বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:১১ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বরিশালের বাজারগুলো এখন জাটকা ইলিশে সয়লাব। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ‘চাপিলা’ নামে এসব জাটকা বিক্রি হচ্ছে। আড়াইশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকা কেজি দরে ক্রেতারাও জাটকা কিনছেন দেদারছে।
মৎস্য বিভাগ জানায়, ইলিশ সম্পদ রক্ষায় দেশের ইলিশের ছয় অভয়াশ্রমের মধ্যে পাঁচটিতে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। ১ মার্চ থেকে এই নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা চলবে। এর বাইরে দেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে প্রতিবছর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আট মাস জাটকা (১০ ইঞ্চির চেয়ে ছোট ইলিশ) ধরা, পরিবহন ও বিক্রি নিষিদ্ধ থাকে। বর্তমানে এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ আছে। তা থাকবে ৩০ জুন পর্যন্ত। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই পাঁচ অভয়াশ্রমে নতুন করে সব ধরনের ইলিশসহ মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে মৎস্য বিভাগ জেলা, উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। প্রতিনিয়ত আমরা বিভিন্ন বাজার মনিটরিং করে থাকি । যেখানেই জাটকা ইলিশ ধরা, পরিবহন ও বিক্রির সংবাদ পাই সেখানেই আমরা অভিযান পরিচালনা করার মাধ্যমে জেল জরিমানা করে থাকি।
সরেজমিনে দেখা গেছে,বরিশালের নথুল্লাবাদ বাজার, নতুন বাজারসহ চৌমাথা বাজারে বিক্রি হচ্ছে চাপিলা নামের এই জাটকা। প্রথম দেখাতে এসব জাটকাকে তরতাজা চাপিলাই মনে হয়। তবে একটু নেড়েচড়ে দেখলে বুঝা যায়, এগুলো চাপিলা নয়, জাটকা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নথুল্লাবাদ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী ফরকান মিয়া বলেন, ‘আসলে এগুলো ছোট ইলিশ। কিন্তু এত ছোট যে, তা বোঝার উপায় নাই। এছাড়া, এত ছোট ইলিশ কেউ নিতে চায় না। তাই চাপিলা নামে বিক্রি করছি। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। দামে সস্তা পেয়ে ক্রেতারা কিনছেও ভালো।’
চৌমাথা বাজারের মাছ বিক্রেতা কবির জানিয়েছেন, নদী থেকে এসব জাটকা জেলেরা ধরে এনে তা আড়তে বিক্রি করছেন, এরপর পাইকারি বাজার হয়ে খুচরা বাজারে আনা হচ্ছে। কিন্তু নদীতে এই মাছ ধরা বা শিকার করা থেকে জেলেদের যদি বিরত রাখা যেত, তাহলে এই ইলিশ সম্পদ ধ্বংস হতো না। সাইফুল হক বলেন, ‘নদীতে পাহারা না দিয়ে বাজারে অভিযান চালিয়ে ইলিশ রক্ষা করা যাবে না।’
জানা গেছে, একশ্রেণির মুনাফালোভী মাছ ব্যবসায়ী বাজারে অবাধে বিক্রি করছে এই ছোট জাটকা। প্রশাসনের কোনও ধরনের নজরদারি না থাকায় ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়ে জাটকা বিক্রি অব্যাহত রেখেছেন।
বরিশালের পোর্ট রোড আড়তের মাছ ব্যবসায়ী লোকমান জানান, অন্য মাছের চেয়ে জাটকা বিক্রি একটু লাভজনক। মাছ ধরার ট্রলারগুলো কারেন্ট জাল ব্যবহার করে জাটকা ধরছে। এতে ভবিষ্যতে নদীগুলোতে বড় আকারের ইলিশের অভাব দেখা দেবে।
সাগর, নদী ও সব জলাশয় থেকে জাটকা ধরা, বেচাকেনা মজুত রাখা ও পরিবহন করা আইনত দণ্ডনীয় হলেও মাছের বাজারগুলোতে আইন মানছে না কেউই। বরিশালের বাজারের পাশাপাশি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারগুলোতেও দেদারছে জাটকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।
Leave a Reply