শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৯ পূর্বাহ্ন
পটুয়াখালী প্রতিনিধি॥ একদিকে সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ, অন্যদিকে করোনার কারণে অন্য কাজও নেই। এ কারণে সাগর উপকূলের জেলেদের চরম দুর্দিন যাচ্ছে।
সংসারের ব্যয়ভার বহন ও মহাজনের কাছ থেকে নেয়া দাদনের (ঋণ) টাকা শোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাজার হাজার জেলে। আয়রোজগাড়হীনভাবে দীর্ঘদিন বেকার সময় কাটানোর ফলে অনেকের ঘরের চুলায় এখন আগুন জ্বলছে না।
এমন অবস্থায় বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন পটুয়াখালীর উপকূলের জেলেপল্লীগুলোতে হাহাকার চলছে। মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এ বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত টানা ৬৫ দিনের অবরোধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তাই বর্তমানে সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে। তবে মৎস্য বিভাগ ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার আগ থেকেই করোনার কারণে উপকূলে ইলিশ শিকার প্রায় বন্ধ ছিল। করোনার প্রভাবে গত ২৬ মার্চ দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষিত হওয়ায় বরফ সংকট ও মাছ চালান দিতে না পারায় অনেক জেলেই মাছ ধরতে যাননি।
এরপর আবার লকডাউন শিথিল হতে না হতেই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলে আসে। এতে মাসতিনেক ধরে ইলিশ শিকার বন্ধ রয়েছে উপকূলের জেলেদের। জেলেরা জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যেতে পারছেন না তারা।
এদিকে করোনার কারণে গ্রামেও অন্য কোনো কাজ নেই। বিগত বছরগুলোতে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে জেলেরা সমুদ্র থেকে উঠে এসে এলাকায় দিনমজুরি বা অন্য কোনো কাজ করে সংসার চালাতেন।
কিন্তু এ বছর করোনার কারণে কোনো কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে ঘরে বসেই বেকার সময় পার করতে হচ্ছে জেলেদের। সংসার চালানোর একমাত্র মাধ্যম ছিল জেলে পেশা। এখন বিকল্প কোনো আয়ের উৎস না থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা।
অন্যদিকে মাছের ব্যবসার জন্য মহাজনের কাছ থেকে নেয়া দাদনের টাকা কিভাবে শোধ করবেন তা নিয়েও চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জেলেরা।
কলাপাড়ার মহিপুর মৎস্য বন্দরের জেলে মো. আবুল কালাম জানান, ‘লকডাউনের কারণে যথাসময়ে বরফ না পাওয়ায় প্রায় দুই মাস ধরে ইলিশ ধরা বন্ধ রেখেছি। এরপর আবার কিছুদিন মাছ ধরতে সাগরে যাই। জালে ইলিশ ভালোই ধরা পড়ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আবার ৬৫ দিনের অবরোধ।
যার কারণে সাগরে মাছ ধরতে পারছি না। মাছের বোট করার জন্য মহাজনের কাছ থেকে চার লাখ টাকা দাদন নিয়েছিলাম। এখন সেই টাকা পরিশোধের জন্য মহাজন বারবার চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু মাছ ধরা বন্ধ, আমরা টাকা পামু কই।’
রাঙ্গাবালী উপজেলার গঙ্গীপাড়ার জেলে জসিম কাজী বলেন, ‘আমরা ইলিশ শিকারি জেলে। বঙ্গোপসাগরে ইলিশ শিকারই আমাদের পেশা। বছরে তিন-চারবার মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে।
এর মধ্যে আবারও যোগ হয়েছে করোনা ও লকডাউন। এ বছর সাগরে ভালো এক মাসও মাছ ধরতে যাইতে পারি নাই। তাহলে আমাগো পুরা বছরের সংসার কিভাবে চালামু। সরকার যে সহায়তা দেয় তাও সামান্য।’
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদ উল্লাহ জানান, সমুদ্রে মাছ শিকার থেকে বিরত থাকা জেলেদের সরকার খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকে। নিবন্ধিত প্রতি জেলেকে ৬৫ দিনের জন্য দুই ধাপে ৮৬ কেজি করে চাল দেয়া হয়।
এছাড়া সমুদ্রগামী যেসব জেলে নিবন্ধিত তালিকায় নেই তাদের নতুন করে তালিকাভুক্ত করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
Leave a Reply