বরিশাল নগরীতে এ যেন সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোরই বিয়ে! Latest Update News of Bangladesh

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




বরিশাল নগরীতে এ যেন সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোরই বিয়ে!

বরিশাল নগরীতে এ যেন সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোরই বিয়ে!

বরিশাল নগরীতে এ যেন সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোরই বিয়ে!




ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বুধবার (০১ ডিসেম্বর) রাতে বরিশালে ঐতিহ্যবাহী শঙ্করমঠ চত্বরে হিন্দু রীতি অনুযায়ী এই বিয়ে হয়। তারা নিজেদের ছোট থেকে চিনলেও প্রেমের সম্পর্কে জড়ায় পাঁচ বছর আগে। প্রেয়সী ফাল্গুনীর শিশু বয়সে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় দুই হাতই বিচ্ছিন্ন হয়।

 

তবে হাত বিচ্ছিন্ন হলেও জীবন চলার পথ বিচ্ছিন্ন করেননি ওই নারী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিওলোজি ও এনভায়রনমেন্ট থেকে অনার্স মাস্টার্স শেষে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এইচআর বিভাগে কর্মজীবন শুরু করেন। আর এবার জীবনের নতুন আরেক অধ্যায় শুরু করলেন তিনি।

 

দমে না যাওয়া এই নারী প্রেরণা হয়েছেন অনেকের। ভালো মনের একজন মানুষ বলেই সাত পাকে বেঁধে নিয়েছেন বলে জানান বর সুব্রত।

 

সুব্রত মিত্র  আরও বলেন, ফাল্গুনীকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি। ও যখন ভার্সিটিতে পড়তো, তখন ওর সঙ্গে আমার ফেসবুকে কথা হতো। একটা সময় বুঝতে পারি ও পড়াশোনায় অনেক ভালো করছে। তবে ওর ফ্যামিলি লাইফ বা সামনের দিকে আগানোর কোনো চিন্তা চেতনা ছিল না। ওর হাত নেই এটা আমার কাছে কোনো সমস্যা মনে হয়নি। একটা লোকের হাত নেই, তাই সে বিয়ে করতে পারবে না, তার ফ্যামিলি হবে না, এমনটা হতে পারে না। এমন চিন্তা চেতনা আমারও নাই। আমি ওকে স্বপ্ন দেখাই, আমি ওকে ভালোবাসা শেখাই এবং আমি ওকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত জানাই। সবশেষ আমরা বিয়েও করেছি। আমরা সামনের দিনে যেন ভালো থাকতে পারি আমাদের জন্য সকলে আশীর্বাদ করবেন।

 

শরীরের দুটি অঙ্গ না থাকলে জীবন যে থমকে থাকে না এটিই প্রমাণ করতে চান নববিবাহিতা প্রেয়সী সাহা ফাল্গুনী। তিনি বলেন, দৃষ্টিভঙ্গি আর মানসিকতা ভালো হলে প্রতিবন্ধকতা কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়।

 

 

ফাল্গুনী আরও বলেন, ২০০২ সালে গলাচিপায় আমাদের পাশের বাড়ির ছাদে বসে বৈদ্যুতিক তারে দুর্ঘটনার কারণে দুই হাতই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমি নিজেকে কখনো দুর্বল মনে করিনি। দুই হাতের যতটুকু অংশ ছিল, ততটুকু অংশ দিয়েই আমি আমার পড়াশোনা শেষ করেছি এবং এখন চাকরিও করছি। আমি ২০১১ সালে মাধ্যমিক পাস করেছি গলাচিপা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ও ২০১৩ সালে উত্তরা ট্রাস্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করি। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিওলোজি ও এনভায়রনমেন্ট সাবজেক্টে ২০১৮ সালে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করি। তারপর চাকরি জীবনে প্রবেশ করি।

 

 

ফাল্গুনী বলেন, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনারা সকলেই অবগত। দৃষ্টিভঙ্গি আর মানসিকতা ঠিক থাকলে প্রতিবন্ধকতা কোনো সাবজেক্ট নয়। আমাদের বিয়েটা দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে মনে করি। এই পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাকে কম প্রতিকূলতা পেরোতে হয়নি, সকলেরই আন্তরিকতা পেয়েছি।

 

আমার স্কুল জীবন থেকে কর্মজীবনে যারা আমার সঙ্গে রিলেটেড তারা কেউ আমাকে আমার সমস্যা বুঝতে দেয়নি। আসলে কার মেন্টালিটি কেমন সেটা তার ওপর নির্ভর করে। যার মেন্টালিটি ভালো সে এগিয়ে আসবে, যার পক্ষে এমন বিয়ে সম্ভব না তার দূরে থাকাই ভালো। কারো ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া ঠিক না। আপনারা সকলে আমাদের জন্য আশীর্বাদ ও দোয়া করবেন যাতে সামনের দিনগুলোতে আমরা ভালো থাকতে পারি, ভালো কিছু করতে পারি।

 

দুইজনের গ্রামের বাড়িই পটুয়াখালীর গলাচিপাতে। দুই পরিবারের সম্মতিতেই উৎসবমুখর পরিবেশে হয় বিয়ের সব আয়োজন। তবে দাওয়াত ছাড়াও এই বিয়ে এক নজর দেখতে জড়ো হন অনেকেই। শুভ কামনা জানান নবদম্পতিকে।

 

সুব্রত মিত্রের ছোটবোন শ্রাবন্তী বলেন, আর পাঁচটা বিয়ে যেমন হয়, এখানেও তেমনিভাবে বিয়ে হয়েছে। কোনো ঘাটতি নেই। বরং অন্য বিয়ের থেকে এই বিয়ে ভালোভাবে হয়েছে।

 

শ্রী শ্রী শংকর মঠের সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব কর্মকার ভাষাই বলেন, এই বিয়ে আমার কাছে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এই বিয়ে দেখে আমি অবাক হয়েছি। একটা মেয়ের দুটি হাত নেই, তাকে একটি ছেলে বিয়ে করেছে। এমন মহানুভবতা দেখার সুযোগ হয়েছে আমাদের। আমরা শ্রী শ্রী শংকর মঠ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থেকে বিয়েতে সহযোগিতাও করেছি।

 

এদিকে, শরীরের সৌন্দর্যই নয় জীবনকে সুন্দর করতে প্রাণে প্রাণ মেলাতে হয় বলে জানায় ওই নবদম্পতি। তাদের এই পথচলা অগণিত মানুষের প্রেরণা হবে বলেও আশাবাদ তাদের।

 

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD