বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:৫৭ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: গরীবের ঘরে আদরের সন্তান। তাই বাবা-মা শখ করে নাম রেখেছেন রানী। সেই রানীর জীবন এতটাই দূর্বিসহ হয়ে উঠবে কে জানত! দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত বাবা-মায়ের সংসারে বোঝা হয়ে ওঠেন রানী। মাত্র ১০ বছর বয়সে রানীর বিয়ে হয় এক ভ্যানচালকের সঙ্গে। রানী এখন রানী খাতুন। তবে সেই ভ্যানচালক স্বামী সঙ্গদোষে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। শুরু হয় রানী খাতুনের সংগ্রামী জীবন।
সংসার চালাতে রানী এখন চা বিক্রেতা। সদর উপজেলার মচমইল বাজারের চেয়ারম্যান মোড়ে দিনভর চা বিক্রি করেন রানী খাতুন। রানী খাতুনের বাবার বাড়ি পাশ্ববর্তী আউসপাড়া ইউনিয়নের রক্ষিতপাড়া গ্রামে। রানীর সংসার জীবনের শুরুতে অভাব থাকলেও ছিল সুখ আর শান্তি। স্বামী এক সময় ভ্যান চালনোর পেশা ছেড়ে দিয়ে মচমইল বাজারের চেয়ারম্যান মোড়ে একটি চা স্টল খুলেন। দিন শেষে ভালোই কেনাবেচা হয়। এরই মধ্যে তাদের ঘর উজ্জল করে জন্ম নেয় এক পুত্র সন্তান। কিন্তু রানীর কপালে সেই সুখ আর বেশি দিন সইলো না। রানী খাতুনের স্বামী ক্রমেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। এক সময় সে হেরোইন সেবন শুরু করে। এভাবে তার স্বামী দোকানের সব মালামাল বিক্রি করে পরোপুরি নেশার জগতে ঢুকে পড়ে।
রানীর একমাত্র ছেলে এসএসসি পাশ করে সবেমাত্র মচমইল কলেজে ভর্তি হয়েছে। স্বামী নিরুদ্দেশ তার ওপর ছেলের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ। নিরুপায় রানী এবার নিজেই হাল ধরেন চা স্টলের। স্বামীর অনেক ঋণ শোধ করে স্থানীয় এনজিও থেকে ঋন নিয়ে তিনি আবার চালু করেছেন একমাত্র বেচে থাকার অবলম্বন চা স্টলটি। প্রায় ১২ বছর ধরে রানী এভাবে চা স্টল চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। তবে স্বামীকে মাদক থেকে ফেরাতে পারেননি।
রানী খাতুন জানান, তার চা স্টলটি ভালোই চলছে। প্রতিদিন প্রায় ১২শ টাকা বিক্রি হয়। দোকানে চা ছাড়াও সকালের নাস্তা রুটি খিচুড়ি ও ডালপুরি তৈরি হয়। দোকানটি তার ভাড়া নেওয়া। এছাড়া রয়েছে এনজিওর কিস্তিÍর চাপ। সব মিলিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। বৃদ্ধ শ্বশুর শাশুড়িকে তাকেই দেখতে হয়। তাদের কোনো জমিও নেই। এমনকি ভিটাবাড়িও নেই । প্রতিবেশীর ভিটায় দুটি ঘর তুলে কোনো রকম ঠাই করে নিয়েছেন।
শুভডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম জানান, রানী খাতুন খুবই সংগ্রামী একজন নারী। তার স্বামী নেশাগ্রস্ত হওয়ায় তাকে খুব কষ্ট করে চলতে হয়। আগামীতে তার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোনো কিছু সহযোগিতা করা যায় কি-না তার চেষ্টা করব বলেও জানায় ইউপি চেয়ারম্যান।
Leave a Reply