শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৫ অপরাহ্ন
কুয়াকাটা প্রতিনিধি॥ টানা ১০০ দিন পরে ফের কুয়াকাটা পর্যটক দর্শনার্থীর পদভারে মুখরিত হয়ে উঠবে। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে সূর্যোদয়-সুর্যাস্তের বিরল দৃশ্য অবলোকনের সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায়। করোনাকালের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন পহেলা জুলাই থেকে হোটেল-মোটেল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সরকারিভাবে আগেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে সারা দেশে সকল ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হয়েছে। কোথাও কোথাও এখনও চালু হচ্ছে। কিন্তু কুয়াকাটায় ২৩ মার্চ থেকে পুরো তিন মাসেরও বেশি সময় হোটেল-মোটেলসহ সকল দোকানপাট লকডাউনে রয়েছে। ইতোমধ্যে হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন করোনাকালে স্বাস্থ্য বিধি মেনে হোটেল-মোটেল ব্যবস্থাপনা বিষয়ক তিনদিনের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। পর্যটক ব্যবস্থাপনা যেন করোনা প্রতিরোধক হয় কর্মীদেরকে তা রপ্ত করানো হয়েছে।
যেখানে হোটেল বাইরের এবং ভিতরের এলাকা জীবানুমুক্ত করন। হোটেল গাড়ি পার্কিং অঞ্চলসহ যানবাহন জীবানুমুক্তকরন। সিকিউরিটিদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিতকরন। দর্শনার্থীদের অনুপ্রবেশ পয়েন্টে এবং সহায়ক কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরন। দর্শনার্থীদের জন্য জীবানুমুক্ত চেম্বার ও হাত, মুখ ধোয়ার জন্য বেসিন সাবান ব্যবহারের সুযোগ থাকা। ফ্রন্ট ডেক্সসহ লাগেজ জীবানুমুক্ত করন।
প্রত্যেক দর্শনার্থীকে ইনফ্রারেড থারমাল স্ক্যানার স্ক্যানিং প্রক্রিয়া দ্বারা সুরক্ষা করা। মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস নিশ্চিতকরন। চেকিংপুর্ব নিবন্ধিত দর্শনার্থীর তাপমাত্রা লিপিবদ্ধ করা। হোাটেল ব্যবস্থাপককে অবশ্যই ডেক্স, লভি, আসবাবপত্র, সাধারন স্থান, করিডোর, সিড়ি, রেলিং, দরজা, এবং হ্যান্ডেল, সমস্ত টয়লেট স্যানেটাইজার নিশ্চিত করতে হবে। বয়, আয়া, কর্মচারীদের টয়লেট আলাদা থাকতে হবে। এভাবে সকল ধরনের স্বাস্থ্য বিধি মেনেই হোটেল-মোটেল প্রস্তুতের কাজ চলছে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, একজন পর্যটক গাড়ীসহ আসলে প্রথমে নির্দিষ্ট পোষাকে সজ্জিত হোটেল কর্মীরা গেস্টকে গাড়ীসহ মালামাল, শরীর, জীবানুনাশক স্প্রে করে নিবে। হাত-পা ওয়াশ করানোর ব্যবস্থা করে স্যানেটাইজার ব্যবহার করে হোটেল অভ্যন্তরে আলাদা স্যান্ডেল পর্যন্ত থাকছে। তার কক্ষ আগে থেকেই স্বাস্থ্য বিধি অনুসারে ব্যবহার উপযোগী করা হবে। নির্দিষ্ট ব্যক্তি কিংবা ব্যক্তিগণ একই কক্ষে অবস্থান করবেন।
এছাড়া পর্যটন এলাকার ভ্যান, অটো, মোটরসাইকেলসহ যানবাহন ব্যবহারের আগে বার জীবানুনাশক স্প্রে করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। যানবাহনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করবে। বীচে বেঞ্চিতে অবস্থানকালেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এমনসব সকল বিষয় ইতোমধ্যে হোটেল ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে জড়িত পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। করোনাকালীন হোটেল মোটেল ব্যবস্থাপনার ওপর করোনাকালীন স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর এসওপি এই প্রশিক্ষণ সম্পন্নের ফলে কুয়াকাটায় পর্যটক-দর্শনার্থীরা নিরাপদে ভ্রমন করতে পারবে বলে হোটেল-মোটেল এসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষের দাবি।
তারা জানান, পর্যায়ক্রমে তারা খাবার হোটেল মালিক কর্মচারী, এবং ভ্যান-অটো, মোটরসাইকেল চালকদের নিয়েও তারা করোনাকালীন প্রতিরোধক ব্যাপক সভা সেমিনার করেছেন। করোনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিশ্চিত করেই কুয়াকাটায় পর্যটকের জন্য পহেলা জুলাই থেকে হোটেল-মোটেল খুলে দেয়ার উদ্যোগ নেন ওনার্স এসোসিয়েশন। আর এখবরে দীর্ঘ বন্ধের পরে লোকসানের ঘানি টানতে টানতে ফের ব্যবসা পসরা সাজানোর জন্য হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষ নিচ্ছেন প্রস্তুতি। কুয়াকাটায় প্রায় ১২০টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। যার মধ্যে ৭০ টি এই এসোসিয়েশনভুক্ত রয়েছে। এরা সবাই দাবি করেন করোনাকালীন লোকসান কখনও আর পোষাতে পারবেন না।
কিন্তু ফের যেন করোনা প্রতিরোধে সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-মোটেল চালু করতে পারেন এমন প্রস্তুতি চলছে। এনিয়ে কুয়াকাটার ব্যবসায়ীমহলে প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। সৃষ্টি হয়েছে আশার আলো। কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানান, এমনিতেই ক্যাবিনেট মন্ত্রনালয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার নির্দেশণা আগেই দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন তাঁদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
এতোদিন বন্ধ রেখেছেন এজন্য তাঁদের ধন্যবাদ দিয়েছেন। পহেলা জুলাই থেকে ব্যবসা ফের শুরু করবেন, এটি ভালো দিক বলেও মন্তব্য করেন। অপরদিকে কুয়াকাটায় বাণিজ্যিক ফটোগ্রাফার রয়েছে অন্তত ২০০ এদের অধিকাংশের অভিযোগ, একটি প্রভাবশালীমহল তাঁদের কাছ থেকে এখনই পাঁচ-দশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে। কুয়াকাটায় আসা পর্যটক দর্শনার্থীর ছবি তুলে জীবন-জীবিকা চালানো এই মানুষগুলো কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল ব্যবস্থাপনা করতে হবে। আর কুয়াকাটায় কোন ধরনের চাঁদাবাজি চললে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply