সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক।। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫ ব্যাচের ছাত্র তাজোয়ার বকতিয়ার জাহিদ আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ নিয়ে মামলায় মোট ৬০ সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
বুধবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে জাহিদ এ সাক্ষ্য দেন।
এর আগে কারাগারে আটক আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাদের উপস্থিতিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা পুরকৌশল বিভাগের ১৫ ব্যাচের ছাত্র আব্দুল মুবিন ইবনে হাফিজ প্রত্যয় জেরা শুরু করেন। জেরা শেষ হলে সাক্ষী তাজোয়ার বকতিয়ার জাহিদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত। জবানবন্দি শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা শুরু করেন। জেরা শেষ হলে আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন।
গত ৫ অক্টোবর এ মামলার বাদী ও আবরারের বাবা বরকতুল্লাহর আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছিল।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর এ মামলার অভিযোগ গঠন করেন আদালত। গত ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্রে ২৫ আসামিকে অভিযুক্ত করেন। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় আবরার ফাহাদকে উদ্ধার করা হয়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ হত্যা মামলা করেন।
এ মামলার আসামিরা হলেন, মেহেদী হাসান রাসেল, মুহতামিম ফুয়াদ, অনিক সরকার ওরফে অপু, মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, অমিত সাহা, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মুজাহিদুর রহমান, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ।
আসামিদের মধ্যে তিনজন পলাতক। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ।
এছাড়া তাদের মধ্যে আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, পরস্পর যোগসাজশে একজন অপরজনের সহায়তায় আবরারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। ক্রিকেট স্টাম্প, মোটা দড়ি দিয়ে নির্যাতন করার একপর্যায়ে আবরার ফাহাদ বমি ও প্রস্রাব করে ফেলেন।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, আসামি মিজানের দেয়া ভুল ‘তথ্যের’ ভিত্তিতে আবরারকে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আবরার ফাহাদকে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নেয়ার পর আসামি ইফতি মোশাররফ অন্যদের বলেন, ‘তোরা এবার আবরারের কাছ থেকে তথ্য বের কর। বুয়েটে কে কে …. করে।’ তখন আসামি মোয়াজ আবু হোরায়রা ও অমর্ত্য ইসলাম আবরারের মুমূর্ষু অবস্থা দেখে আসামি মেহেদি হাসান ওরফে রবিনকে জানান, আবরারকে হাসপাতালে নিতে হবে। এই কথা শোনার পর মেহেদি হাসান ওরফে রবিন বলেন, ‘ও নাটক করছে। … চেনস না। … চেনা কষ্ট।’ রাত আড়াইটার সময় আসামি ইফতি মোশাররফ, মুজাহিদ, তাবাখখারুল ও তোহা মিলে আবরারকে তোশকে করে হলের দোতলার সিঁড়িতে রাখেন। এরপর আসামিরা বুয়েটের চিকিৎসক ও অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনেন। চিকিৎসক আবরারের দেহ পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।
অভিযোগপত্রে থেকে জানা যায়, আসামিদের মধ্যে ৮ জন আদালতে দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ১৩ জন ১৬১ ধারায় পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া সাক্ষীদের মধ্য থেকে দুই জন ১৬৪ ধারায় এবং ৩০ জন ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এর মধ্যে বুয়েটের শিক্ষক, শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট, চিকিৎসক এবং নিরাপত্তাকর্মীও আছেন।
এদিকে আবরারের রক্তমাখা জামাকাপড়, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন, ফরেনসিক প্রতিবেদন, ১৬৪ ও ১৬১ ধারায় দেয়া আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপের কথোপকথন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, আসামিদের কল রেকর্ড ও মশারি টানানোর রড-স্টাম্প আলমত হিসেবে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
Leave a Reply