বরিশালে ১০ বছরে জাতীয়করন হয়নি উত্তর বিল্লগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় Latest Update News of Bangladesh

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




বরিশালে ১০ বছরে জাতীয়করন হয়নি উত্তর বিল্লগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়

বরিশালে ১০ বছরে জাতীয়করন হয়নি উত্তর বিল্লগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়




মোঃ মাসুদ সরদার , গৌরনদী প্রতিনিধি: বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় করনে সরকারের ঘোষিত কর্মসূচীর আওতায় ২০১৩ সালে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ৩৩টি বেসরকারী রেজিষ্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয় করন করা হলেও গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়ন উত্তর বিল্লগ্রাম রেজিষ্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গত ১০ বছরের জাতীয় করন করা হয়নি।

 

বিদ্যালয়ের চার শিক্ষক বিনা বেতনে শিক্ষকতা করায় তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতন জীবন যাপন করেছে। জাতীয়করনে সকল সরকারি শর্ত পুরন ও স্থানীয় সাংসদ সদস্যের একাধিক ডিউ লেটার দেয়ার পরেও অনৈতিক দাবি পুরন না করায় জাতীয় করনের মুখ দেখেনি স্কুলটি। শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয়দের দাবি অনতিবিলম্বে স্কুলটি জাতীয়করন করা হোক।

 

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, শিক্ষক, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার প্রত্যন্ত ও হতদরিদ্র পল্লি এলাকা উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের উত্তর বিল্লগ্রাম গ্রামের শিশুরা দীর্ঘদিন শিক্ষা বঞ্চিত ছিল। আশপাশ এলাকার ২ কিলোমিটারের মধ্যে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় এখানকার অভিভাবক ও শিশুরা লেখাপড়ার প্রতি ছিল অনুৎসাহিত।

 

শিশুদের লেখাপড়ার করার চিন্তা করে আলোকিত গ্রাম গড়ার প্রত্যয়ে এলাকার কতিপয় ব্যক্তি উত্তর বিল্লগ্রাম এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন।

উত্তর বিল্লগ্রাম গ্রামের মো. হামেদ বেপারী জানান, তারা একটি রেজিষ্টার প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ২০০৮ সালের নভেমবর মাসে গ্রামবাসিদের নিয়ে একটি পরামর্শ সভা করেন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্টার সিদ্বান্ত নেন। ওই বছর তিনিসহ গ্রামের মো. ওয়াজেদ আলী বেপারী, আব্দুর রশিদ, মৃত আব্দুল মজিদ বেপারী, মোমেনা বেগম, হাজেরা বেগম ও রিজিয়া বেগম বিদ্যালয়ের নামে ৩৩ শতাংশ জমি দান করেন। জমিতে এলাকাবাসির আর্থিক সহায়তায় ৭০ ফুট লম্বা ও ১৫ ফুট প্রস্থ একটি কাঠ ও টিনের ঘর নির্মান করা হয়।

 

২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে স্থানীয় মনিরা আক্তার, নার্গিস আক্তার, মরিয়ম বেগম ও তাসলিম সিকদারকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ৫৬ জন শিশু ভর্তি ও পাঠদানের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে উত্তর বিল্লাগ্রাম বেসরকারি রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি বর্তমানে ১৬০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ২০১১ সালে থেকে স্কুলটি শিক্ষার্থীরা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি পান । শুরু থেকে বিদ্যালয়ের সাফল্যজনক ফলাফলসহ শতভাগ পাশ করে আসছে। ২০১৭- ২০১৮ অর্র্থ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যায়ে একটি তিনতলা ভবন নির্মান করেন।

বিদ্যালয়ের কাগজপত্রে দেখা গেছে, ২০১২ সালের ৭ অক্টোবর বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মুঃ শাহ আলম বিদ্যালয়ের অনুমতির সুপারিশসহ চেকলিষ্ট উপ পরিচালক বরাবরে প্রেরন করেন। উপ-পরিচালক এস. এম. ফারুক ওই বছর ১১ নভেম্বর তৎকালীন সময়ে বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রনালয় সম্পর্কীত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তালুকদার মো. ইউনুসের ডিউ লেটারসহ বিদ্যালয়টি অনুমোদনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পত্র প্রেরন করেন। তার পরেও বিদ্যালয়টি জাতীয় করন করা হয়নি।

 

২০১৬ সালের ১৮ জানুয়ারি বরিশাল-১ আসনের সাংসদ ও স্থানীয় সরকার পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় সম্পর্কীত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর কাছে বিদ্যালয়টি জাতীয় করনের সুপারিশ করে চিঠি পাঠান চিঠিতে সাংসদ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ উল্লেখ্য করেন, সরকার ২৬,১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করন করা হলেও এ বিদ্যালয়টি জাতীয়করনে অর্ন্তভূক্ত করা হয়নি। তাই বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় জাতীয়করনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সচিব প্রাথমিক ও গনশিক্ষা বরাবরে আবেদন করেছেন । বর্নিত অবস্থায় আমার নির্বাচনী এলাকার গৌরনদীর উত্তর বিল্লগ্রাম বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জাতীয় করন করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের অনুরোধ জানাচ্ছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সংশ্লিস্ট কর্মকর্তাদের অনৈতিক দাবি পুরন করতে না পারায় জাতীয় করনের সকল শর্ত পুরন সত্বেও বিদ্যালয়টি জাতীয় করনে পদক্ষেপ গ্রহন করেননি উর্ধতন কর্মকর্তারা। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি, মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কালীয়া দমন গুহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত ১০ বছর ধরে বিদ্যালয়টি জাতীয় করনের জন্য উপজেলা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সচিবালয় ও মন্ত্রনালয়ের দৌড়ঝাপ করতে করতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।

 

সকল শর্ত পুরন করা সত্বেও অদৃশ্য কারনে বিদ্যালয়টি জাতীয় করন করা হয়নি। এ অসনের নির্বাচিত দুইজন সাংসদ একাধিকবার ডিউলেটারসহ সুপারিশ করলেও তা বাস্তবায়নে কোন রকম আন্তরিকা নেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। প্রধান শিক্ষক মনিরা আক্তার বলেন, আমরা ১০ বছর ধরে বিনা পয়সার শিক্ষকতা করছি। আমাদেরও পেট আছে, সংসার আছে। বর্তমানে আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি। অতি দ্রæত বিদ্যালয়টি জাতীয়করনের জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপসহ সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই।এ প্রসঙ্গে গৌরনদী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. ফয়সল জামিল বলেন, হয়তো কাগজপত্রে কোন দূর্বলতার কারনে জাতীয়করন হয়নি।

 

তাছাড়া শিক্ষকরা আমার কাছে কাগজপত্র নিয়ে অসেনি। কাগজপত্র দেখলে হয়তো বুঝতাম কেন জাতীয়করন হচ্ছে না। বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ মজুমদার ও বরিশাল উপ-পরিচালক এস, এম, ফারুক জানান, আমরা একাধিকবার বিদ্যালয়টির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। আমাদের হাতে কিছু নেই।

জাতীয়করনে বাধা কোথায় উর্ধতন কর্মকর্তারাই তা বলতে পারবেন। এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গনশিক্ষার মহাপরিচালক এ.এফ.এম, মঞ্জুর কাদিরের কাছে এখাধিকবার ফোন করলে তিনি তা রিসিপ করেননি।

 

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD