পটুয়াখালী ও বরগুনা উপকূলের জীবন থেকে ঈদ উৎসবের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে জেলে পল্লিতে Latest Update News of Bangladesh

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১২ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




পটুয়াখালী ও বরগুনা উপকূলের জীবন থেকে ঈদ উৎসবের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে জেলে পল্লিতে

পটুয়াখালী ও বরগুনা উপকূলের জীবন থেকে ঈদ উৎসবের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে জেলে পল্লিতে




মোঃ আরিফ বিল্লাহ নাছিম,কলাপাড়া(কুয়াকাটা)উপজেলা প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর উপকূলীয় কুয়াকাটা ও আলীপুর মৎস্য বন্দরে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকার জেলেরা ট্রলার নিয়ে অবস্থা করছেন। ঈদের আগে সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞায় জেলেরা অসন্তুষ্ট । জেলেরা বলছেন, অক্টোবর মাসে ২২ দিন ইলিশ সংরক্ষণ, নভেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৮ মাস জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি, মার্চ ও এপ্রিল এই দুই মাস জেলার বাউফল, দশমিনা, রাঙ্গাবালীর চর রুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার ইলিশের অভয়ারণ্যে ইলিশ ধরা যায় না।

এরপর এ বছর নতুন করে ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জেলেদের বিপদে ফেলে দিয়েছে। এখন সাধারণ জেলেরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আলীপুর মৎস্য বন্দরের পাশে জেলেপল্লির মো. নুরুদ্দীন (৩০) বলেন, ‘সাগরে মাছ ধইরা যে টাকা পামু হেইয়া দিয়া ঈদ করুম। ছেলে মেয়েদের জামা কিইন্যা দিমু।

কিন্তু মাছ ধরা বন্ধ, এখন কী করুম?’ শুধু জেলেরাই নন, আলীপুর-মহিপুর মৎস্য বন্দরে অনেক ট্রলার-মালিকও এখন অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। আলীপুর মৎস্য বন্দরের ট্রলার-মলিক দুলাল হাওলাদার জানান, ট্রলার ও জাল মেরামত, জেলেদের অগ্রিম টাকা দেওয়া, ট্রলারের বাজার করাসহ অন্তত আট লাখ টাকা খরচ করে এখন বসে রয়েছেন তিনি। সাগরে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ওই এলাকার ট্রলার-মালিক জাফর হাওলাদার ও আয়নাল হোসেনও একই কথা জানালেন। তাঁরা বলেন, ধার-কর্জ করে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে ট্রলার নিয়ে সাগরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েও এখন মৎস্য বন্দরে ট্রলার নিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন।

আলীপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, আসলে নতুন করে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ হওয়ায় জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে নিষেধাজ্ঞার আগেই জেলেদের পুনর্বাসনের আওতায় আনতে পারলে জেলেরা উপকৃত হতেন।জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানায়, মৎস্য সম্পদ সুরক্ষায় বঙ্গোপসাগরে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এই সময়ে সাগরের কোনো স্থানেই যান্ত্রিক এমনকি ডিঙি নৌকা দিয়েও মাছ আহরণ করা যাবে না। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ্ জানান, ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধের সময় যাতে জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জেলে পরিবারগুলোকে বিশেষ ভিজিএফের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে পটুয়াখালীতে ২ হাজার ৫৯১ দশমিক ০৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলায় জেলের সংখ্যা ৬৯ হাজার ৬৬০ জন।

এর মধ্যে ৬৪ হাজার ৭৭৭ জন জেলেকে ৪০ কেজি হারে চাল দেওয়া হবে। ঈদের আগেই জেলেদের হাতে চাল পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।এদিকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে মৎস্য বন্দর আলীপুর, মহিপুর ও কুয়াকাটায় জেলেসহ মৎস্যজীবীরা কয়েক দফায় মানববন্ধন, মিছিল করেছেন। পরে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। কোনো কিছুতেই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেননি জেলেরা।

এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মাছের মোকাম হিসেবে পরিচিত মহিপুর মৎস্য বন্দরের মৎস্য আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি মো. ফজলু গাজী বলেন, আগে কখনোই এ সময়টাতে ইলিশসহ কোনো ধরনের মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। এ বছরই প্রথম এ সময়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

এতে করে মাছের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এ এলাকার অন্তত লক্ষাধিক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। ফজলু গাজী আরও বলেন, এ সময়টাতে শুধু বাংলাদেশের ট্রলার, জেলে নৌকার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে হবে না, পাশের দেশ মিয়ানমার, ভারত, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার ট্রলার, বড় ধরনের মাছ ধরার জাহাজ যাতে অবাধে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে মাছ শিকার করতে না পারে, সে জন্যও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, শুধু ইলিশ নয়। বঙ্গোপসাগরে ৪৩৫ প্রজাতির গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য সম্পদ রয়েছে, যা সংরক্ষণ ও নিষ্কণ্টক প্রজননের স্বার্থে এবং সমুদ্রনির্ভর নীল অর্থনীতির লাগসই উৎপাদন ও বাস্তবায়নের নিমিত্তে সরকার বঙ্গোপসাগরের জলসীমায় নিরঙ্কুশ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৬৫ দিনের জন্য সব ধরনের মৎস্য শিকার নিষিদ্ধ করেছে।

৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞায় বরগুনার জেলেপল্লিতেও চলছে হাহাকার। জেলে, ট্রলার-মালিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনো মতে নিষেধাজ্ঞার সময় পার করছেন উপকূলের জেলেরা ।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় সরকার জেলার ২১ হাজার জেলের প্রত্যেকের জন্য ৪০ কেজি করে ভিজিএফ চাল বরাদ্দ করেছে।বরগুনা সদরের ডালভাঙা,নিশানবাড়িয়া,পাথরঘাটা পদ্মা,রুহিতা, তালতলীর তেঁতুলবাড়িয়া জেলেপল্লি ঘুরে জেলেদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা তাদের দুর্দশার কথা জানান।বরগুনা সদরের ডালভাঙা গ্রামের জেলে সোহাগ বলেন, ‘সাগরে ইলিশ শিকার বন্ধ।

আমাদের আয়ের পথও বন্ধ রয়েছে। ঈদে ছেলেমেয়েরা নতুন পোশাকের জন্য কান্নাকাটি করছে, কিন্তু সাগরে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় টাকা আয় করব কীভাবে আর কীভাবেই ছেলেমেয়েকে নতুন ঈদের পোশাক দেব, জানি না।’পাথরঘাটা উপজেলার মডেরখাল এলাকার জেলে জাফর হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের জীবন থেকে ঈদসহ সকল উৎসবের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। ঈদে ছেলেমেয়েদের কোনো পোশাক দেওয়া সম্ভব হবে না।

তালতলী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া এলাকার জেলে সানু বলেন, এই এলাকার ৯০ শতাংশ মানুষ মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখন ঈদ তো দূরের কথা, ঠিকমতো পরিবারের খাবার জোগাড় করতে কষ্ট হচ্ছে।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, কিছু কিছু ট্রলার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সাগরে মাছ ধরতে গেছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের সহায়তার জন্য পরিবারপ্রতি ৪০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. কবীর মাহমুদ বলেন, ‘জেলার ২১ হাজার জেলের প্রত্যেকের জন্য ৪০কেজি করে সরকারি সহায়তার চাল বরাদ্দ পেয়েছি। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে আমরা জেলেদের মাঝে চাল এই চাল বিতরণ করব।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD