মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:০২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পরে হত্যা করে গলায় ওড়না বেধে লাশ ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে। গত ২৪ মে শুক্রবার নগরীর কাউনিয়া কালাখার বাড়িতে এই ঘটনা ঘটলেও রোববার (২৬ মে) দুপুরে বিষয়টি প্রকাশ পায়। এর আগে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বন্ধ ঘরে জানালার পাশে ঝুলন্ত অবস্থায় শিশু শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এর পর নানা নাটকিয়তা শেষে রোববার দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে লাশ দাফন করা হয়েছে।
নিহত শিশু শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার (১০)। সে কালাখাল বাড়ি’র নূর খলিফার ভাড়াটিয়া দিন মজুর আলমগীর হোসেনের মেয়ে এবং কাউনিয়া আভাস আনন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। মেয়ের মা মরিয়ম বেগম এর অভিযোগ তার মেয়েকে ধার্ষণের পরে হত্যা করে লাশ জানালার পাশে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
আর এর পেছনে প্রতিবেশী ভাড়াটিয়ায় জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ তার। অবশ্য কারো কারো সন্দেহের তীর শিশুর বাবার দিকে। নিহতের মা মরিয়ম বেগম জানান, শুক্রবার সকালে মেয়ে ও শিশু পুত্রকে সাথে নিয়ে পাশর্^বর্তী বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজে যান। একই সময় শিশুর বাবা আলমগীরও কাজে বের হয়ে যায়।
কিছু সময় পরেই ফারজানা ঘরে ফিরে আসে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মরিয়ম ঘরে গিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ দেখতে পান। মরিয়ম বলেন, জানালা থেকে ভেতরে প্রবেশ করতেই জানালার পাশে একটি চিকন বাশেঁর সাথে মেয়েকে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় ঝুলে থাকতে দেখেন। এসময় সালোয়ারের পেছনে কিছু অংশ ছেড়া ও মুখ থেকে ফ্যানা বের হতে দেখা যায়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ফারজানাকে উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
নিহতের মায়ের অভিযোগ প্রতিবেশী আব্দুস ছালাম তার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। কেননা ঘটনার সময় একমাত্র তিনিই ওই বাড়িতে ছিলেন। বাকিরা সবাই বাইরে ছিলো। তাছাড়া প্রতিবেশির ঘর এতটাই নিকটে যে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকলে তার ঘোঙ্গানীর শব্দ প্রতিবেশির পাওয়ার কথা। তাছাড়া ছালামের ঘরের পেছনের অংশ থেকে আলমগীরের ঘরে প্রবেশের সুক্ষ্ম পথ রয়েছে বলেও দাবী মরিয়মের। তিনি বলেন, ইতিপূর্বে প্রতিবেশী ছালাম এর সাথে ঝগড়া-বিবাধ রয়েছে। তিনি আমাকে, আমার স্বামী ও সন্তানদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকিও দিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, যেদিন ফারজানার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় তখন ছালাম ঘরে থাকা সত্যেও সাহাজ্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। বরং তিনি প্রতিবেশি নারীদের মাধ্যমে এটি আত্মহত্যা নয় বরং স্বাভাবিক মৃত্যু বলতে শিখিয়ে দেয়। এদিকে ঘটনাটিকে রহস্যজনক বলে দাবী করেছেন প্রতিবেশীরা।
কেননা ঘটনার দিন মেয়ের বাবা আলমগীর সবাইকে জানায় যে পছন্দের ঈদের পোশাক কিনে না দেয়ার অপরাধে তার মেয়ে ফারজানা নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
আবার তিনিই হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে পালিয়ে আসেন। তাছাড়া প্রথম দিন আত্মহত্যা বললেও পরবর্তীতে এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে অভিযোগ তোলেন। তার এলোমেলো বক্তব্য ও আচারভঙ্গী মেয়ে হত্যায় অভিযোগের তীর বাবার দিকেই ছুড়ছেন প্রতিবেশিরা। প্রতিবেশিরা বলেন, ঘটনার পরে মেয়ের মৃতদেহ ময়না তদন্ত করতে রাজি ছিলো না তার বাবা-মা। তাদের এই ইচ্ছার সাথে সহমত ছিলেন বিসিসি’র ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ্যাডভোকেট একেএম মুরতজা আবেদিন। তারা সঙ্গবদ্ধভাবেই ঘটনাটি ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা করেন।
যদিও নিহতের মামা শাহ আলম বলেন, কাউন্সিলর ময়না তদন্তে বাঁধা দেননি। বরং যাতে দ্রুত লাশ দাফন ও আইনী জটিলতা দুর করা যায় সে বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন। বরিশাল মেট্রোপলিটন কাউনিয়া থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনাটি প্রথমে আত্মহত্যা বলে দাবী করা হলেও ধর্ষণ ও হত্যা বলে অভিযোগ ওঠে।
তবে সুরতহালে তেমন কোন আলামত মেলেনি। তাই মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ময়না তদন্ত করা হয়েছে। ময়না তদন্তের প্রতিবেদনই বলে দিবে এটি শ্বাসরোধে, বিষপান, ধর্ষণ নাকি অন্য কিছু। যদিও এই ঘটনায় মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন নিহতের বাবা আলমগীর হোসেন।
Leave a Reply