শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন
শাকিল মাহমুদ ।। সারাদিন মামলার নথি টানা, আদালতে মামলার আবেদন লেখা ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে থেকে দিনভর সহযোগিতা করার বিনিময়ে দিন শেষে যাতায়াত খরচ হিসেবে কিছু পারিশ্রমিক পান যে লোকগুলো, তাঁরা শিক্ষানবিশ আইনজীবী।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পরীক্ষা দিতে হয় তাদের। তার আগে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়।
বাধ্যতামূলকভাবে জ্যেষ্ঠ কোনো আইনজীবীর সঙ্গে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে হয় তাদের। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর এই শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা পড়েছেন দুর্ভোগে। আদালত বন্ধ। কাজ নেই, তো পয়সাও নেই।
বরিশালে এমন শিক্ষানবিশ আইনজীবীর সংখ্যা হাজারেরও বেশি। যাদের দিন কাটছে অসহায়ভাবে। শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুবই আর্থিক দৈন্যতার মধ্যে আছেন তাঁরা।
বিশেষ করে বরিশাল শহরে যাঁদের বাড়ি নেই, ভাড়া বাড়িতে থাকেন, তাঁরাই বেশি সমস্যায় রয়েছেন। গৌরনদী, মুলাদি, আগৈলঝাড়া, বানারীপাড়া, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা গুলোর অনেক শিক্ষানবিশ আইনজীবী বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন।
তাঁরা আইনজীবী সমিতির সদস্য নন বিধায় এদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াননি আইনজীবীদের এই সংগঠনটির নেতারাও। এদিকে সম্প্রতি দেশের বেশ কয়েকটি জেলার আইনজীবীদের সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এতে তালিকাভুক্ত আইনজীবীরা আপাতত কিছু আর্থিক সহযোগিতা পেলেও শিক্ষানবিশদের কথা কেউ ভাবছেন না। স্বল্প আয়ের আইনজীবী বা কনিষ্ঠ আইনজীবীদের জন্য একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব এরইমধ্যে উঠেছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, করোনার প্রাদুর্ভাবের এই দুঃসময়ে বা ভবিষ্যতে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কনিষ্ঠতম আইনজীবী বা স্বল্প আয়ের আইনজীবীদের জন্য একটি তহবিল গঠন করা উচিত। কারণ তাঁরা জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের ওপর নির্ভরশীল।
বর্তমানে আদালত বন্ধ থাকায় তাঁরা দুঃসময়ে দিন কাটাচ্ছেন। এ সময় তাঁদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, এই তহবিল গঠনে দেশের প্রতিষ্ঠিত আইনজীবীসহ সরকার, প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য বিত্তশালীরা এগিয়ে আসতে পারেন।
আদালতের শিক্ষানবিশ আইনজীবী মজিবর রহমান সৈকত বলেন, প্রতিদিন আদালতে সিনিয়র আইনজীবীকে সহযোগিতা করেন তিনি। এর বিনিময়ে সামান্য পারিশ্রমিক পান। প্রতিদিন যাতায়াত ও খাওয়া-দাওয়ার খরচ মেটানোর পর আর কিছু জমা থাকে না।
গত কয়েকদিন আদালত বন্ধ থাকার পর তিনি বেকায়দায় আছেন। সামনে কতদিন বন্ধ থাকে আদালত তা নিয়ে চিন্তায় আছেন তিনি।
মুস্তাফিজুর রহমান রুম্মন নামের একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী তাঁর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের জন্য কিছু একটা করুন। মেহেদী হাসান নামের আরেক শিক্ষানবিশ আইনজীবী বলেন, খুবই কষ্টে আছি।
এ মাসের বাসা ভাড়া কীভাবে দেব তা ভাবতে পারছি না। বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম বলেন, ‘শিক্ষানবিশরা আইনজীবী নন। তাদের কেবল প্রশিক্ষণ চলছে। এ কারণে আইনজীবী সমিতি তাদের বিষয়ে দায়িত্ব নিবে না। তবে মানবিক কোন বিষয় থাকলে সেটা বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে।
Leave a Reply