বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৩ অপরাহ্ন
বাউফল প্রতিনিধি॥ পটুয়াখালীর বাউফলে কেশাবপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সহ-সভাপতি রাকিব উদ্দিন রুমন তালুকদার ও ইশাদ তালুকদার খুন হওয়ার পর আলোচনায় আসে কেশবপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম (৩৫) ওযুবলীগ কর্মী মোঃ রাসেল হাওরাদারের (৩৪) নাম ।
গত ২আগষ্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফিল্মি স্টাইলে কুপিয়ে হত্যা করা হয় যুবলীগ নেতা রুমন তালুকদার ও ইসাদ তালুকদারকে । অভিযোগ রয়েছে ওই হত্যার মিশনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেয় রফিক এবং রাসেল। চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িত রফিক-রাসেলের অপকর্ম আর সম্পাদের হিসেব শুনলে যে কারো চোক উঠতে পারে কপালে ।
অভাব অনটনের সংসারে বেড়ে ওঠা রফিক ছাত্রজীবন থেকেই বেপরোয়া জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলো। রফিকের বাবা মতলেব হাওলাদার ছিলেন মালবাহী নৌকার মাঝি।ইভটিজিং ও কলেজের নিয়ম শৃঙ্খলা না মানায় কেশবপুর মহাবিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয় তাঁকে । এসময় রফিকের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে ওই একই ইউনিয়নের মজিবর হাওলাদারের ছেলে রাসেল হাওলাদারের সাথে। স্থাণীয়দের কাছে চোর হিসেবে পরিচিত ছিলো রাসেলের।রাসেলও ছিল দরিদ্র পরিবারের সন্তান রাসেলের বাবা ছিলেন কেশবপুর বাজারে একজন সবজি বিক্রেত।
টিউিবওয়েল চুরি করে ধরা পরায় দীর্ঘদিন এলাকার বাইরে ছিলো রাসেল ।এলাকার বাইরে গেলেও নিজের অভ্যাস বদলায়নি সে বরং প্রতারনামূলখ জুয়া খেলা রপ্ত করে ৬ বছর পর নিজ গ্রামে পিরে আসে ।এরপর রাসেল এবং রফিক মিলে তৈরি করে নিজস্ব ক্যাডার বাহিণী।এই বাহিণীর অধিকাংশই ছিলো স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী।শুরু হয় রফিখ-রাসেল অপরাধ জগতে নতুন যাত্রা ।
কেশবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় প্রতারনামূলক জুয়া খেলার আসর বসিয়ে জুয়াড়িদের থেকে টাকা হাতিয়ে নিতো রফিক-রাসেল সিন্ডিকেট।এর বাইরে কালাইয়া-ঢাকাগামী লঞ্চে নিয়মিত জুয়ার বোর্ড বসিয়ে সাধারন যাত্রীদের কাছ থেকে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেয়াও ছিলো এই সিন্ডিকেটের অন্যতম প্রধান কাজ। লঞ্চে ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত ছিলো রফিক-রাসেল সিন্ডিকেট।তাঁরা গড়ে তুলে সংঘবদ্ধ গরুচোর চক্র।চোরাই গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করাও ছিলো রফিক-রাসেলের অন্যতম পেশা ।
জলদস্যু মহসিন ডাকাতের সাথেও রফিক-রাসেলের ছিলো বিশেষ সখ্যত। চুরি ডাকাতি ছিনতাই এবং প্রতারনামূলক নানা কাজের মদ্য দিয়ে রাতারাতি বিপুল পরিমান অর্থ বিত্তের মালিক বনে যায় রফিক-রাসেল ।অবৈধ মাদকের চালান পরিবহনেরও কাজ করতো রফিক-রাসেল।১১বছর পূর্বে পার্শ্ববদী গলাচিপা উপজেলার এক মোটরসাইকেল চালককে হত্যা করে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার হন রফিক ।
