শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২২ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার:বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নির্ধারিত না থাকলেও হঠাৎ করে ২টি ওয়ার্ডে (১২ ও ২৮) ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) দিয়েছে নির্বাচন অফিস।এ নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে নগরীতে। অভিযোগ উঠেছে, ইভিএম পাইয়ে দেয়ার জন্য বিএনপির দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়েছেন নির্বাচন অফিসের এক কর্মকর্তা।এ বিষয়ে প্রার্থীরা মৌখিক অভিয্গো দিলেও নাম প্রকাশ করতে চায়নি কেউ।
প্রার্থীদের ভাষ্যমতে নির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা, বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুল মান্নান নেপথ্যে থেকে এই কাজ করেছেন। তিনি দীর্ঘ দিন বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার ছিলেন।সেখান থেকেই বিএনপির দুই কাউন্সিলরের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, নিয়ম অনুযায়ী পাশাপাশি ৪টি ওয়ার্ডে ইভিএম’র মাধ্যমে ভোট নেয়ার কথা। সেই অনুযায়ী ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড নির্ধারন করা হয়। তবে রহস্যজনক কারনে সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে ১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের পরিবর্তে ১২ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ইভিএম দেয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরো জানান, আব্দুল মান্নানের সাথে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বিএনপি নেতা বর্তমান কাউন্সিলর কেএম শহীদুল্লাহ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বিএনপি নেতা বর্তমান কাউন্সিলর হুমায়ুন কবিরের গভঅর সখ্যতা রয়েছে।
জানা যায়, ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সহায়ক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিএনপির আমলে চাকরিতে যোগ দেয়া আব্দুল মান্নান। বিএনপি ঘরানার হওয়ায় আব্দুল মান্নানের সাথে বিএনপি নেতা শহীদুল্লাহ ও হুমায়ুন কবিরের সখ্যতা গড়ে উঠে। পরে মান্নান সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দায়িত্ব পাওয়ার পর তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। প্রায় সময়ই নগরীর লাইন রোডে অবস্থিত শহীদুল্লাহ’র মালিকানাধীন ‘দি কিচেন’ রেস্তোরা থেকে খাবার পাঠানো হতো আব্দুল মান্নানের বাসায়। মাঝে মধ্যে পরিবার নিয়েও শহীদুল্লাহ রেস্তোরায় বিনা পয়সায় খাওয়া দাওয়া করতো আব্দুল মান্নান বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এদিকে, নির্বাচনের এক বছরের মাথায় এসে নারী কেলেঙ্কারী সহ নানা অপকর্মের কারনে এলাকায় জনপ্রিয়তা হারায় ১২নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কেএম শহীদুল্লাহ। নিজেই বুঝতে পারেন পরবর্তি নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া তার পক্ষে অসম্ভব। তাই নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নানকে নিয়ে চক্রান্ত শুরু করেন শহীদুল্লাহ। ইভিএম এর উপর বিশেষ প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত মান্নানকে নিয়ে গোপন বৈঠক করেন শহদিুল্লাহ ও হুমায়ূন কবির। তাদের ২টি ওয়ার্ডে ইভিএম এর মাধ্যমে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বৈঠকে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বাদ দিয়ে ইভিএম দেয়া হয়েছে ১২ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে।
অন্যদিকে, আবারো কাউন্সিলর হওয়ার আগাম ঘোষনা দিয়েছেন কেএম শহীদুল্লাহ ও হুমায়ুন কবির। তবে ভোট চাইতে ভোটারদের কাছে তেমন একটা যাচ্ছেন না এই দুই প্রার্থীর একজনও। বিপরীতে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জাকির হোসেন ও জাহাঙ্গীর হোসেন প্রতিদিনই ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। ভোট না চেয়ে বিএনপির ২ প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার ঘোষনা রহস্যের জন্ম দিয়েছে ভোটারদের মাঝে। ডিজিটাল ভোট ডাকাতির আশঙ্কা করছেন ভোটাররা। এদিকে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান একজন সৎ মানুষ। তাকে টাকা দিয়ে কিনতে না পেরে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছে শহীদুল্লাহ।
এব্যাপারে জানতে রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ মুজিবুর রহমানের টেলিফোনে কল করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
আব্দুল মান্নান পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেন বলেন, একজন নির্বাচন অফিসার হিসেবে অন্য কাউন্সিলর বা প্রাথীদের সাথে যে সম্পর্ক; কেএম শহীদুল্লাহ ও হুমায়ুন কবিরের সাথেও একই সম্পর্ক। তাদের সাথে বিশেষ কোনো সম্পর্ক নেই।
Leave a Reply