মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১৭ অপরাহ্ন
ভোলা প্রতিনিধি: ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার মেঘনা নদী ও জেগে ওঠা ডুবো চরে অবাধে মশারি জাল, বিহিন্দী ও কারেন্ট জাল দিয়ে নির্বিচারে চিংড়ির রেনু পোনা (গলদা, বাগদা চিংড়ি) নিধনের মহোৎসব চলছে। এসব রেনু পোনা ধরতে গিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য মাছের রেনু পোনা ধ্বংস হচ্ছে প্রতিদিন।
এ সব নিষিদ্ধ রেনু পোনা সড়ক ও নদী পথ দিয়ে বড় বড় ড্রাম কিংবা পাতিল ভর্তি করে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে চালান করছে একটি প্রভাবশালী দালাল চক্র। মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, একটি চিংড়ির রেনু পোনা (পিএল-পোস্ট লাম্বা) ধরার জন্য অন্য প্রজাতির নয় থেকে ১২টি রেনু পোনা ধ্বংস করা হচ্ছে। এরমধ্যে দুই হাজার প্রজাতির মাছ, বিভিন্ন প্রকারের জলজপ্রাণি ও খাদ্যকণা প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে।
যে কারনে মেঘনা নদীতে অন্য প্রজাতির মাছ ও অনান্য জলজপ্রাণির ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে জলজ প্রাণির বাস্তুসংস্থান বা আন্ত:নির্ভরশীলতা। এ কারণেই ২০০১ সালে সরকার বাগদা ও গলদা প্রজাতির রেনু পোনা আহরণ ও সংরক্ষণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তবে উপজেলা মৎস্য অফিস বলছে তাদের নজরদারী আছে।
মেঘনা নদীর পাড় ঘুরে দেখা গেছে অন্তত: ৪ হাজার শিশু-কিশোর সহ নারী-পুর”ষ রাতদিন মেঘনা ও মেঘনার ডুবোচরের বিভিন্ন স্থান থেকে গলদা-বাগদার রেনু পোনা ধরছে। পুরো ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন তিন-চারজন স্থানীয় প্রভাবশালী। এর সাথে যুক্ত আছে আড়তদার ও ঘের মালিক সহ বিভিন্ন শ্রেণির লোক। প্রভাবশালী ও আড়তদাররা দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে অভাবগ্রস্থ্য লোকজনকে পোনা শিকার করতে বাধ্য করছে। অভিযোগ উঠেছে অজ্ঞাত কারণে স্থানীয় মৎস বিভাগের এদিকে কোন নজরদারী নেই। মেঘনা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে অসংখ্য মানুষ রেনু পোনা শিকারের সাথে শত শত প্রজাতির মাছ নিধন করছে। বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাকিমুদ্দিন, মৃজাকালু মাছ ঘাট, স্লুইজ গেইট ঘাট, নবাব মিয়ার হাট ঘাট, আলীমুদ্দিন ঘাট ও বাংলাবাজার ঘাটের নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, জেলেরা মশারি জাল ও বিহিন্দী জাল দিয়ে রেনু পোনা (গলদা, বাগদা চিংড়ি) ধরছে।
প্রতিবার জাল ফেলে সাত থেকে আটটি চিংড়ির রেনু পোনা পেলেও তার সাথে উঠে আসছে অসংখ্য প্রজাতির মাছের পোনা। চিংড়ি পোনা আলাদা করে ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, কলসি ও অন্যান্য পাত্রে জিইয়ে রাখলেও অন্য প্রজাতির মাছের পোনাগুলো ডাঙায় অথবা চরে ফেলে দেওয়ায় সেগুলো মারা যাচ্ছে।
এছাড়া মেঘনার বেড়ীবাঁধের উপর তজুমদ্দিন সীমান থেকে দৌলতখান উপজেলার সীমানার মধ্যে কয়েকশত রেনুপোনা কেনার অস্থায়ী অবৈধ আড়ৎ দেখা গেছে। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তিরা জানান, কতিপয় প্রভাবশালী দালাল জেলেদের একপ্রকার জোরপূর্বক বাধ্য করে বিহিন্দী জাল, মশারী জাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে দেদারছে রেনু পোনা নিধন করাচ্ছেন ।
এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাজমুস সালেহীন জানান, তাদের নজরদারী আছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নিয়ে তা জোরদার করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদা খাতুন রেখা জানান, দুই-একদিনের ভিতর সাঁড়াসি অভিযান চালানো হবে।
Leave a Reply