শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৩ পূর্বাহ্ন
পীর হাবিবুর রহমান॥
একদিকে করোনার মৃত্যুর মিছিল আরেকদিকে এই দুঃসময়ে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় ফিলিস্তিনি শিশুর লাশ ও মানুষ হত্যার বর্বরতায় এবারের ঈদ শোকে পরিণত হয়েছে। আনন্দ নির্বাসিত হয়েছে। ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে ভেসে আসা নারী ও অসহায় শিশুদের আর্তনাদ পৃথিবীর বাতাস ভারি করেছে। পশ্চিমা শক্তি নির্লজ্জ ভূমিকা পালন করলেও প্রতিবাদে বিশ্ব উত্তাল হয়েছে।
একটি বছর ধরে কাঁদছে পৃথিবী। একটি বছর ধরে দুনিয়ার মানুষ বড় বিষণ্ন অস্থির উদ্বিগ্ন। মন আর ভালো হয়নি। কোথাও আনন্দ নেই। উৎসব নেই। করোনার মহাপ্রলয়ে পৃথিবী বদলে গেছে। জনপদে জনপদে মানুষ মরছে।
মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। শুরুতে পশ্চিমে যে মৃত্যুর বিভীষিকাময় পরিস্থিতি দেখতে হয়েছে সেটি আজ পাশের দেশ ভারতে। ভয় আতঙ্ক আমাদের গ্রাস করেছে। এর মধ্যে টিকাও শেষ। যদিও সরকার বিকল্প ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে। দেশেই উৎপাদিত হবে এখন চীনা টিকা। এবার মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর গেল। ঘরে ঘরে ঘরবন্দী মানুষের আনন্দহীন ঈদ। পরিবারের সবাই একসঙ্গে সুস্থভাবে খাবার টেবিলে বসা মানেই ছিল নিরানন্দের এই দুঃসময়ে ঈদের মহা আনন্দ। কতজন ছুটছে হাসপাতালে।
কতজন হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। কতজন প্রিয়জনকে নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রাত জেগেছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে ঈদের জামাতে মুসল্লিরা করোনা থেকে মুক্তির জন্য ফরিয়াদ জানিয়েছে। ঈদে সর্বাত্মক লকডাউন ছিল। মানুষ মানেনি। নাড়ির টানে গ্রামের বাড়ির পথে ছুটেছে লাখ লাখ মানুষ। দূরপাল্লার বাস চলবে না, ফেরি চলবে না, লঞ্চ চলবে না, ট্রেন ছুটবে না জেনেও তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটেছে। ফেরিতে পদদলিত হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যুই ঘটেনি, নৌদুর্ঘটনায়ও প্রাণ ঝরেছে। সরকার লকডাউন না দিলে বলা হয় কঠোর লকডাউন, কারফিউ দরকার। আবার সরকার লকডাউন দিলে বলা হয় দূরপাল্লার বাস ছাড়তে। পরস্পরবিরোধী কথাবার্তায় সমাধান হয় না। লকডাউন সরকার আবার বাড়িয়েছে। হয়তো আরও বাড়বে। যারা ঈদে বাড়ি গিয়েছিলেন তাদের ১৪ দিন পর ফিরতে বলা হয়েছে।
জাতিগতভাবে আমরা সাহসী, আবেগপ্রবণ। কিন্তু এতটা বেপরোয়া করোনাকালে হলে চলে কীভাবে? লকডাউন মানতে তো হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে তো হবেই। মাস্ক পরতে হবেই। সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করতে হবে। নিরাপদ দূরত্ব কর্মক্ষেত্র থেকে সবখানে রাখতে হবে। করোনার মহাপ্রলয় কখন কার জীবন নিভিয়ে দেয় জানি না। এরই মধ্যে আমাদের আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েছিল। ভারতীয় ভয়ংকর ধরনের করোনা রোগীও দেশে শনাক্ত হয়েছে। গোটা ভারতকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে করোনা। চিতার আগুন সেখানে নেভে না। লাশ ভেসে যায় পদ্মার জলে। কি মর্মান্তিক জীবনের পরিণতি। এমন আঘাত আমরা দেখতে চাই না। এমন ভয়ংকর অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি হতে চাই না।
লকডাউনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমেছে। ঈদ গেল মাত্র। বাড়ি যাওয়া মানুষেরা ফিরে এলে বোঝা যাবে কী অবস্থা দাঁড়ায়। গরিবের করোনা নেই যারা জোর গলায় বলেন তাদের বড় অংশ করোনার জীবন বহন করেন। সংক্রমিত করেন তার চেয়ে কম প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষদের। গ্রামের কৃষক, শ্রমিক, বস্তির শ্রমজীবী মানুষ অপুষ্টিতে ভোগেন, কিন্তু সারা দিন তারা রোদে পোড়েন, বৃষ্টিতে ভেজেন। ভিটামিন ডি শরীরে প্রচুর থাকায় করোনা তাদের ধরতে পারে না। না হলে এলাহি অবস্থা হয়ে যেত। আমাদের করোনাকালে এখন একদিকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও মাস্ক পরার জন্য ব্যাপক প্রচার দরকার। সর্বাত্মক প্রচার। আকর্ষণীয় প্রচার। দরকার মাস্ক পরতে বাধ্য করার জন্য আর্থিক জরিমানার মতো শাস্তি। মানুষের জীবনের চেয়ে অমূল্য সম্পদ আর নেই। জীবন বাঁচাতে প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করতে হবে। অন্যদিকে সারা দেশের মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। টিকা শেষ। এটা উদ্বেগের বিষয়। প্রথম ডোজই নেওয়া হয়নি, দ্বিতীয় ডোজ শেষ। এ ধকল কাটিয়ে উঠতে হবে। এ চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। সবাইকে সতর্ক হতে হবে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট যেন আমাদের এখানে ছড়াতে না পারে। ছড়ালে গ্রামের পর গ্রাম মানুষ আক্রান্ত হবে। অক্সিজেনের হাহাকার কদিন আগেই দেখেছি। হাসপাতালের আইসিইউ বেডের জন্য কি হাহাকার! একটি হাসপাতাল থেকে আরেকটি হাসপাতালে মানুষকে প্রাণের ভয়ে ছুটতে দেখেছি। অক্সিজেন, আইসিইউ বেড আরও বাড়াতে হবে। জেলা পর্যায়ে আইসিইউ ইউনিট করতে হবে বর্ধিত কলেবরে। আমাদের বিষণ্ন পৃথিবীর বুকে এখন করোনার বিরুদ্ধে অবিরাম যুদ্ধ চলছে। কবে এ যুদ্ধ শেষ হবে জানি না। মৃত্যুর ওপর থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আমেরিকা বলছে ভ্যাকসিন নেওয়া শেষ হলেই মাস্ক পরবে না তারা।
২. করোনা আমাদের জীবন-জীবিকার ওপর আঘাত এনেছে। আমরা হুঁশ-বুদ্ধি হারিয়েছিলাম। বিলাসিতায় গা ভাসিয়েছিলাম। ভুলে গিয়েছিলাম আমাদের সাদামাটা অতীত আছে। সাদাকালো যুগের মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তরাও অন্ধ হতে শুরু করেছিলাম, সেখান থেকে বের হয়ে নামিদামি ব্র্যান্ডের মোহে আটকা পড়েছিলাম। একটা ঘড়িতে একসময় হতো; সেখানে নানা ব্র্যান্ডের কয়েকটা চাই। দামি একাধিক চশমা চাই। শাড়ি, গহনা, জুতা, শার্ট, স্যুট, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আমরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলাম। বিয়েশাদির কেনাকাটা মুম্বাই-কলকাতা ছাড়া হতোই না। করোনা আমাদের ঝাঁকুনি কি দিতে পেরেছে? এতটা না হলেও সহজ সরল নিরাভরণ সাদামাটা জীবন কত সুন্দর? এত জুতা, ঘড়ি, গহনা, শাড়ি, প্যান্ট, স্যুট, শার্ট, পোশাক না হলে জীবন সুন্দরভাবে চলে? লোভ-লালসা, ঘুষ-দুর্নীতি, প্রতারণা, হিংসা-বিদ্বেষ, প্রতিহিংসা ঘৃণা আমাদের দখলে নিয়েছিল, কেবল প্রেম-ভালোবাসা, মায়া -মমতাহীন এক জীবনের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল। করোনার এক বছরে বিদেশ ভ্রমণ, বিলাসী সামগ্রী কেনা, বিদেশে বিয়ের কেনাকাটা, ধুমধাম ব্যয়বহুল উৎসব থেকে আমাদের লাগাম টেনে আটকেছে। করোনা গেলে কি আমরা আবার সব ভুলে বেপরোয়া হব? আবার আমরা লাগামহীন হব? করোনাকালে বিয়েশাদিও ছোট পরিসরে হয়েছে, কই অসুবিধা হয়নি তো? বাইরে কেনাকাটায় যেতে হয়নি বলে বর-কনে আর তাদের পরিবারকে কোনো অসুবিধায়ও পড়তে হয়নি। তাহলে? করোনার শিক্ষাই হলো সহজ সরল সাদামাটা জীবনযাপন। আগের মতো বাড়ির আঙিনায় সবজি ও ফলদ বৃক্ষ রোপণ। আমাদের জীবনকে ঐতিহ্যের ধারায় প্রত্যাবর্তন করিয়ে হাল ফ্যাশনের আধুনিকতা থেকে বের হওয়া। আধুনিকতা পোশাকে নয়, চিন্তায়-কর্মে। সেখানেই ফিরতে হবে। জীবনকে ব্যয়বহুল হিসাবের খাতা থেকে বের করে আনতে হবে। করোনা সহজে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে না। করোনার সঙ্গে মানিয়ে লড়াই করে আমাদের জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। লকডাউন সরকার কখনো দীর্ঘমেয়াদি করবে না। আমরা পশ্চিমা উন্নত রাষ্ট্র নই। উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশ করা একটি দেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভারত পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় মাথা তুলে বিশ্ববাসীর নজর মাত্র কেড়েছিলাম। প্রশংসা চারদিকজুড়ে ছিল