শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১০ অপরাহ্ন
কাওসার মাহমুদ মুন্না:
বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দুর্নীতিবাজ স্টেনো টাইপিষ্ট মোঃ সেলিম হোসেনকে ঝালকাঠীতে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তাকে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য বদলি আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। আজ বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ মোঃ মাহাবুবুর রহমান এ বদলির আদেশ দেন। বদলির আদেশ ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন স্টেনো সেলিম। তিনি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অফিস সহকারী জহিরুল ইসলাম, আবু বকর সিদ্দিককে ও লোকমান হোসেনকে দিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে সুপারিশ করানোর চেষ্টা করছেন। বদলির আদেশ পাওয়ার পর তিনি যোগদান না করে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে ইতিমধ্যে তিনি ছুটি নিয়েছেন।
বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরে দুর্নীতিবাজ কর্মচারী সেলিমের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি নজরে আসে বর্তমান বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের । এর পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরিশাল থেকে গতমাসে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তিন সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটির প্রধান করা হয় বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপ-পরিচালক ডাঃ বাসুদেব কুমার দাসকে। কমিটিতে আরো ছিলেন সহকারি পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রক) ডাঃ আব্দুর জব্বার হাওলাদার এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফরিদউদ্দিন মৃধা। তারা তদন্ত করে সেলিমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পান। তদন্ত কমিটির সুপারিশ ক্রমেই স্টেনো সেলিমকে বদলির সুপারিশ করা হয় বলে সূত্র জানায়।
টানা দুই যুগ একই কর্মস্থলে কর্মরত থেকে সরকারী সকল সুযোগ সুবিধা নিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল সিভিল সার্জন দপ্তরের স্টেনো টাইপিষ্ট মোঃ সেলিম হোসেন। তার যন্ত্রনায় অফিসের কর্মকর্তা থেকে অনেকেই অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। চিকিৎসকদের বদলি করা, দাপ্তরিক কাজে বিভিন্ন সুপারিশ, অসুস্থতাজনিত কারন দেখিয়ে কর্মচারীদের বাধ্যতামূলক অবসরে যাবার সময়, ডায়াগনোস্টিক এবং ক্লিনিকের অনুমোদন ও নবায়ন করাসহ বিভিন্ন কাজে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে সেলিমের বিরুদ্ধে। তার এইসব অনিয়মের ফলে বরিশাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকও বিব্রত ছিলেন।
বরগুনা সিভিল সার্জন অফিসে স্বাস্থ্য সহকারি পদে প্রথম চাকুরীতে যোগদান করেন সেলিম। ১৯৯২ সালে ষ্টেনো টাইপিষ্ট হিসাবে বরিশাল সিভিল সার্জন অফিসে যোগদান করেন। সেই থেকে অদ্যাবধি তার কোন বদলি হয়নি। দীর্ঘ বছর একই দপ্তরে চাকুরী করার সুবাধে বিভিন্ন ডায়াগনোস্টিক, ক্লিনিকের মালিকদের সাথে তার একটি সখ্যতা গড়ে ওঠে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র নবায়ন, নতুন রেজিষ্ট্রেশন, সার্ভে সনদসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দেখভালের দায়িত্ব পায় ষ্টেনো সেলিম। আর এতেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছেন তিনি। জেলায় ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়ন করার সরকারী ফি নতুন ১১‘শ টাকা ভ্যাটসহ। সেখানে ষ্টেনো সেলিম বিশ হাজার টাকা আদায় করেন। ক্লিনিকে ভ্যাটসহ নবায়ন ফির সরকারি ধার্য্য ৭ হাজার ৫শ’টাকা। এক্ষেত্রে ষ্টেনো সেলিম কম করে হলেও বিশ হাজার টাকার নির্ধারণ করে দেন। যারা তার কথামত চলে না তাদের পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। বিভিন্ন অজুহাতে তাদের কাগজপত্র আটকে দেয়া হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গৌরনদী-আগৈলঝড়া উপজেলার কয়েকটি ক্লিনিক ও ডায়াগনোষ্টিক থেকে এ ধরনের অর্থ উত্তোলন করেন। যার মধ্যে মৌরি ক্লিনিক গৌরনদী,আগৈলঝাড়ায় আদর্শ জেনারেল হাসপাতাল, একই এলাকার দুস্থ্য মানবতা হাসপাতাল থেকে নবায়ন বাবদ বিশ হাজার টাকা নিয়েছেনন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন ডায়াগনোস্টিক সেন্টার থেকে মাসিক মাসোহারা আদায় করে বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে। নগরীর এমন ১০/১৫ ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার রয়েছে যাদের কোন লাইসেন্স বা কাগজপত্র নেই। ওইসব প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মাসিক মাসোহারা আদায় করা হয় বলেও জানা গেছে। এমনকি যে সব চিকিৎসক সিভিল সার্জন অফিসে কর্মরত আছেন তাদের বদলি বা পদায়ন অথবা যেকোন অফিস আদেশ লেখার জন্য তাকে (সেলিম) দাবীকৃত অর্থ পরিশোধ না করলে কাজ সমাপ্ত করতে গড়িমসি করে বলে সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বরিশাল সিভিল সার্জন দপ্তরে সাবেক এক চিকিৎসকের পদোন্নতি হওয়ার ফরোয়াডিং লিখে দেয়ার জন্য জোরপূবক অর্থ আদায় করেছিল যা ওই চিকিৎসক নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছিলেন। সম্প্রতি যে সকল কর্মচারীরা স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়েছে তাদের কাগজপত্র ঠিক করে দেয়ার কথা বলে অর্থ আদায় করেছে। স্টেনো সেলিম তার এই সকল অবৈধ কর্মকান্ডকে বৈধতার ছোঁয়া লাগাতে অগোচরে বুঝিয়ে দেন এই বলে যে ‘বরিশাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ও অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এই আদায়কৃত অর্থের ভাগ দিতে হয়। সবচেয়ে বড় দান মারার সুজোগটি হচ্ছে ক্লিনিকের নতুন লাইসেন্স অনুমোদনের ক্ষেত্রে। এই লাইসেন্স দেয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। আর তাই ষ্টেনো সেলিম ক্লিনিক মালিকদের এই বলে বোঝাবার চেষ্টা করেন যে ‘যেহেতু ঢাকা থেকে অনুমোদন করিয়ে আনতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন তাই কমপক্ষে ৭০/৮০ হাজার টাকা। অনেক ক্ষেত্রে লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। অথচ নিয়ম মাফিক লাইসেন্স করলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। যার বড় অংশ জমা হয় সরকারি কোষাগারে।
বরিশাল স্বাস্থ্য অধিপ্তরের পরিচালক পরিচালক ডাঃ মোঃ মাহাবুবুর রহমান বলেন, সেলিমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়টি তদন্তে প্রমানিত হওয়ায় তাকে ঝালকাঠীতে বদলি করা হয়েছে।
Leave a Reply