পাল্টে দিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের রূপচিত্র Latest Update News of Bangladesh

বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:১২ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




পাল্টে দিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের রূপচিত্র

পাল্টে দিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের রূপচিত্র

পাল্টে দিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের রূপচিত্র
ফাইল ছবি




শাকিব বিপ্লব॥ সময়ে গুণীজনের কদর হয় না। অসময়ে তার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। বাঙালির এই চিরাচরিত স্বভাবের কারনে কর্মক্ষেত্রে সফল এধরনের বিশেষ ব্যাক্তিদের সাফল্য নিয়ে সুনাম উচ্চারিত হয় কম। আবার এই বিশেষ ব্যাক্তিরা প্রচার বিমুখ হওয়ায় স্বল্প সময়ের কর্মস্থলে তাদের সাফল্যগাথাঁ ভূমিকার প্রশংসার অপেক্ষায় থাকেনা।

 

হয়তো এমনটি বলেই বরিশাল নগর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন খান প্রশংসার অপেক্ষায় না থেকে নিজের কর্মদক্ষতা উপস্থাপনে ভূমিকা রাখছেন আপন মনে। পাল্টে দিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের রূপচিত্র। তৈরী করেছেন চেইন অব কমান্ড এবং মাঠপুলিশের মধ্যে স্বচ্ছতার ষোলআনা। যেকারনে ‘শাহাবুদ্দিন খান’ নামটি অন্তত বরিশাল পুলিশের মধ্যে ধরকম্পের কারন হয়ে দাড়ানোর ফলে নগর পুলিশের বিরুদ্ধে পূর্বেকার ন্যায় অতোটা অভিযোগ আর শোনা যাযনা।

 

অবশ্য সচেতন সমাজ বলছে, অত্যন্ত সরলমনা এবং ব্যাক্তিত্বশীল এই পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘যাদুকর’ বললে অত্যুক্তি হবেনা। ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল বরিশাল মেট্রোপুলিশ কমিশনার হিসেবে তিনি দায়িত্বভার নেয়ার পর শুধু নগর পুলিশই নয় , বরিশালের আইন-শৃঙ্খলার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। রাজনৈতিক সংঘাত ও হানাহানি নেই বললেই চলে। নগরীর আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিকতা রাখতে শাহাবুদ্দিন খান প্রথম পদক্ষেপেই ঢেলে সাজান মেট্রো পুলিশের সকল শাখা-প্রশাখা। তিনি ভাগ্যবানও বটে। অতীত মূল্যায়নে দেখা যায়, তার আমলে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নগর পুলিশে যোগ দেয়ায় মেট্রোপুলিশকে নতুন করে সাজাতে সহায়ক হওয়ায় শাহাবুদ্দিন খান “পুলিশ জনগণের সেবক” বলে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে যে প্রতিশ্রুতি রেখেছিলেন তাতে আপাতত দৃষ্টিতে সফল বলে মনে করা হচ্ছে।

 

কর্মক্ষেত্রে কৌশলী এই পুলিশ কর্মকর্তা অনেকটা ধীরালয়ে একেকটি পদক্ষেপ রেখে নগর পুলিশকে সতেজ ও স্বচ্ছতা পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছেন। এক্ষেত্রে মেট্রোপুলিশকে কয়েকভাগে বিভক্ত করে সংশ্লিষ্ট শাখা¡ দেখভালে তার অধীনস্থ দক্ষ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়ায় তারাও জান-পরাণ দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। নজরদারির ভেতর রাখা হয় মেট্রো অধীনস্ত চারটি থানাসহ গোয়েন্দা পুলিশকে। তবে জনগণকে পুলিশের দোরগোড়ায় আসতে সহজতর করতে তার নির্দেশনায় থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও এখন আর সময়সূচী অনুযায়ী অফিস নয়, থাকতে হয় দিন কি রাত সর্বত্র সজাগ। পাশাপাশি জনগণের অভিযোগ স্বকন্ঠে শোনা এবং এলাকার আইনশৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে তিনি চালু করেন ওপেন হাউজ ডে।

 

থানাপ্রতি প্রতিমাসে এই অনুষ্ঠানে তিনি নিজেই উপস্থিত থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার হালচিত্র অনুভবের চেষ্টায় আমন্ত্রণ জানান আমজনতাসহ স্থানীয় নির্দলীয় সকল স্তরের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদের। বরিশালে কমিউনিটি পুলিশ ব্যবস্থাও তার একটি বড় অবদান। প্রতিটি ওয়ার্ডের বিশেষ ব্যাক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিউনিটি পুলিশী ব্যবস্থা গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিলো নির্যাতিত বা নিপীড়িত মানুষ প্রাথমিকভাবে থানামুখী না হয়ে স্থানীয়ভাবে অনেকটা সামাজিক সমস্যা সুরাহা করতে এই পুলিশ শাখার সহায়তা নেয়া। এতে থানা পুলিশের উপর যেমন চাপ অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে, তদরূপ মামলা মোকাদ্দমার সংখ্যাও তুলনামূলক এখন কম। একারনে সামাজিক দ্বন্দ সংঘাতেও সহনশীলতা দেখা দিয়েছে।

 