উচ্ছ্বসিত। অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের আঘাত এনেছে করোনা। প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১১ থেকে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে গেছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে এ বছর প্রবৃদ্ধি হবে ৩ শতাংশ, যদিও সরকার বলছে ৬ শতাংশের বেশিই থাকবে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ভয়াবহ মন্দা দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। কর্মসংস্থানে স্থবিরতাই দেখা দেয়নি, কাজ হারানোর আশঙ্কা চারদিকে। পিপিআরসির হিসাবে আয় কমেছে ৭০ ভাগ মানুষের। গবেষণায় ব্র্যাক বলেছে, ৩ কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। সরকার ৩৫ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। সঙ্গে দিয়েছে নগদ অর্থ। ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করলেও এখনো ৭০ শতাংশ বিতরণ হয়নি। বিশেষ করে এসএমই খাতের উদ্যোগ আর দিনমজুররা বেশি সমস্যায় কবলিত।
দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীই নয়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও এখন এক কঠিন পরিস্থিতির মুখে। উৎপাদন সরবরাহ কমেছে। কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো করের বোঝা, ভ্যাটের চাপ তো আছেই। একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য এক বছর ধরে করোনা গিলে খেলেও রয়েছে ব্যাংকের অসহযোগিতা, চড়া ব্যাংক সুদ। এমন অবস্থায় কেউ ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছেন। কেউ ছোট করে আনছেন, ছাঁটাই করছেন কর্মচারী। সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর রাগে-ক্ষোভে বলেছিলেন, এনবিআর যেভাবে হয়রানি করে তাতে কান ধরে ব্যবসা ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর ও ভ্যাটের চাপ কমিয়ে শিল্প বাঁচাতে হবে। অর্থনীতি বাঁচাতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারকে আরও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। যেমন ব্যাংক সুদ মাফ করা, করপোরেট কর কমিয়ে দেওয়া এবং নগদ সহায়তা।
আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো আমাদের বলবান কৃষকের পেশিতে শক্তি আছে। আছে শ্রমিকের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের মানসিকতা। তারা সৃজনশীলও। কৃষিতে আমাদের বিপ্লব হয়ে গেছে। ধানসহ কৃষিপণ্যের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রবৃদ্ধিতে কৃষি একটা বড় ভূমিকা রাখবে। আলাপ হচ্ছিল অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদের সঙ্গে। তিনিও একমত, কৃষি প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে। আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহও চমৎকার। যদিও নাজনীনের ভাষায়’ করোনার এক বছরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিদেশে শপিং বাবদ যে টাকা হুন্ডিতে যেত তা বন্ধ হওয়ায় এ গতিটা বেড়েছে। তিনি মনে করেন সরকারকে খাদ্য সহায়তার দিক থেকে মন ফিরিয়ে কর্মসংস্থানের দিকে নজর দিতে হবে। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প যা আছে বা নেওয়া হবে সেখানে দিনমজুর হিসেবে তাদের শ্রম নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, রেস্তোরাঁ ব্যবসা, প্রকাশনাসহ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বাঁচাতে ভূমিকা রাখতে হবে। এমনকি বসুন্ধরা শপিং মলে যে বিনিয়োগকারী শুধু পারফিউমের শপ দিয়েছেন তার কথা ভাবতে হবে। কারণ পারফিউম মানুষের অপরিহার্য পণ্য নয়। এভাবে শহরকেন্দ্রিক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তার আওতায় আনতে হবে। ড. নাজনীন বলেন, রপ্তানি পণ্যের দুয়ার সামনে খুলে যাচ্ছে। আমেরিকা-ইউরোপের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। নাজনীন বললেন, অর্থনীতির ওপর আঘাত এসে গেছে, এখন একে মোকাবিলাই চ্যালেঞ্জ। জীবন-জীবিকার লড়াই অন্যদিকে করোনার ভয়াবহতা সামনে নিয়েই সরকারকে অগ্রসর হতে হবে। লকডাউন স্থায়ী সমাধান নয়, তবে অর্থনীতি বাঁচানোর মধ্যে স্থায়ী সমাধান আছে। অর্থনীতি ও মানুষ বাঁচলে দেশ বাঁচবে।
