ভারতে মুসলমান মেয়েদের নিয়ে নতুন রাজনীতি Latest Update News of Bangladesh

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪১ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




ভারতে মুসলমান মেয়েদের নিয়ে নতুন রাজনীতি

ভারতে মুসলমান মেয়েদের নিয়ে নতুন রাজনীতি




অনলাইন ডেস্ক:  ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ, উদারপন্থি, বুদ্ধিজীবী বলে যাঁদের পরিচয়, তাঁরা সংখ্যালঘু মুসলিমদের সব কিছুকে সমর্থন করেন, তাঁদের ধর্মকর্ম, মাদ্রাসা, মসজিদ, ঈদ, মহররম, হিজাব, বোরখা, এমনকী নারীবিরোধী শরিয়া আইনও। মুসলিমরা মসজিদ মাদ্রাসা আরও বানাতে চাইলে, রাস্তা বন্ধ করে মানুষের চলাচলে অসুবিধে করে হলেও জুমার নামাজ আদায় করলে- বামপন্থি উদারপন্থিরা সেটাতে সায় দেন, ওদের হয়ে লড়েন। এই উদারপন্থি বুদ্ধিজীবীরা হিন্দু মেয়েদের সমান অধিকারের জন্য লড়েছেন, কিন্তু মুসলিম মেয়েদের সমান অধিকার নিয়ে তাঁদের কোনও মাথাব্যথা নেই। তাঁরা মনে করেন, মুসলিমরা যা চায়, তাই তাদের দেওয়া উচিত। এখানে মুসলিমরা বলতে কিন্তু মুসলিম-পুরুষেরা।

মুসলিমরা ধর্মীয় আইন চায়, তাই তাদের ধর্মীয় আইন দেওয়া উচিত। মুসলিম-পুরুষেরা মুসলিম মেয়েদের কোনও রকম স্বাধীনতা দিতে চায় না, সুতরাং না দেওয়াটাই ইসলাম-সম্মত। এভাবেই ভারতের বামপন্থি উদারপন্থিরা সংখ্যালঘু মুসলিমের পাশে দাঁড়ানোর নামে যুগের পর যুগ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছেন। আর তাঁরাই দাবি করেন তাঁরা মানবাধিকার আর নারীর সমানাধিকারের পক্ষে, তাঁরা প্রগতিশীলতার পক্ষে। ভারতে তিন তালাক আইন বাতিল হওয়াতে হিন্দু মৌলবাদীরা উল্লসিত, কিন্তু উদারপন্থিরা খুশি নন। নারী পুরুষের সমানাধিকারের ভিত্তিতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির জন্য দাবি তোলেন হিন্দুত্ববাদীরা, উদারপন্থিরা তোলেন না। অথচ, মানবাধিকারের এই দাবিটি উদারপন্থিদেরই দাবি হওয়া উচিত ছিল।

সব রকম স্বাধীনতা আর অধিকার থেকে বঞ্চিত মুসলিম মেয়েদের জন্য আজ হঠাৎ করে সমানাধিকারের আওয়াজ উঠেছে। শিক্ষিত দুজন মুসলিম পুরুষের দাবি, মসজিদে গিয়ে পুরুষের মতো মেয়েদেরও নামাজ পড়ার অধিকার চাই। এই দাবির ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট থেকে সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। এটি এখন ভারতীয় পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতার খবর। যেহেতু হিন্দুদের শবরিমালা মন্দিরে যেখানে মেয়েদের ঢোকা নিষেধ ছিল, সুপ্রিম কোর্ট সেই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দিয়েছে, একই রকম নিয়ম কেন মুসলিমদের মসজিদে থাকবে না? মসজিদেও মেয়েদের প্রবেশের অধিকার থাকা উচিত, যেরকম মন্দিরে বা গির্জায় প্রবেশের অধিকার হিন্দু এবং খ্রিস্টান মেয়েদের আছে।

