বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৭ অপরাহ্ন
রাঙ্গাবালী প্রতিনিধি॥ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় প্রতিবন্ধী স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের কথা বলে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে মিজানুর রহমান তসলিম নামে এক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত তসলিম রাঙ্গাবালী নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করে কোন সুরাহা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে ঘুষ নেয়া অর্থ ফেরত চাইতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা কর্তৃক নানা হুমকি-ধমকির শিকার হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে একটি প্রতিবন্ধী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন মিজানুর রহমান তসলিম। ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি দাবি করে চাকরি দেয়ার নামে ৩২ জন প্রার্থীর কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তসলিম। কোনো কোনো প্রার্থীকে অর্থের বিপরীতে জামানত হিসেবে চেক প্রদান করা হয়েছে।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাকরি না পেয়ে তসলিমের কাছে টাকা ফেরত চাইলে হুমকি-ধমকি দেয়া হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা সম্মিলিত হয়ে তসলিমকে আটক করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামানের কাছে নিয়ে গেলেও হয়নি কোনো সুরাহা।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান বলেন, গত ১৮ আগস্ট ভুক্তভোগীরা তসলিমকে আটক করে ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ে এসেছিলেন। সেখানে তসলিম তাদের অর্থ ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন আমার বিরুদ্ধে মারধরের অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত রাঙ্গাবালী সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা তসলিম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার কাছে টাকা পেলে তা দেব। কিন্তু আমাকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। টাকা পেলে টাকা দেব কিন্তু হামলার বিচার চাই।
ভুক্তভোগী মোসা. আনিকা বলেন, ‘প্রতিবন্ধী স্কুলে শিক্ষক পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেয় তসলিম। কিন্তু স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের খসড়া তালিকায় শিক্ষকের বদলে আয়ার নাম দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানালে তসলিম আরও দুই লাখ টাকা দাবি করেন। পরে আমি ওই এক লাখ টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে কেটে পড়ে তসলিম।
ভুক্তভোগী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রতিবন্ধী স্কুলে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৯ মাস আগে তার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নেয় তসলিম। চাকরি দেয়া তো দূরের কথা, টাকা ফেরত চাইতে গেলে হাত কেটে দেয়াসহ অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন।
মোসা. শীলা জানান, সাত মাস পূর্বে প্রতিবন্ধী স্কুলে চাকরির নামে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয় তসলিম। চাকরি না পেয়ে টাকা চাইলে হুমকি দেয়া হয়। পরে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দেন তিনি।
একইভাবে অহিদুল ইসলামের কাছ থেকে এক লাখ, মো. আনোয়ারের কাছ থেকে ৫৫ হাজার, মো. আতাউল সরদারের কাছ থেকে এক লাখ, মো. মাসুদের কাছ থেকে ৫৫ হাজার, মো. শাকিলের কাছ থেকে ১৭ হাজার, মো. আসাদের কাছ থেকে ৮০ হাজার, রাকিব মাহমুদের কাছ থেকে ৮০ হাজার, সিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে এক লাখ ৫০ হাজার ও আল-মামুনের কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকাসহ অন্তত ৩২ জনের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিবন্ধী স্কুলের সভাপতি ইউএনও। কিন্তু মিজানুর রহমান তসলিম সভাপতি দাবি করে চাকরি দেয়ার নামে অর্থ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তা ছাড়াও ওই প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত নয়, তাই কোনো নিয়োগই বৈধ নয়।
Leave a Reply