এদিকে এ দুঃসময়ে স্বাস্থ্য সচিবের দফতরে যাওয়া জাঁদরেল রিপোর্টার রোজিনা ইসলামকে সচিবের রুমে আটকে রেখে যেভাবে হেনস্তা করে থানায় নিয়ে রাতে তথ্য চুরির মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তাতে আমি বাকরুদ্ধ। রোজিনা আমার অনুজ, ছোট বোন। তাকে নিয়ে গর্ব করা যায়। একালে তার মতো রিপোর্টার মেলে না। একেকটি তরতাজা চমকে দেওয়া রিপোর্টের পেছনে থাকে শ্রম, মেধা, ধৈর্য। দুর্নীতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য খাতের খবর দেশ জানে। জানে না স্বাস্থ্য সচিবের রুমে রোজিনা কী তথ্য পান। কী প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন? একজন তার কণ্ঠ চেপে ধরেছেন। আমলাতন্ত্র রোজিনার নয় সাংবাদিকের কণ্ঠ চেপে ধরেছে ঔদ্ধত্য নিয়ে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর ঔদ্ধত্য দলকানা সুবিধাভোগী সাংবাদিকরা পেশাদারদের পথ শ্বাপদসংকুল করেছেন। আমরা বিচার চাই। মুক্তি চাই রোজিনার।
ইসরায়েলি বাহিনী একের পর এক বর্বর হামলায় ফিলিস্তিনি নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরিয়েছে। যেন যুগের পর যুগ ফিলিস্তিনিদের রক্তে তারা গোসল করছে। ইসরায়েলি ইহুদিরা দানবের মূর্তি নিয়ে মানবতার সব চিহ্ন মুছে দিয়ে শুধু ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল করেনি, তাদের জীবন হরণে মরিয়া। মারতে মারতে তারা শেষ করে দিতে চাইছে। অন্যদিকে মরতে মরতেও স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের পবিত্র রক্তাক্ত মাটি কামড়ে পড়ে আছে। বিশ্বমানবতা ডুকরে কাঁদছে। মানবতাবাদী মানুষ প্রতিবাদ করছে। পশ্চিমা পরাশক্তি আগাগোড়াই ইসরায়েলি ইহুদিদের সমর্থন দিয়ে আসছে। এতে তারা যুগের পর যুগ বেপরোয়া। হিটলার যেমন ইহুদি হত্যা করে কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন তেমনি আজ ইসরায়েলি ইহুদিরা ফিলিস্তিনি মুসলমানদের হত্যা করে কুখ্যাতি অর্জন করছে। তারা জেরুজালেম দখল করেই থামেনি। ফিলিস্তিনিদের নাম-নিশানা মুছে ফেলতে চায়। তারা সেখানে আরব ইসরায়েল বা ফিলিস্তিনিদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করে নিজেদের কর্তৃত্ব বা ইহুদিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে। ইহুদিদের জন্য যে সুযোগ-সুবিধা নাগরিক হিসেবে দেওয়া হয়েছে তার ন্যূনতম কপালে জোটেনি আরব ইসরায়েলি বা ফিলিস্তিনিদের জন্য। সেখানে মুসলমান, খ্রিস্টানও আছে। কিন্তু ইহুদিরাই সেরা কর্তৃত্বপরায়ণ। গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর একের পর এক ইসরায়েলি বিমান হামলায় রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। ওরা নিরপরাধ শিশুদের হত্যা করছে, অসহায় নারীদের হত্যা করছে। দানবের চেহারার সামনে মানবের ক্রন্দন, অসহায়ত্বের ও মৃত্যুর ছবি দেখলে গা শিউরে ওঠে। তাকানো যায় না, ওরা জাতিসংঘ মানে না। ওরা কোনো বিশ্ববিখ্যাত মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট বা বক্তব্য আমলে নেয় না। অস্ত্রের জোরে, অস্ত্রের ভাষায় কথা বলে। ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত তাঁর স্বাধীন প্যালেস্টাইনের জন্য আজীবন যুদ্ধ ও সংগ্রাম করে গেছেন, স্বপ্নের স্বাধীন ফিলিস্তিন দেখে যেতে পারেননি। মানুষ হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করার পরও ইসরায়েলকে থামাতে কেউ এগিয়ে আসছে না। পশ্চিমারা নির্লজ্জ ভূমিকা রাখছে। হিংসা-প্রতিহিংসার জন্ম দেয়। এ কথা বিশ্বনেতারা হিসাবেও নিচ্ছেন না। এ হত্যা পৃথিবীকে আজ বেদনাবিধুর করে রেখেছে। ফিলিস্তিনি মুসলমান হত্যা কবে বন্ধ হবে কেউ জানে না। কবে তারা তাদের স্বাধীন আবাসভূমি ফিরে পাবে তাও জানে না।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।
Leave a Reply