বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৯ অপরাহ্ন
তানজিল জামান জয়, কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি॥ পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মহিপুর থানার এক অসহায় ভূমিহীন পরিবারের ৩০ বছর পূর্বের ভূমিহীন বন্ধোবস্ত প্রাপ্ত কার্ড বাতিলে মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি কূচক্রী মহল। বন্ধোবস্ত গ্রহীতার নামে বিএস জরিপ সহ হাল নাগাত খাজনা দাখিলা থাকলেও নিয়ম বর্হিভূত ভাবে বন্ধোবস্তো বাতিলের সূপারিশ করেছে উপজেলা ভূমি প্রশাসন।
অভিযোগ রয়েছে উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ বন্ধোবস্ত কেসটি বাতিলের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না হলেও রহস্যজনক ভাবে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে বন্ধোবস্তো কেসটি বাতিলের সুপারিশে তালিকাভূক্ত করে পাঠানো হয়েছে। আর এতে সহযোগিতা করেছেন স্বয়ং ভূমি অফিসের অতি উৎসাহী এক সার্ভেয়ার। অসহায় ওই পরিবারটি সম্পত্তি রক্ষায় দ্বারে দ্বারে ঘূরছেন। বাতিলের সুপারিশের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের বরাবরে আবেদন করেছে ওই পরিবারটি।
জানা গেছে,উপজেলার শিববাড়িয়া মৌজার বিপিনপুর গ্রামের অসহায় ভূমিহীন মোঃ ছালেক হাওলাদার (৮৭) ও তার স্ত্রী মোসাঃ জয়নব বেগম (৭০) এর নামে ৪৮৭ কে/১৯৮৯-৯০ইং সালে বন্ধোবস্তো কেসমূলে দেড় একর জমি বন্ধোবস্তো দেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক।
বন্ধোবস্তো প্রাপ্তমূলে আলাদা দাগ খতিয়ান সৃজন করে ভূমি প্রশাসন। ওই জমিতে বাড়িঘর নির্মাণ করে ভোগদখল সহ সরকারী নিয়মানুসারে হালনাগাত রেভিনিউ দিয়ে আসছে। দিয়ারা জরিপে দুটি আলাদা খতিয়ানে অর্ন্তভূক্ত করে ছালেক হাওলাদার ও তার স্ত্রী জয়নব বেগমের নামে বিএস জরিপও হয়েছে। যার বিএস খতিয়ান নং ১২২ ও ৭৯৮। মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও থানা ঘোষণা হওয়ার পর বন্ধোবস্তোকৃত ওই জমির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় লোলুপ দৃষ্টি পরে তারই আপন ছোট ভাই মোঃ নোয়াব হাওলাদারের। প্রচুর ধন সম্পত্তির মালিক হওয়া সত্তেও বড় ভাইকে অর্ধেক জমি দলিল করে দিতে চাপ সৃষ্টি করে।
এতে রাজি না হওয়ায় নানা ভাবে হয়রানীসহ খুন জখমের হুমকী প্রদান করতে থাকে। এতেও রাজি না হওয়ায় বন্ধোবস্তো কেসটি বাতিলে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করে। এনিয়ে একাধিক বার উপজেলা ভূমি প্রশাসন তদন্ত করলেও বন্ধোবস্তো কেসটি বাতিলের কোন কারন না থাকায় বাতিল করা হয়নি।
এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে নানা ভাবে শারিরীক ও মানসিক ভাবে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। ছালেক হাওলাদার ছোট ভাইয়ের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তা,কলাপাড়া ও মহিপুর থানায় এর প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ দাখিল করে। পারিবারিক বন্ধন টিকিয়ে রাখতে ছোট ভাইয়ের নামে কঠোর কোন আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
প্রশাসন ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের চাপের মুখে কিছুদিন বিরত থাকলেও আবারও বন্ধোবস্তো কেসটি বাতিলে ২০১৬ সালে জেলা প্রশাসন বরাবরে আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা ভূমি প্রশাসনের কাছে তদন্তের জন্য প্রেরণ করে। উপজেলা ভূমি প্রশাসনের সার্ভেয়ার কয়েক দফায় তদন্ত করে।
সর্বশেষ সার্ভেয়ার আনসার উদ্দিনের সাথে যোগসাজসে বন্ধোবস্তো কেসটি ২০১৯ সালের প্রথম দিকে আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তোলে। সেখানে এসিল্যান্ড সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। কিন্ত আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ বন্ধোবস্তো বাতিলের কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই রহস্যজনকভাবে ২০২০ সালের ফ্রেরুয়ারীতে বন্ধোবস্তো বাতিলে জেলা প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করা হয়।
এবিষয়ে ছালেক হাওলাদার বলেন, আমার একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন তিনি। উপার্জন করার মতো তার পরিবারে কেউ নেই। বৃদ্ধ বয়সে এসে ছোট ভাইয়ের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। জমি দলিল করে দিতে চাপ সৃষ্টি করে। বাধ্য হয়ে তিনি উপজেলা প্রশাসন,কলাপাড়া ও মহিপুর থানাসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের দ্বারস্ত হয়ে এর সুরাহা পায়নি তিনি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ওই অসহায় পরিবারটি।
এ বিষয়ে কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও আইন শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য মেজবাহ উদ্দিন মাননু বলেন, বন্ধোবস্তো কেসটি আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হলে তা বাতিলের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এসিল্যান্ড নিজেই তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করবেন এমন সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। বাতিলের কোন সিদ্ধান্ত না হলেও কিভাবে বন্ধোবস্তো কেসটি বাতিলের সুপারিশের তালিকায় অন্তভূক্ত করে জেলা প্রশানের কাছে পাঠানো হয়েছে তা তার বোধগম্য নয়।
এব্যাপারে উপজেলা সহকারী (ভূমি) কর্মকর্তা জগবন্ধু মন্ডল’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ছালেক হাওলাদারের নামে বন্ধোবস্তকৃত জমি বাতিলের সুপারিশের বিষয়ে আমি অবগত নই।
Leave a Reply