বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৯ অপরাহ্ন
শাকিল মাহমুদ ।। সরকারের স্বাস্থ্যবিধির ধার ধারেন না থ্রি-হুইলার চালকরা। বরং স্বাস্থ্যবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বরিশালের সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব যানবাহন। স্বাস্থ্যবিধি মানতে পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন তারা। ছোট এই যানে সর্বোচ্চ তিনজন যাত্রী পরিবহনের বিধান থাকলেও বহন করা হচ্ছে ৮ থেকে ৯ জন।
প্রশাসনের নাকের ডগায় থ্রি-হুইলারের এমন রাজত্ব চললেও বিষয়টি প্রতিরোধের উদ্যোগ নেই। অভিযোগ রয়েছে থ্রি হুইলার মাহিন্দ্র পুলিশ রিক্যুইজিশনে নিয়ে নিজেদের টহল কাজে ব্যবহার করার কারণে এসব যানের অনিয়মের দিকে সুনজর নেই ট্রাফিক বিভাগের।
তবে অন্তত দেশের চলমান দুর্যোগের মধ্যে হলেও থ্রি-হুইলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি তুলেছেন সাধারণ মহল। সরেজমিনে দেখাগেছে, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মহাসড়কে দূরপাল্লার রুটে এবং আন্তঃজেলা সড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে থ্রি হুইলার মাহিন্দ্র।
ইতিমধ্যে এসব যান মহাসড়কে যাতে না চলাচল করতে পারে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহম্মেদ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাস চালক জানান, বাসে যাত্রী ওঠানো যাবে ২৬ জন। সে হিসেবে এক একজন যাত্রীকে দু’টি করে টিকেট কাটতে হবে।
বাস ভাড়া বৃদ্ধির সেই সুযোগে মাহিন্দ্র চালকরা বাস ভাড়ার থেকে মিনিমাম ২০ থেকে ৪০ টাকা কমিয়ে বিভিন্ন রুটে যাত্রী পরিবহন করছেন। আর যাত্রীরা কম ভাড়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। এমনকি ৫শ টাকা করে মাওয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত যাচ্ছেন ৮ থেকে ৯ জন যাত্রী নিয়ে।
স্বাস্থ্যবিধির তো পালন নেইই বরং ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে দাপিয়ে চলছে এই মাহিন্দ্র। আর এতে যাত্রী পাচ্ছেনা বাসগুলো। অভিযোগ বাস চালকদের হলেও এমন অভিযোগ অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন খোদ মাহেন্দ্র চালকরা।
যাত্রীবেশে চালকদের সঙ্গে কথা বললে এ প্রতিবেদককে তারা বলেন, মাওয়া পর্যন্ত যেতে রাজি। তবে সে জন্য যাত্রীপ্রতি ৫৫০ টাকা ভাড়া দিতে হবে।
বরিশাল টু বানারীপাড়া রুটে বাসে ডিউটি করা এক শ্রমিক জানান, সরকারের নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কিছু নেতার ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণেই এমনটা হচ্ছে। আর যা পুলিশ-প্রশাসনের লোক দেখেও না দেখার ভান করছে। যেখানে শুনেছি আদালত থেকে হাইওয়েতে থ্রি হুইলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সেখানে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মত ব্যস্ততম একটি সড়কে এই যানগুলো চলে কিভাবে সেটাই আমাদের প্রশ্ন।
আমাদের এমন কোনো রুট নেই যেখানে থ্রি হুইলার মাহিন্দ্র যাত্রী পরিবহন করে না। এদের কারণে সড়কে প্রাণহানির সংখ্যাও কম নয়। বেপরোয়া গতিতে চলাচলের পরও এদের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নেয়া হচ্ছে না। এদিকে থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বাস শ্রমিকরা।
বরিশাল বাস মালিক গ্রæপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ ইউনুস আজকের বার্তাকে বলেন, লকডাউনের মধ্যেই যখন পরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল তখন ও থ্রি হুইলার মাহেন্দ্রগুলো ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কসহ বিভিন্ন রুটে যাত্রী বোঝাই করে চলাচল করেছে।
পহেলা জুন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন চলাচলের অনুমতি মিললেও এই থ্রি হুইলার মাহেন্দ্রর কারণে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে বাস মালিকদের। বিভিন্ন রুটে ট্রিপ দেওয়ার পরে তেল খরচার টাকাও ইনকাম হচ্ছে না।
অপরদিকে সরকারের স্বাস্থ্যবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে যাত্রীদের কম ভাড়ার প্রলোভন দেখিয়ে যাত্রী বোঝাই করে বিভিন্ন রুটে যাতায়াত করছেন থ্রি হুইলার মাহিন্দ্র চালকরা।
আমরা বার বার জেলা প্রশাসক ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে থ্রি হুইলার ও মাহেন্দ্রর অনিয়ম ও স্বাস্থ্য বিধি না মানা সম্পর্কে অবহিত করেছি। কিন্তু তারা দেখছি -দেখবো বলেই আমাদের সান্ত¦না দিচ্ছে।
এই বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ কমিশনার জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, আমরা বিষয়টি তদারকি করছি। প্রতিনিয়ত নির্দেশনা দিচ্ছি যাতে কেউ অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করে।
Leave a Reply