আমি এর বিচার চাই। মরিয়ম নামের এক গর্ভবর্তী মহিলা সরকারী হাসপাতালে সিজার করার জন্য ২১/০৬/১৮ তারিখ সেখানে ভর্তি হতে গেলে ডাঃ জামাল মিয়া শোভন সেখানে ভর্তি না করে পার্সেন্টিস পাওয়ার আশায় তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঐ দিন মহিমা ক্লিনিকে ভর্তি করে তাকে সিজার করেন। পরবর্তীতে ওই জায়গায় ইনফেকশন দেখা দেয়। সে থেকে এ পর্যন্ত মরিয়ম বাড়ীতে বিছানায় অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন। মরিয়মের স্বামী আবু তাহের লিখিত অভিযোগে জানান সিজারের সময় আমার স্ত্রীর অহেতুক স্পর্শ কাতর স্থানে ডাঃ জামাল মিয়া শোভন হাত দেয় ও তার ভুল চিকিৎসায় আমার আর্থিক ভাবে অনেক ক্ষতি হয়েছে। আওয়ামীলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ফজলুল হক মনি বলেন, ডাঃ জামাল মিয়া শোভন মূলত সে একজন জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক নারী ও অর্থলোভী হিসেবে সমাজে বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। বরিশাল ডিভিশনাল ডিরেক্টর ডাঃ মাহাবুবুর রহমান বলেন, ডাঃ জামাল মিয়া শোভন বামনার মত ছোট এলাকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই তার ব্যপারে উদ্ধর্তন কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করব। অভিযুক্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ জামাল মিয়া শোভন পত্রিকায় সংবাদটি না দেয়ার জন্য প্রতিবেদককে অনুরোধ করে বলেন, ভুলত্রুটি থাকলে এখন থেকে সংশোধন করে নেয়ার চেষ্টা করব। হাসপাতালের উন্নয়ন ফান্ডের টাকা কেটে যাওয়া ইলেকট্রনিক্স বাতি ক্রয় সহ আনুসাংঙ্গিক কাজে ব্যায় হয়েছে বলে তিনি জানান। সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তুম আলী ফরাজী বলেন, তার বিরুদ্ধে যথাযথ দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের প্রমান পাওয়া গেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply