রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৭ অপরাহ্ন
পিরোজপুর প্রতিনিধি॥ পিরোজপুরে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎকারী প্রতিষ্ঠান এহসান গ্রুপের প্রতারণার শিকার হয়ে চাকুরিজীবী, প্রবাসী এবং শ্রমজীবীদের অনেকেই আজ নিঃস্ব। এমনকি বিধবা ও গৃহিণীর জমানো টাকাও আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে গ্রুপটির বিরুদ্ধে। পরকালে মুক্তির দোহাই ও সুদবিহীন উচ্চ মুনাফার কথায় ভুলে এহসানের প্রতারণার শিকার হয়ে এখন নিঃস্ব প্রায় পিরোজপুরের এসব ভুক্তভোগীর অনেকেই।
এদেরই একজন সাদেক আহমেদ শাহাদাত। বাসা পিরোজপুর শহরের কেন্দ্রস্থল পুরাতন পৌরসভা সড়কে। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৬ শতক জমি ২০১৮ সালের দিকে ৩০ লাখ টাকায় বিক্রি করে ২৫ লাখ টাকা জমা রাখেন এহসান মাল্টিপারপাসে।
সাদেক আহমেদ শাহাদাৎ জানান, তার সংসার চলতো ঠিকাদারির আয়ের টাকায়। গত কয়েক বছর তার ঠিকাদারি কাজ না থাকায় চালানপাতি ভেঙে সংসার চালাচ্ছিলাম। এটা শেষ হওয়ার পর পিরোজপুর শহরের মুসলিম পাড়া (ম্যালেরিয়া পুলের কাছে) এলাকায় থাকা পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৬ শতক জমি ১৮ সালের দিকে ৩০ লাখ টাকায় বিক্রি করে ২৫ লাখ টাকা জমা রাখি এহসান মাল্টিপারপাসে। আমি জমি বিক্রি করে ১ ঘণ্টাও টাকাটা হাতে রাখিনি। যেদিন জমিটা বিক্রি করেছি সেদিনই আমি এহসানে ২৫ লাখ টাকা রেখেছি। ৮ থেকে ৯ মাস ধরে আমি এ লাভ পাচ্ছিলাম। মুনাফা পাওয়া বন্ধ হবার পর চালান হারানোর দুশ্চিন্তায় এখন আমাকে খাচ্ছে।
সাদেক আহমেদ শাহাদাত বলেন, “এহসানের এমডি রাগীব আহসানের শ্বশুর মাওলানা শাহ আলম পিরোজপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম (বর্তমানে মসজিদ থেকে চাকরীচ্যুত)। তার পেছনে আমি নামাজ পড়েছি। মাওলানা শাহ আলমের কথা বিশ্বাস করে আমি এহসানে টাকা রেখেছি। আমি যার পেছনে নামাজ পড়ি তার কথা বিশ্বাস না করলে আমার কি নামাজ হবে? তিনি আমাকে বলেছেন, আমি এহসানের সাথে আছি। এইখানে টাকা রাখেন, এহসানের কার্যক্রম সুদমুক্ত। আমি মনে করেছি যদি আমি ২৫ লাখ টাকায় প্রতিমাসে ৪৭ হাজার টাকা পাই তাহলে সংসারটা আনন্দের সাথে কেটে যাবে। আমি লোভে পড়ে এহসানে টাকা রেখেছি।”
সাদেক আহমেদ শাহাদাত আরও বলেন, “আমি টাকা রাখার সময় এহসানের এমডি রাগীব আহসানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আমি যে লাভ পাবো তার গ্যারান্টি কি? তখন তিনি আমাকে বলেন, আমি আপনাদের এখানে (শেরেবাংলা পাবলিক লাইব্রেরী মার্কেটে) ব্যবসা করি। আমাদের বিভিন্ন ব্যবসা আছে। জমি কেনা বেচার ব্যবসা আছে আমাদের। আমি পালিয়ে যাবো কোথায়?। যখন আমি এহসানে টাকা রেখেছি তখন মনে হয় আমার সেন্সও কাজ করে নাই। যাচাই বাছাইও করি নাই। রাগীর যখন মুনাফা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তখন আমরা চাপ প্রয়োগ করতে থাকি।
আর এক ভুক্তভোগী গোলাম আহাদে। বাসা পিরোজপুর শহরের সিআই পাড়া এলাকায়। কৃষি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে চাকুরী থেকে অবসরে যান তিনি। এরপর ২০১৮ সালের দিকে তিনি ২০ লাখ টাকা রাখেন এহসানে। ১ লাখ টাকায় মাসিক ২ হাজার টাকা করে মুনাফা পেতেন তিনি। সারাজীবন ব্যাংকে চাকুরী করলেন আর অবসরে গিয়ে টাকা রাখলেন এহসানে? অধিক মুনাফার জন্যই কি সেখানে টাকা রেখেছেন?
তিনি বলেন, অবসর জীবনে আমাদের তো পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে হবে। এ জন্য আমি এখানে টাকা রাখি।
মুনাফা পেয়েছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু পেয়েছিলাম। আমি শেরেবাংলা পাবলিক লাইব্রেরীর সাথে জড়িত। তাদের এহসানের কার্যক্রম লাইব্রেরীর মার্কেটে। এহসান গ্রুপের কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে এখানে। অনেক ধর্মপ্রাণ মুসল্লি, অনেক হুজুরদের যাতায়াত এহসানে। শরীয়া মোতাবেক চলছে এহসানের কার্যক্রম এ কথা শুনে আমি এখানে টাকা রাখি। এখন প্রতারিত হয়ে নিঃস্ব।
এহসানে টাকা রেখে দুশ্চিন্তা ও হতাশায় দিন কাটানো আর এক ভুক্তভোগী নাম নজরুল ইসলাম নান্না। পিরোজপুরে এপেক্স ক্লাব পরিচালিত মোরশেদ স্মৃতি শিশু নিকেতনের ভাইস প্রিন্সিপাল তিনি। অধিক মুনাফার লোভে ৫ লাখ টাকা রেখেছিলেন এহসানে।
তিনি বলেন, আমার ছোট ভাই ও অনেক পরিচিতজন এহসানে টাকা রেখেছে। এতেও আমার একটা বিশ্বাস জন্মেছে এহসানের প্রতি। আমি এহসানে ৪৫ মাস মেয়াদী হিসেবে ৫ লাখ টাকা রেখেছিলাম। আমার তেমন কিছু নাই। এখন আসল টাকা বা মুনাফা ফেরত না পেয়ে আমি হতাশ। এই টাকা যদি ফেরত না পাই তাহলে আমার খুব কষ্ট হবে। আমি যাতে টাকা ফেরত পেতে পারি সে জন্য প্রশাসনের সহায়তা কামনা করছি।
Leave a Reply