শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:২৫ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ জ্বরের চিকিৎসা না পেয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেলেন বাগেরহাটের জয়বাংলা গ্রামের বাসিন্দা বাবুল (৪০)।
বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ, এই সময়টা তারা হাসপাতালের বহির্বিভাগ এবং জরুরি বিভাগে দৌড়াদৌড়িতেই পার করেছেন। করোনা সন্দেহে কোনও ডাক্তারই তাকে চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসেননি। যার কারণে মৃত্যু হয়েছে বাবুলের।
নিহত বাবুলের বড় বোন জাহানারা বেগম বলেন, গত শুক্রবার থেকে বাবুল জ্বরে আক্রান্ত হয়। সাধারণ জ্বর ভেবে প্রথমে তাকে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসায় জ্বর কমেনি।
তিনি আরও বলেন, চারদিকে করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যার কারণে আমরাও ভয় পেয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। হাসপাতালের বহির্বিভাগে নিয়ে গেলে সেখান থেকে জানানো হয় ১২টার পর কোনো রোগী সেখানে দেখা হয় না। তারা আমাদের জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করতে বলেন।
জাহানারা বেগম বলেন, আমরা জরুরি বিভাগে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. আশরাফুর রহমান রোগের লক্ষণ জানতে চান। তখন আমরা তাকে জ্বরের বিষয়টি বলি। জ্বর শুনেই ডাক্তার আমাদের দূরে গিয়ে বসতে বলেন। তারপর তিনি বলেন, আপনারা হাসপাতালের আরএমওর কাছে যান।
তিনি বলেন, আমরা সেখান থেকে হাসপাতালের রেসিডেন্সিয়াল মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অঞ্জন চক্রবর্তীর রুমে যাই। তিনিও রোগের লক্ষণ শুনে বুঝে আমাদের আবারও বহির্বিভাগে যেতে বলেন। এর মধ্যে আমার ভাই বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা হাসপাতালের কর্মচারীদের স্ট্রেচারে করে নিয়ে যেতে অনুরোধ জানাই। তবে তারাও আমাদের কাছে ভেড়েনি। ফলে বাধ্য হয়ে আমরা সেখান থেকে বের হয়ে হেঁটে বহির্বিভাগের বারান্দায় যাই।
জাহানারা বেগম বলেন, এ সময় আমার ভাই আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সে চলাচলের শক্তিও হারিয়ে ফেলে। একপর্যায়ে বহির্বিভাগের সিঁড়িতে লুটিয়ে পড়ে। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
তিনি অভিযোগ করেন, আমরা গত পাঁচদিন একসঙ্গেই রয়েছি। করোনা হলে তো আমরাও আক্রান্ত হতাম। কিন্তু আমরা সবাই সুস্থ রয়েছি। শুধু সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ডাক্তারদের এমন অবহেলার শিকার হলাম। ফলশ্রুতিতে মৃত্যুবরণ করতে হল আমার ভাইকে। তার পাঁচ বছর ও তিন বছর বয়সী দুটি সন্তান রয়েছে। তাদের কি হবে এখন?
রোগীর মৃত্যুর বিষয় নিয়ে ইমার্জেন্সি ডাক্তার মো. আশরাফুর রহমান বলেন, প্রথমত আমি মেডিসিনের ডাক্তার নই। ওই রোগী ইমার্জেন্সিতে আসলে আমি রোগের বিবরণ শুনে আরএমওর কাছে যেতে বলি। এরপরের খবর আমি জানি না।
খুমেকের পরিচালক টিএম মনজুর মোরশেদ বলেন, আমি সারা দিন বাইরে আছি, ঘটানাটি শুনেছি। তবে করোনা আক্রান্ত হলেও খুমেকে রোগীর ভর্তির ব্যবস্থা আছে। আমি যতটুকু শুনেছি আরএমও তাকে বলেছিল বহির্বিভাগ তো এখনও খোলা আছে, তাকে সেখান থেকে একটু দেখিয়ে আসেন। তিনি কোন্ রোগে আক্রান্ত ছিলেন তা ডায়গনোসিস করার আগেই তিনি মারা গেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে।
Leave a Reply