মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:ক্ষমতাসীন সরকারের শেষ সময়ে এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প অনুমোদনের হিড়িক লেগেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার রেকর্ড পরিমাণ ২৪টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
রাজধানীর শেরে-বাংলা নগরে এনইসি কক্ষে একনেক সভায় ২৪ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা ব্যয় ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেন।
ডিসেম্বরেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নিতে মন্ত্রণালয়গুলোর তাড়াহুড়ো বেড়ে গেছে।
আজকেরসহ গত এক মাসে একশ’টিরও বেশি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি আছে বড় ধরনের প্রকল্প।
চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একাদশতম একনেক সভায় ১৯ হাজার ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। দশম সভায় ১৯টি (নতুন ও সংশোধিত) প্রকল্প, নবম সভায় নতুন ও সংশোধিত মিলে ২০টি প্রকল্প, অষ্টম সভায় ১৫টি (নতুন ও সংশোধিত) প্রকল্প, সপ্তম সভায় ১৪টি ও ষষ্ঠ সভায় ১৭ হাজার ৭৮৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ১৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত এক মাসে যে হারে প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে, বিগত দিনে তা দেখা যায়নি। নির্বাচনী বছরের শেষ দিকে সাধারণত অন্য সময়ের চেয়ে বেশি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। কারণ এই বছরকে সামনে রেখে বাজেটের আকারও বাড়ানো হয়। সে হিসেবে অন্য বছরের তুলনায় নির্বাচনী বছরে সরকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বেশি করবে এটাই স্বাভাবিক।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প পাসের হিড়িক চলছে। সবাই ভাবছেন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর আগামী দুই মাস হয়তো একনেক হবে না। তাই এর আগেই সবাই নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পাস করিয়ে নিতে চাচ্ছেন। তবে প্রকল্পগুলোর অনুমোদন প্রক্রিয়া চলছে নিয়ম মেনেই।
আজ একেনেকে উপস্থাপন হতে যাওয়া প্রকল্পগুলো হলো- বগুড়া থেকে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন, সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত নতুন ডুয়েল গেজ রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প; ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত); মাদানী এভিনিউ থেকে বালু নদী পর্যন্ত মেজর রোড প্রশস্তকরণ ও বালু নদী থেকে শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ (প্রথম পর্ব); রাজউক পূর্বাচল ৩০০ ফুট মহাসড়ক থেকে মাদানী এভিনিউ, সিলেট মহাসড়ক পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ; ৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন; বঙ্গবন্ধু জাদুঘর নির্মাণ (সংশোধিত); কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ প্রকল্প (তৃতীয় সংশোধিত); গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৫ নম্বর জোনের অভ্যন্তরীণ রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়সহ সড়কের নিরাপত্তা; ডিজিএফআইয়ের টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ ও কারিগরি সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্প; ডাক অধিদফতরের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য বীর যোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন।
এছাড়া, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ৯টি আবাসিক টাওয়ার নির্মাণ; ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজ্যাবিলিটিজ (দ্বিতীয় সংশোধিত); বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা; ২৩ জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন; পতেঙ্গায় বিএনএ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ; স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচার কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট; কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোর কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ; ঢাকায় বিসিক কেমিক্যাল পল্লি স্থাপন; গাজী ওয়্যারস লিমিটেড শক্তিশালীকরণ এবং ৫০০-৬০০ মেগাওয়াট এলএনজি বেজড কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পাদন এবং গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্প।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক নাজনীন সুলতানা জানান, এসব প্রকল্প আগে থেকেই পরিকল্পনার মধ্যে থাকে। সে অনুযায়ী ডিপিপি ও এডিপির মধ্যে রাখা হয়। এ ছাড়া সারা বছরের চাপ এ সময় এসে পড়ে। যে কারণে অনেক প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।
এদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বরাবরই বলে আসছেন, উন্নয়নের কাজ সব সময়ই চলবে। নির্বাচনের সময় উন্নয়নের কাজ বন্ধ থাকবে বা বাধাগ্রস্ত হবে এর কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনের আগে ভোটারের মনোতুষ্টির জন্য যে প্রকল্প নেয়া হচ্ছে এ কথা ঠিক নয়।
Leave a Reply