মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক : দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার প্রবেশদ্বার বরিশালের গৌরনদী উপজেলা। যার পাশেই অবস্থান আগৈলঝাড়া উপজেলার। এ দুই উপজেলাকে নিয়ে বরিশাল-১ আসনে গঠিত।এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন প্রাক্রিয়া পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রীর পদমর্যাদায়), স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।
গোটা দক্ষিণাঞ্চলে দলের নেতা-কর্মীরা অভিভাবক হিসেবে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে শ্রদ্ধা করেন। স্থানীয় নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন নেতা-কর্মীরা। তাই বরিশাল-১ আসনে আসন্ন নির্বাচনে দলের একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছে তার অবস্থান। এছাড়া এ সরকারের আমলে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হওয়ায় আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় আওয়ামী লীগ এখানে বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। যে কারণে এ আসনে আওয়ামী লীগেরই জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি।এ আসনে ২ লাখ ৫৭ হাজার ২২০ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ২৯ হাজার ১৭ জন পুরুষ ও ১ লাখ ২৮ হাজার ২০৩ জন নারী রয়েছেন।
আওয়ামী লীগে একক হলেও বিএনপিতে রয়েছে বিভক্তি। যার ফলে বিএনপির একাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তবে বিভক্তি ঘুচিয়ে গেলে বিএনপি-আওয়ামী লীগ মিলে এ আসনে লড়াইটা হবে প্রতিযোগিতামূলক।বরিশাল-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন এ আসনে বিএনপির সংস্কারপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিত সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপন, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান, কার্যনির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল জেলা (উত্তর) সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান।
এদিকে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ঢাকা দক্ষিণ শাখার সদস্য অ্যাডভোকেট সেকেন্দার আলী, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম রহমান পারভেজ ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপার প্রার্থী আগৈলঝাড়া উপজেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক সরদার হারুন রানার নাম প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে।তবে এরইমধ্যে এ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আগৈলঝাড়া উপজেলা সভাপতি মুহাম্মাদ রাসেল সরদার মেহেদী হাসানকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে দলটি।নির্বাচনী পরিসংখ্যান বলছে, বরিশাল-১ আসনে সবথেকে বেশি সময় ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি। ১০টি সংসদ নির্বাচনে পাঁচবার জয়লাভ করেছে আওয়ামী লীগ, আর বিএনপি করেছে তিনবার এবং জাতীয় পার্টি দু’বার।
১৯৭৩ সালে এ আসন (তৎকালীন বাকেরগঞ্জ-১৩) দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অন্য যারা নিহত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ছিলেন অন্যতম। শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্ ১৯৯১ সালে বরিশাল-১ আসন থেকে নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালে পুনরায় এ আসন দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যেসময় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো বিএনপির কাজী গোলাম মাহবুব। তবে ২০০১-এর নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বামপন্থী সাবেক ছাত্রনেতা এম জহিরউদ্দিন স্বপনের কাছে সামান্য ভোটে হেরে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থী। যে নির্বাচন ও ফলাফল নিয়ে রয়েছে নানান বিতর্কও। আর এ নির্বাচনের পর দুর্বল নেতৃত্বে শুরু হয় বিএনপির বিভক্তির রাজনীতি।তবে ২০০৮ সালে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় এ আসন দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তার স্নেহভাজন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস। তিনি বিএনপি প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আর সবশেষে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ।বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের যেভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে তাতে সাধারণ মানুষ নৌকায় ভোট দেবে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের উন্নয়ন হয় এটা সাধারণ মানুষ বুঝে গেছে। তাই জনগণ মুখের কথায় নয়, উন্নয়নেই ভোট দিবে এবার।
বরিশাল-১ আসন নৌকার, যেখানে বিপুল ভোটে নৌকাই বিজয়ী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত কেরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ এলাকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল-কলেজের ব্যাপক উন্নয়ন করে। আবার নানান সুযোগ-সুবিধার কারণে মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে।
এদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে পরাজিত হওয়ার পর ২০০৯ সালের শেষের দিকে বিএনপিতে বিভক্তি দেখা দেয়। পরাজিত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহানকে আহ্বায়ক করে গৌরনদী উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন করাকে কেন্দ্র করেই বিভক্তির শুরু হয়। যা জটিল আকার ধারণ করে গৌরনদী পৌর ও আগৈলঝাড়া উপজেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে।
এ অবস্থায় বঞ্চিতরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিন কমিটি প্রত্যাখ্যান এবং পাল্টা কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়। গৌরনদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান ও দলের পৌর শাখার আহ্বায়ক মনিরুজ্জামানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
যে বিরোধের মধ্যেই আবুল হোসেন মিয়াকে আহ্বায়ক করে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে গৌরনদী উপজেলা বিএনপির কমিটি করা হয়। ওই কমিটি গঠনের কিছুদিন পর মনিরুজ্জামান মনিরকে সভাপতি ও শাহ আলম ফকিরকে সাধারণ সম্পাদক করে পৌর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। যে বিরোধ আজ পর্যন্ত চলমান রয়েছে এ আসনে।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী জহিরউদ্দিন স্বপন বলেন, নানান কথা বলে একটি পক্ষ দল থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশার প্রতি আস্থা রেখেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছি।
তবে নিজেকে ত্যাগী কর্মী হিসেবে তুলে ধরে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বরিশাল উত্তর জেলা শাখার জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান।
আর বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকাসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে নীতিনির্ধারকরা প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে এ মুহূর্তে বিএনপি নেতারা গায়েবি মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। এ ধরনের গায়েবি মামলা ও গ্রেফতার বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। তা না হলে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হবে না।
Leave a Reply