২০১৭ সালে বাউফল থানার নিকট পৌরসভায় বীনা জুয়েলার্সে ডাকাতির ঘটনায়ও গ্রেফতার হন রফিক । রাসেলের বিরুদ্ধে রয়েছে চুরি-ডাকতির একাধিক অভিযোগ। বেশ কয়েকবার জেলও খেটেছেন রাসেল।অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ হালাল করার জন্য এরপর রফিক ও রাসেল নাম লেখান আ’লীগের রাজনীতিতে । এর আগে রফিক এবং রাসেল বিএনপি দলীয় রাজণীতির সাথেও সস্পৃক্ত ছিলো বলে জানান স্থাণীয়রা।
রফিক ও রাসেলের সম্পদ অনুসন্ধানে জানা যায় চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য ।কেশবপুর বাজারের কাছে তিনতলা ভবন তৈরির কাজ চলমাণ রয়েছে রফিকের একটি জাহাজ দুইটি মাইক্রোবাস রয়েছে রফিকের।এ ছাড়াও ভাড়ায় চালিত রয়েছে ৭টি মটর সাইকেল রয়েছে তাঁর। কেশবপুর বাজারে রফিকের রয়েছে একটি রড সিমেন্টের আড়ৎ।
এ ছাড়াও নামে বেনামে রয়েছে বিপুল পরিমান জমি আর নগদ অর্থ।সম্পদ গড়ার ক্ষেত্রে একই পথে হেটেছেন রাসেল। বেশবপুর বাজার সংলগ্ন বিলাসবহুল একটি দ্বিতল ভবন গড়েছেন রাসেল।ওই ভবনে বর্তমানে তাঁর দুই স্ত্রী বসবাস করছেন ।
কেশবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় নামে বেনামে কিনেছেন অর্ধকোটি টাকার সম্পত্তি। বিভিন্ন ব্যাক্তি এবং প্রতিষ্টানে প্রায় দেড় ওেকাটি টাকা চড়া সুদে বিনিয়োগ করা রয়েছে রাসেলের । সুদ সমেত টাকা ফেরত না দিতে পারলে জায়গা জমি নিজের নামে লিখে নিতেন রাসেল।এসব কাজে কৌশলে দলীয় প্রবাব ব্যবহার করতো রাসেল।এছাড়াও রাসেল তাঁর আপন দুই ভাইকে কেশবপুর বাজারে মুদী মণোহরী পণ্যের বিশাল দুইটি দোকান করে দিয়েছেন। রফিক-রাসেলের এসব অবৈধ কর্মকান্ড এবং অর্থ উপর্যানের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্যও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি দৃষ্টি কামনা করেন স্থাণীয়রা।
দলীয় পদ-পদবী ব্যবহার করে কি ভাবে এত বেপরোয়া হয়ে উঠে রফিক-রাসেল মনে প্রশ্নের জবাবে কেশবপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি সালেহ উদ্দিন পিকু বলেন,তাদের আমি কখনোই আশ্রায়-প্রশ্রায় দেইনি । জোড়া খুণের ঘটনার মূল হোতা কেশবপুর ইউনিয়ন আ’লীগের বহিস্কৃত সাধারন সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন লাভলু রফিক-রাসেলকে মৌখিক ভাবে পদ-পদবী দেয়।এবং তাঁর আশ্রয়েই বেপরোয়া হয়ে উঠে তাঁরা ।
সালেহ উদ্দিন পিকু আরো বলেন, লাভলুর নির্দেশেই আমার দুই ভাই রুমন ও ইশাদকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে কুপিয়ে হত্যা করা হয় । রুমন ও ইশাদ তালুকদারের হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বগা ফাঁড়ির ইণচার্জ মোঃ মহিবুল্লাহর নিকট রফিক এবং রাসেলের অবৈধ কার্মকান্ড এবং অথর্-উপার্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান,রফিক ও রাসেলসহ মামলার সকল আসামীদের বিরুদ্ধে আণীত অভিযোগের তদন্ত চলমাণ রয়েছে। আমারা সকল অভিযোগ খতিয়ে দেখছি। সুষ্ট তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত খুণীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এই পর্যন্ত ১৩জন আসামীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এব্যাপরে স্থাণীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করছেন।
Leave a Reply