শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৯ অপরাহ্ন
সাগর আকন বরগুনা জেলা প্রতিনিধিঃপ্রাকৃতিক শোভায় সুশোভিত বরগুনা জেলায় রয়েছে বহু দৃষ্টিনন্দন স্থান, তার মধ্যে অন্যতম স্থান হল ঐতিহাসিক বিবিচিনি শাহী মসজিদ।
বাংলাদেশে মোগল স্থাপত্যেও নির্দশনগুলোর মধ্যে অন্যতম বরগুনার বিবিচিনি শাহি মসজিদ। প্রায় সাড়ে তিন শ বছর পুরনো এই মসজিটির স্থাপাত্যরীতিতে মোগল ভাবধারার ছাপও সুস্পষ্ট।
বরগুনার বেতাগী উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বিবিচিনি ইউনিয়নের এই মসজিটি অবস্থিত। স্থানীয় লোকজন জানান, মসজিদটি দেখতে বছরজুরে এখানে আসেন অনেক পর্যটক ও দর্শনার্থীরা। তবে পর্যটকদের আকর্ষন ধরে রাখা বা ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসাবে টিকে থাকা এই স্থাপনাটি সংরক্ষণে নেই তেমন কোন উদ্যেগ।
মসজিটির অবস্থান প্রায় ৪০ ফুট সুউচ্চ টিলার ওপর। বর্গাকার মসজিদটির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ৪০ ফুট করে। চারপাশের দেয়াল ছয় ফুট আট ইঞ্চি চওরা। উত্তর ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে খিলান আকৃতির প্রবেশপথ। মসজিদের ইট ধূসর বর্ণের। এই ইটের দৈর্ঘ ১২ ইঞ্চি,প্রস্থ ১০ ইঞ্চি এবং চওরা ২ ইঞ্চি। বর্তমানে যুগের ইটের চেয়ে এর আকৃতি একেবারেই আলাদা। দর্শনার্থী ও মসজিদের ওঠানামার জন্য মসজিদের দক্ষিন পাশে ৪৮ ফুট দীর্ঘ ও পূর্ব পাশে ৪৬ ফুট দীর্ঘ সিঁড়ি রয়েছে।
বিভিন্ন বইপত্র ঘেঁটে জানা যায়, ষোরশ শতকের মাঝামাঝি সুদূর পারস্য থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য দিল্লিতে আসেন হজরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ নামের এক সূফী-সাধক। ওই সময়ে মোগল স¤্রাট শাহজাহানের ছেলে বঙ্গ দেশের সুবাদার শাহ্ সুজা এই মহান সাধকের শিষ্যত্ব গ্রহন করেন। দিল্লিতে আসার তিন থেকে চার বছরের মাথায় ১৬৫৯ সালে শাহ সুজার আগ্রহে কয়েকজন শিষ্যক সঙ্গে নিয়ে নেয়ামত উল্লাহ আসেন বরগুনার বেতাগীর এই গ্রামে। তখন এই গ্রামের নাম বিবিচিনি ছিল না। পরে শাহ সুজার অনুরোধে এই গ্রামে তিনি এক গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদ নির্মান করেন।
জানা যায়, শাহ নেয়ামত উল্লাহর মেয়ে চিনিবিবির নামানুসারে এই গ্রামের নামকরণ করা হয় বিবিচিনি। সেই নাম অনুসারে মসজিদটি বিবিচিনি মসজিদ নামে পরিচিতি পায়। ওই সময়ে শাহ নেয়ামত উল্লাহর অনেক অলৌকিক কীর্তি দেখে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর তাঁর কাছে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেন।
বিবিচিনি মসজিদের পাশে রয়েছে তিনটি কবর।
এলাকার লোকজনের মতে, এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন শাহ নেয়ামত উল্লাহ এবং তাঁর দুই মেয়ে চিনিবিবি ও ইছাবিবি। স¤্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে ১৭০০ সালে শাহ নেয়ামত উল্লাহ ইন্তেকাল করেন।
ঐতিহ্যেও সাক্ষী হিসাবে টিকে থাকা এই শৈল্পিক স্থাপনার শরীরজুরে এখন শুধই অযতœ আর অবহেলার ছাপ। মসজিটির দেয়ালের কিছু কিছু অংশের পলেস্তারা ধসে গেলে ১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে মেরামত করা হয়। এরপর ১৯৯২ সালে প্রতœতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের দায়িত্ব নেয় এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনের তালিকাভুক্ত করে।
Leave a Reply