তার চেয়েও বড় পদক্ষেপ হচ্ছে, মাঠ পুলিশ থেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তদেরও জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। এসব পদক্ষেপ মূল্যায়ন করলে বরিশালের আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিকতার কারন সহজেই অনুমান করা যায়। তারপরও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় সময়বিশেষ বরিশালকে রক্তাক্ত করলেও খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ঘাতক বা অনুঘটকদের আটক করতে সক্ষম হয়েছে নগর পুলিশের মধ্যে সেই জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার জায়গা শক্ত হওয়ায়। এর ফলে বরিশালে সমসাময়িককালে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে চরমোনাই এলাকায় একজন দলিল লেখক এবং রূপাতলি এলাকায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুটি আলোচিত হত্যার নেপথ্যে রহস্য উদঘাটনসহ ঘাতকদের আটকে পুলিশ সফলতার পরিচয় দিয়েছে।
সবচেয়ে বড় সামাজিক ব্যাধী মাদক নির্মূলে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বরিশালে প্রতিষ্ঠা করতে কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় এখন মাদক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘাত কমে এসেছে। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় অভিযানে রেহাই পায়নি ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা-কর্মীসহ রাঘব বোয়াল। এক্ষেত্রে একটি উদাহরনই যথেষ্ট। একজন প্রভাবশালী যুবলীগ নেতার নিয়ন্ত্রিত কোতয়ালী ও কাউনিয়া থানা মধ্যবর্তী নাজিরপোল এলাকার নবজাগরণ ক্লাবে কয়েরকদফা পুলিশী অভিযান এবং মাদক উদ্ধার পরবর্তী ঐ ক্লাবটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো।

 

আবার ঐ নেতারই এক সহোচরের কাছ থেকে ঢাকা থেকে আসা বিপুল পরিমাণ ইয়াবার একটি চালান আটক করা হয়েছিলো। চরমোনাই এলাকা থেকে অনূরূপ আরেকটি ইয়াবার চালান আটকের ঘটনা শাহাবুদ্দীন খানের এই আমলের বড় সাফল্য। শুধু সামাজিক অপরাধী নয় , পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ামাত্র প্রমাণ সাপেক্ষে দ্রুত বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নজিরও তার আমলেই স্থাপিত হয়েছে।

 

কিন্তু দুর্ভাগ্য মিডিয়াকর্মীদের। এই পুলিশ কর্মকর্তার সাথে মূলধারার সাংবাদিকদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং প্রায়শ মিডিয়াকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হলে তার সরব উপস্থিতি এবং ইতিবাচক বক্তব্য দিতে দেখা যায়। কিন্ত তার দায়িত্বের ১ বছর ১০ মাসে অন্তত ৮ সাংবাদিক ও ১ লেখকের-সাহিত্যিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। এক্ষেত্রে কখনও মহলবিশেষের চাপের কাছে তিনি নতি স্বীকার অথবা থানা পুলিশ তাকে ভুলভাল বোঝানোর ফলে আইনীভাবে সাংবাদিক নির্যাতনের একটি ইতিহাস তৈরী হলেও মিডিয়ার সাথে তার সম্পর্কের চ্ছেদ ঘটেনি উভয়মহল বাস্তবতা অনুধাবনে।

 

পাশাপাশি ডিবি পুলিশের মাঠ পুলিশের হাতে একজন শিক্ষানবীশ আইনজীবী নির্যাতনে মৃত্যুর বিষয়টি তার সাফল্যময় পথ চলার ক্ষেত্রে একটি কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত হয়েছে। যদিও রেজাউল নামক ঐ যুবকের মৃত্যু নিয়ে পুলিশ ও নিহতের পরিবারের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রয়েছে।

 

তারপরও শাহাবুদ্দিন খানকে নিয়ে এখনও কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। মূলত তিনি ব্যালেন্স পলিসি কীভাবে প্রয়োগ করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐক্য গড়ে তোলা যায় তার উদাহরন হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে রাখার কারনে বরিশালে সরকার ও বিরোধীমতের পক্ষে সহাবস্থান ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু কারও কারও দাবী , তিনি ক্ষমতাসীন দলীয় বিশেষ কিছু দৃবৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃর্ৃৃত্তদের লাগাম টেনে ধরতে না পারায় কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু এই পুলিশ কর্মকর্তা এরূপ মন্তব্যের সাথে একমত নন। তিনি একজন প্রতিবেদকের সাথে সাক্ষাৎকারে এবিষয়ে মতামত রাখতে গিয়ে বলেন, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না থাকলে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অবকাশ কোথায়? ভেবে দেখতে হবে কোনো ব্যাক্তির দ্বারা সমাজে অস্থিরতা বা সংঘাত সৃস্টির অনুঘটক হলে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনতে কোনো ছাড় নেই। তবে অকপটে স্¦ীকার করেছেন রাজনীতিক চাপ পুলিশের উপর বরাবরই থাকে, তা অনেকক্ষেত্রে এড়িয়ে যাওয়া যায়না।

 

১৯৬৪ সালে ঝিনাইদহ জেলার যশোরের সীমান্তবর্তী হিজমপুর গ্রামে জ¤œগ্রহনকারী শাহাবুদ্দিন খান বরিশালে আসার পূর্বে সাময়িক সময়ের জন্য শিল্প পুলিশের ডিআইজি হিসেবে যতোনা সাফল্য দেখিয়েছেন তার চেয়ে বেশী কুষ্টিয়া,নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী, রাজশাহী ও মুন্সিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রাখায় সেখানকার মানুষ এখনও তাকে স্মরন করে বলে শোনা গেছে। ঢাকা ডিএমপির যুগ্ন-কমিশনার ও র‌্যাবের ৪-১০ ও ১২ এর কমান্ডিং অফিসার হিসেবে শাহাবুদ্দিন খান দায়িত্ব পালনকালে অপরাধ জগতে নিজের নামটি আতঙ্কস্বরূপ ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়।

 

আবার তার যাদুকরী দক্ষতায় অনেক অপরাধী দমন এবং স্বেচ্ছায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। সেই যাদুকর এখন বরিশালে ধীরালয়ে উদ্ভাসিত হয়েছেন ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD