শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:০৫ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: অবৈধ সম্পর্কের অপবাদ দিয়ে রাতের আধারে ঘরে ঢুকে এক গৃহবধূর শ্লিলতাহানী ও তার স্বামীর ওপর হামলা করেছে ইউনিয়ন পরিষদের দুই মেম্বার এবং তাদের লোকেরা। এসময় ঘরে থাকা নগদ অর্থ ও গৃহবধূর শরীর থেকে স্বর্ণালংকার লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত সদর উপজেলার জাগুয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে এই ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে গতকাল বুধবার সকালে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তাছাড়া এই ঘটনায় দুই মেম্বার সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। তবে গৃহবধূকে শ্লিলতাহানী, মারধার বা লুটপাটের সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেম্বাররা।
শ্লিলতাহানির শিকার গৃহবধূ উজিরপুর উপজেলার ভরসাকাঠি গ্রামের বাসিন্দা সুমি আক্তার (৩০) জানান, জাগুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা দুলাল সম্পর্কে তাদের বেয়াই হয়। তার স্ত্রী মাতৃত্বজনিত করনে অসুস্থ থাকায় তাকে সেবা-যন্ত্র করার জন্য ২০/২৫ দিন পূর্বে ওই বাড়িতে যান সুমি আক্তার।
তিনি বলেন, আমার স্বামী দবির শেখ। পেশায় তিনি একজন ট্রাক চালক। যে কারনে মাঝে মধ্যে তিনিও এই বাড়িতে এসে থাকেন। বেয়াইয়ের ঘরে আমাদের দু’জনের এক সাথে থাকাকে অবৈধভাবে দাবী করে জাগুয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার রেজাউল ইসলাম স্বপন। সে সহ তার সহযোগিরা অভিযোগ তোলে আমরা স্বামী-স্ত্রী নই।
তিনি বলেন, সোমবার আমার স্বামী বাড়িতে আসে। তাছাড়া স্ত্রী’র অসুস্থতার কারনে বেয়াই দুলালও বাড়িতে ছিলো না। তাই বুধবার রাতে আমি ও আমার স্বামী দু’জন বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে জাগুয়া ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম স্বপন ও তার সহযোগী সেলিম এসে দরজা ধাক্কা দিয়ে বেয়াই দুলালকে ডাকাডাকী করে। দরজা খুলতে দেরি হওয়ায় তারা দরজায় লাথি দেয়।
গৃহবধূ অভিযোগ করেন, দরজা খোলা মাত্রই মেম্বার ও তার সহযোগী সেলিম আমার স্বামীকে মারধর শুরু করে। ওরা তাকে মারতে মারতে ঘরের মধ্যে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষন পরেই রেজাউল ইসলাম স্বপন মেম্বারের সাথে যোগদেয় ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার জাকির হোসেন ও তার সহযোগী মজিবর সহ কয়েকজন। তারা আমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে অবৈধ সম্পর্ক দাবী করে। এর প্রতিবাদ করতে গেলে স্বপন মেম্বার আমার গালে থাপ্পর মারে। পরে ওরা আমাদের জিম্মি করে গলার চেইন, কানের দুল, এমনকি নাকফুলটা পর্যন্ত খুলে নেয়।
শুধু তাই নয়, আমার শরীরের লজ্জাস্থানে লুকিয়ে রাখা ২০ হাজার টাকা জোর করে বের করে নেয় মেম্বার ও তাদের লোকেরা। পরে আমাদের ডাক চিৎকার শুনে প্রতিবেশিরা ছুটে আসলে দুই মেম্বার ও তাদের লোকেরা পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় বুধবার সকালে কোতয়ালী থানায় দুই মেম্বার সহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়েরের জন্য একটি অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন গৃহবধূ সুমি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জাগুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) রেজাউল ইসলাম স্বপন বলেন, প্রায় দুই মাস ধরে ওই মহিলা ও পুরুষ দুলালের বাড়িতে বসবাস করে আসছে। স্থানীয়রা আমাদের কাছে অভিযোগ করে যে ওই দু’জনের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। তাই তাদের হাতেনাতে ধরার জন্যই বুধবার রাতে ওই বাড়িতে গিয়েছি। কিন্তু শ্লিলতাহানী, মারধর বা লুটপাটের যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ভিত্তিহিন। আমরা চেয়েছিলাম ওদের পুলিশে ধরিয়ে দিতে। সেটা না করে তাদের ছেড়ে দেয়াটাই আমাদের ভুল ছিলো।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা কোতয়ালী মডেল থানার পিএসআই আশুতোষ সরদার বলেন, সুমি’র ফরিদপুরে বিয়ে হয়েছিলো। সেখানে ১৮ বছর সংসার করে। কিন্তু সন্তান না হওয়ায় তাকে তার প্রথম স্বামী ছেড়ে দেয়। পরে ফেসবুকের মাধ্যমে ফরিদপুরের ট্রাক চালক দবির শেখ এর সাথে পরিচয় এবং পরবর্তীতে বিয়ে হয়। কিন্তু দুই মেম্বার ও তাদের লোকেরা ভেবেছিলো তাদের দু’জনের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। এজন্যই তারা রাতে ওই বাড়িতে গিয়েছিলো। এসময় তাদের মধ্যে একটু হাতাহাতি হয়েছে। তবে শ্লিলতাহানি এবং লুটপাটের অভিযোগের আলামত পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, এই ঘটনায় গৃহবধূ সুমি থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। তাদের উভয় পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছে। তাছাড়া গৃহবধূ এই ঘটনায় মামলা করতে চাইলে তা গ্রহন করা হবে বলে জানিয়েছেন পিএসআই আশুতোষ সরদার।
Leave a Reply