তিন তালাক বাতিল হওয়ায় সারা ভারতে জয়ের পতাকা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, যেন মুসলিম মেয়েরা তাদের সমানাধিকার পেয়ে গেছে। মানুষের এতটাই কম জ্ঞান মুসলিম আইনে নারী পুরুষের বৈষম্য নিয়ে। সমানাধিকারের কিছুই মেয়েরা পায়নি আজও। আমার প্রশ্ন, কী লাভ হবে মেয়েরা যদি মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার অধিকার পায়? তারা আল্লাহর কাছে মোনাজাত করবে। একই সঙ্গে সারি বেঁধে মেয়ে-মহিলারা রুকু সেজদা করবে। এই অধিকার ছিল না, এখন পাবে অধিকার। তাদের তো আর পুরুষের সঙ্গে এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে দেওয়া হবে না। দেওয়ালের আড়ালে বা পর্দার আড়ালে পেছনের দিকে ছোট কোনও ঘর বা বারান্দা দেওয়া হবে মেয়েদের, নামাজ পড়ার জন্য। যে নামাজ তারা বাড়িতে পড়তো, তা এখন চাইলে মসজিদে পড়তে পারবে। ইসলামের নবী কিন্তু বলেছেন মেয়েদের বাড়িতে নামাজ পড়াটাই ভালো। নবীর উপদেশ তুচ্ছ করে ধর্মপ্রাণ মেয়েরা কেন নামাজ পড়তে চাইবে মসজিদে, তা আমার বোধগম্য নয়। অনেকেই বলছে মেয়েদের মসজিদে নামাজ পড়তে পারা মানে সমানাধিকার পাওয়া। মসজিদের ভিতর পুরুষের পাশে বা পুরুষের সামনে কিন্তু মেয়েদের কেউ দাঁড়াতে দেবে না, পুরুষের পেছনে দাঁড়াতে হবে তাদের। তা হলে এ কেমন সমানাধিকার মেয়েদের? মসজিদেও নির্ধারণ হয়ে যাবে কার স্থান কোথায়। পুরুষ সামনে, নারী পেছনে। সমানাধিকারের দাবি ধর্মের ভিতরে থেকে করা যায় না, ধর্ম থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। ধার্মিক মেয়েরা কি দাবি করতে পারবে বিয়ের, তালাকে, উত্তরাধিকারে সমান অধিকার?

কজন মুসলিম মেয়ে ইস্কুল কলেজ পাস করে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে? কজন মুসলিম মেয়ে আধুনিক মেয়েদের মতো চাকরি করে বা ব্যবসা করে? কজন মুসলিম মেয়ে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়? কজন মুসলিম মেয়ের বোরখা বা হিজাব না-পরার অধিকার আছে? কজন মুসলিম মেয়ে স্বনির্ভর, স্বাধীন? সংখ্যাটি নিশ্চয়ই খুব কম। এই সংখ্যাটি বাড়ছে, এর মানেই মুসলিম মেয়েরা সমানাধিকার পাচ্ছে।

মেয়েদের কাছ থেকে নামাজ পড়ার অধিকার কেউ কেড়ে নেয়নি। মেয়েরা যেহেতু বাড়িতে বাড়ির কাজ করে, তাই বাড়িতেই নামাজ পড়াটা তাদের জন্য সুবিধেজনক। পুরুষেরা যেহেতু বাইরে থাকে বেশির ভাগই, তাদের জন্য মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়াটা সুবিধের। মেয়েরা আসলে ধর্ম-কর্ম পুরুষদের চেয়ে বেশি করে। তাই মসজিদে মেয়েদের নামাজ পড়ার অধিকার না পাওয়ার জন্য মেয়েদের সর্বনাশ হচ্ছে না। মেয়েদের সর্বনাশ হচ্ছে শিক্ষা স্বাস্থ্য স্বনির্ভরতা না থাকায়। সর্বনাশ হচ্ছে ধর্মীয় আইনে মেয়েদের অধিকার কম থাকায় অথবা না-থাকায়, সর্বনাশ হচ্ছে বাল্যবিবাহে, নিজের ধর্ষকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে বাধ্য হওয়ায়, এমনকী শ্বশুর দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়ে শ্বশুরের বউ হতে বাধ্য হওয়ায়, সর্বনাশ হচ্ছে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা ইত্যাদি একশ রকম নারী-বিরোধী নির্দেশনায়। ভারতের বহরা মুসলিম মেয়েদের তো শিশু অবস্থায় যৌনাঙ্গও কেটে দেওয়া হয়, মেয়েরা যেন কোনও যৌন সুখ না পেতে পারে। ওদের গভীর বিশ্বাস, যৌন সুখ শুধু পুরুষের জন্য।

ভারতের উদারপন্থিরা কি কখনো মেয়েদের যৌনাঙ্গ কর্তনের বিরুদ্ধে কিছু বলেছে কোনও দিন, নাকি এই নির্যাতনকেই মুসলিম সংস্কৃতি বলে মেনে নিয়েছে? সংখ্যালঘুর যারা সত্যিকার উন্নতি চায়, তারা নিশ্চয়ই চাইবে সংখ্যালঘুরা শিক্ষিত হোক, স্বনির্ভর হোক, তারা বিজ্ঞান মনস্ক হোক, তারা কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, কট্টরপন্থা ত্যাগ করুক।

শবরিমালা মন্দিরে মেয়েদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দূর করার পক্ষে আমি বলিনি। কী করবে মেয়েরা সেই সব জায়গায়, যেখানে মেয়েদের অচ্ছুত মনে করাটাই রীতি? মেয়েদের কি এখনো সময় হয়নি ভগবান বা ঈশ্বর থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার? নারী-বিরোধী কোনও শক্তির সামনে কোনও শুভবুদ্ধির মানুষের, বিশেষ করে মেয়েদের মাথা নোয়ানো উচিত নয়।

উদারপন্থি নামধারীদের কথা বলছি। এত প্রতিক্রিয়াশীল হওয়ার পরও ওঁদের নাম আজ প্রগতিশীল। সত্যিকার প্রগতিশীল খুব কমই এই উপমহাদেশে। যারা মুসলিমবিরোধী, যারা মনে করে সব মুসলিমকে ভারত থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে, তারা একরকম প্রতিক্রিয়াশীল, আবার যারা মনে করে মুসলিমরা যদি ধর্মে ডুবে থাকতে চায় থাকুক, যদি শরিয়া আইন রাখতে চায় রাখুক, যদি মেয়েদের যৌনাঙ্গ কর্তন তাদের সংস্কৃতি হয়, সংস্কৃতি পালন করুক- তারাও আরেক ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল। প্রগতিশীল তারাই যারা হিন্দু কট্টরপন্থা, মুসলিম কট্টরপন্থা এবং যত ধর্মীয় কট্টরপন্থা-সব কট্টরপন্থাকে প্রতিহত করতে চায়। শুধু এক ধর্মের আইনকে নয়, এক ধর্মের নারীবিরোধ বা নারী-বিদ্বেষকে নয়, সব ধর্মের আইনকে, সব ধর্মের নারীবিরোধ এবং নারী-বিদ্বেষকে একই রকমভাবে দূর করতে হবে। সংখ্যালঘুর বর্বরতাকে আর নারী-বিদ্বেষকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে তা আখেরে সংখ্যালঘুর বিপক্ষেই যাবে।

সংখ্যাগরিষ্ঠদের বর্বরতাকে তাই বলে আমি বলছি না বরদাশত করতে। কোনও ধর্মের, কোনও লিঙ্গের, কোনও জাতির, কোনও উপজাতির, কোনও ভাষা গোষ্ঠীর বর্বরতা মেনে না নিলেই তো পৃথিবীর অর্ধেক সমস্যা ঘুচে যায়। বাকি অর্ধেক ঘোচাতে হবে শুদ্ধকে দিয়ে অশুদ্ধকে সরিয়ে, সুন্দরকে দিয়ে অসুন্দরকে সরিয়ে। (সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।

লেখিকা: ভারত নির্বাসিত

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD