শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৩ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক//
অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। দায়িত্ব গ্রহনের পর পরই সকল অন্যায়, অপরাধ ও দুর্নীতি ঝেড়ে ফেলতে তিনি উদ্যোগ নেবেন। অন্যায় এবং দুর্নীতির সাথে আপোষ করবেন। অন্যায়কারী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকবেন তিনি। এমন কথাই বলেছেন নবনির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তার দেয়া এমন হুশিয়ারীর বাস্তব প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করাটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এদিকে দায়িত্ব গ্রহনের পূর্বে নবনির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র এমন হুশিয়ারী গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতিবাজদের। সাবেক মেয়রদের আমলে বীরদর্পে অনিয়মকে নিয়মে পরিনত করা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অজানা আতংকে সময় পার করছেন। কেউ কেউ আবার ভোল পাল্টে নবনির্বাচিত মেয়র এর কাছে লোক হওয়ার চেষ্টায় কৌশল আটতে শুরু করেছেন। শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই নয়, একই পথে হাটতে শুরু করেছেন সুবিধাবাদী কিছু ঠিকাদার।
সূত্রমতে গত ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। সর্বশেষ গত ৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক ঘোষনা শেষে ৮ অক্টোবর সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে মেয়র সহ ৩১ কাউন্সিলকে সরকারি গেজেটভুক্ত করা হয়। এখন অপেক্ষা শপথ এবং দায়িত্ব গ্রহনের। তাও আগামী ১৫ কিংবা ১৭ অক্টোবর মেয়র এবং নির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর পর ২৩ অথবা ২৪ জুলাই দায়িত্ব গ্রহন করবেন নবনির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ সহ ৪র্থ পরিষদের কাউন্সিলররা।
এদিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন চতুর্থ পরিষদের নির্বাচনে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো নগর ভবনে অনিয়ম এবং দুর্নীতি। যে কারনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সকল প্রার্থীই তাদের ইশতেহারে নগর ভবনকে দুর্নীতি মুক্ত একটি স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান গড়ে বিষয়টি অগ্রভাগে নিয়ে আসে। তবে তাদের ব্যতিক্রম ছিলেন নবনির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি বিশেষ কোন ইশতেহার ঘোষনা করেননি। ‘নগরবাসির দাবী বাস্তবায়নই তার নির্বাচনী ইশতেহার বলে ঘোষনা করেন। নির্বাচনের পরেও তিনি একই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলছেন।
নগরবাসির দাবী এবং অভিযোগের বিষয়গুলো মাথায় রেখে সিটি কর্পোরেশনকে অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষবানিজ্য মুক্ত করে একটি স্বচ্ছ নগর ভবন গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন নবনির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। নির্বাচনের পূর্বে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি যেমন সমালোচনা করেছেন নির্বাচনের পরেও ঠিক একই অবস্থানে রয়েছেন। তাইতো নগর ভবনে অনিয়ম এবং দুর্নীতির মাধ্যমে ধরাকে সরাজ্ঞান করা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মহা আতংকে রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বিগত সিটি মেয়রদের সময়ে এক শ্রেনির কর্মকর্তা ও কর্মচারী নগর ভবনে অনিয়ম এবং দুর্নীতির আতুর ঘর তৈরী করে। যখন যিনি মেয়র হয়ে এসেছেন তাকেই কব্জা করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছে তারা। এতে নগরবাসির ভাগ্যের পরিবর্তন না ঘটলেও দুর্নীতিতে ফুলে ফেপে উঠে দুর্নীতিবাজরা।
নগর ভবনে কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মচারী জানান, অনেক কর্মচারী রয়েছেন যারা সুবিধাবাদী লোক হিসেবে পরিচিত। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তখন সেই সরকারের লোক বলে পরিচয় দেয়। আবার যখন যে মেয়র আসে তখন সেই মেয়র এর লোক হয়ে যায়। ওইসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নাগরিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে পেছিয়ে থাকলেও অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে থাকছে। নিজ দায়িত্ব ফেলে রেখে তারা নগর ভবনের ঠিকাদারীও করছেন। একজন মালি হয়েও হাকাচ্ছেন পাঁচতলা বাড়ি।
কোন কোন কর্মচারী রয়েছেন যারা দায়িত্ব পালন না করলেও সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। এনেক্স ভবনে অফিস আর সময় কাটাবার জন্য নগর ভবনে পৃথক অফিস কক্ষ দখল করে বসে আছেন তারা। এমনকি নিয়ম না থাকলেও সরকারি তেল পুড়ে সরকারি গাড়িতেই ঘোরাফেরা করছেন সুযোগবাদী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ ধরনের অনেক অভিযোগ, অনিয়ম এবং দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ্যেই প্রত্যক্ষ করছেন নগর ভবনের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কিন্তু বিগত মিয়রদের কাছের লোক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস পায়নি কেউ।
তবে পূর্বের মেয়রদের উদাসিনতা আর স্বজনপ্রীতির উর্ধ্বে থেকে নগরবাসির সেবাকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার মহা পকিল্পনা গ্রহন করেছেন বিসিসি’র নবনির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। নগর উন্নয়নের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন ধারাবাহিকতা এনিয়ে নিয়ে যাবার পাশাপাশি অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে কাজ করবেন তিনি। ভয়েস অব বরিশালেক এমন কথাই জানিয়েছেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন নিয়ে আমার অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম দুর্নীতি এবং অনিয়ম মুক্ত নগর ভবন গড়ে তোলা। এখানে কোন দুর্নীতি-অনিয়ম চলবে না। আমার প্রথম কাজই হবে নগরবাসির সেবক হয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা। বিশেষ কাউকে সুবিধা নয়, বরং সকলকে এক ভাবে সেবা প্রদান করাই আমার লক্ষ্য। যাতে কেউ অভিযোগ তুলতে না পারে।
তিনি বলেন, ইতিপূর্বে বিসিসিতে অনেক অনিয়ম এবং দুর্নীতির কথা শুনেছি। আমি দায়িত্ব নেয়ার পরে সেগুলো আর চলবে না। যারা দুর্নীতিবাজ তারা আমার দলের হলেও শাস্তি ভোগ করতে হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন নবনির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
Leave a Reply