অধিকাংশ হাসপাতালেই নেই ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার Latest Update News of Bangladesh

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




অধিকাংশ হাসপাতালেই নেই ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার

অধিকাংশ হাসপাতালেই নেই ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার




অনলাইন ডেস্ক//
মঙ্গলবার বেলা ১১ টা। রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতাল। নিচ তলায় ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে বেঞ্চিতে বসে ছোট শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এক মা। তাঁর আশপাশে বসা পুরুষ রোগী ও দর্শনার্থীরা। অনেক রোগী ও দর্শনার্থীরা ওই পথ ধরে আসা যাওয়া করছিলেন দেদারসে। একপর্যায় পুরুষ রোগী ও দর্শনারীদের আনাগোনায় লজ্জায় শিশুকে দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেন মা। সঙ্গে সঙ্গে শিশুটি শুরু করে কান্না।

ওই মায়ের সঙ্গে কথা হয় একুশে টিভি অনলাইনের এ প্রতিবেদকের। শিশুকে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারে নিয়ে কেন দুধ খাওয়াচ্ছেন না? এমন প্রশ্ন শুনে ওই নারী রেগে গিয়ে বললেন, এই হাসপাতালে এমন কোনো কক্ষ নেই যেখানে বসে শিশুকে দুধ খাওয়ানো যাবে।

এ বিষয় জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার নেই। মায়েরা শিশুকে কোথায় দুধ পান করাবেন, এমন প্রশ্নে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই হাসপাতাল কর্মকর্তা বলেন, পাশে নামাজের কক্ষ রয়েছে। সেখানে অনেকে গিয়ে শিশুকে দুধ পান করিয়ে আনেন।

এখানেই শেষ নয়। একই দিন বেলা ১২ টায় রাজধানীর পান্থপথে কমফোর্ট হাসপাতালে গিয়ে একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। এক মা তার নবজাতককে দুধ পান করানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, তাদের হাসপাতালেও ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারের কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে তারা ৪ তলার একটি কক্ষের কথা বলে সেখানে গিয়েও তেমন কোনো ব্যবস্থা না মেলায় এক প্রকার বাধ্য হয়ে ৪ তলার এক কোনে গিয়ে সন্তানকে দুধ পান করান ওই মা।

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২ নম্বর ব্লকে একটি ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার আছৈ। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারের কক্ষটি তালাবদ্ধ দেখা গেছে।

রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে একই চিত্র। এমনকি ল্যাবএইড হাসপাতালের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিরাও জানেন না তাদের হাসপাতালের কোন স্থানে বা কত তলায় ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ল্যাবএইড হাসপতালের এক কর্মী জানান, বেস্ট্র ফিডিং কর্নারের জন্য আলাদা কোনো জায়গা নেই। একজন নার্স এটির দায়িত্বে আছেন। মাঝেমধ্যে এসে তিনি ওই কর্নারে ঘুরে যান। সব সময় থাকেন না।

দুপুরে একই চিত্র দেখা যায় গ্রীন লাইফ হাসপাতালে। কর্তৃপক্ষ তিন তলায় একটি ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার আছে দাবি করলেও তিন তলায় গিয়ে খোঁজে পাওয়া যায়নি ওই কর্নার।

এদিকে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার আছে মিটফোর্ড হাসপাতালে। কিন্তু এটি প্রায়ই বন্ধ থাকে। আজ দুপুরে হাসপাতালটিতে গিয়ে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

শুধু রাজধানীর একটি দু’টি হাসপাতাল নয়, প্রায় সব হাসপাতালের-ই চিত্র একই। বেশিরভাগ হাসপাতালেই নেই ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার। কোনো কোনোটিতে থাকলেও সেগুলো প্রায়ই বন্ধ থাকে। আবার কোনো কোনোটি পড়ে আছে অযত্ন অবহেলায়, নিয়মিত পরিস্কারও করা হয় না। তাই যেসব হাসপাতালে আছে সেটাও পরিণত হয়েছে নামসর্বস্ব কেন্দ্রে।

অথচ ২০১০ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশে প্রতিবছর মাতৃদুগ্ধ দিবস পালিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে আরেকটি নির্দেশনা ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, সরকারি প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, রেলওয়ে ও বাস টার্মিনাল, শপিংমলসহ প্রত্যেকটি জনবহুল জায়গায় ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করার।

এই নির্দেশনার অনেক বছর পেরিয়ে গেলেও কিছু হাসপাতাল বা অফিস ছাড়া অন্য কোথাও ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করা হয়নি। এ সম্পর্কে ইনফ্যান্ট অ্যান্ড ইয়াং চাইল্ড ফিডিং (আইওয়াইসিএফ) নীতিমালা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। শুধু রাজধানীতে এমন নিয়ম অমান্য করা হচ্ছে এমন নয়। দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতেও এমন অবস্থা চোখে পড়বে।

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাসরিন বেগম আক্ষেপ করে বলেন, `আমার এখানে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার আছে ঠিকই, কিন্তু এটা চালানোর মতো নার্স নেই। সারা হাসপাতালে আমার কেবল নার্স আছে একজন। আরেকজন ছিলেন, তিনি উচ্চশিক্ষায় ছুটিতে গেছেন। তাই একজন নার্স কতদিকে সামাল দেবে?`

এবিষয় জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্স এর সহ-সভাপতি আকতার মাহমুদ বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশের নগরায়ন হয়নি। ফলে সামঞ্জস্যহীনতা রয়েছে। তাছাড়া দেশের মানুষের মধ্যে জেন্ডার সংবেদনশীলতার ধারণাও গড়ে ওঠেনি। সন্তানের মায়ের কিছু বিশেষায়িত প্রয়োজন বা চাহিদা আছে। সেগুলো নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের কিছু কিছু কর্পোরেট অফিসে এখন মায়েদের ব্রেস্ট ফিডিংয়ের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. এস কে রায় একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, `শিশুর পুষ্টি ও বেড়ে ওঠার স্বার্থে ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে নিরবচ্ছিন্নভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই সরকারের উদ্যোগে চালু করা হয়েছিল হাসপাতালগুলোতে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার।

বিশেষ করে শিশুবান্ধব হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা হাসপাতালে একটি করে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার থাকার কথা। এজন্য আমরা প্রশিক্ষণও দিয়েছি। কিন্তু আমরা এখন প্রায়ই অভিযোগ পেয়ে থাকি অনেক কেন্দ্রই ঠিকমতো খোলা হয় না। যদি এমন পরিস্থিতিই হয়ে থাকে তবে তো এটার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জনবল সংকট দূরীকরণে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD