মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:০০ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ দেশের প্রায় সব এলাকায় আগামী চার-পাঁচ দিন হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হবে। দুপুর গড়ালে প্রায় প্রতিদিনই ঘন কালো অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে চারপাশ। দেশের কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হচ্ছে।
বৈশাখের এ গরমে এই বৃষ্টি জনমনে কিছুটা স্বস্তি দিলেও ভীষণ শত্রু হয়ে দেখা দিয়েছে মাঠের পাকা বোরো ধান ও গাছে থাকা কচি আমের জন্য। বিশেষ করে মাঠে বোরো ধান কাটা শুরু হতে না হতেই জলাবদ্ধতায় ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা জেগেছে কৃষকের মনে। হাওরসহ নিচু এলাকাগুলোতে এ আশঙ্কা এখন সবচেয়ে বেশি।
আর এ আশঙ্কাটা বাড়িয়ে তুলেছে করোনাভাইরাসের কারণে দেশজুড়ে চলা লকডাউন পরিস্থিতি। ফলে সব এলাকায় এখন দেখা দিয়েছে ধান কাটা শ্রমিকের সংকটও। এ অবস্থায় ধান গোলায় উঠবে নাকি মাঠেই নষ্ট হবে- এ চিন্তা কৃষকের মনে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতবার ধানের ভালো দাম পাননি কৃষকরা। এবার বছরের শুরু থেকে করোনার আঘাত। মার্চ থেকে সারাদেশে চলছে লকডাউন। এরমধ্যে জীবন ঝুঁকি নিয়ে কৃষক মাঠে নামছে।
শুধু তার নিজের জন্য নয়, দেশের সব মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার জন্যই। গত সপ্তাহ থেকে দেশে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। কমপক্ষে আরও ১৫ দিন লাগবে এ ধান ঘরে তুলতে। এরমধ্যে ঝড় বৃষ্টি হলে ধান তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর শিলাবৃষ্টি হলে নষ্ট হবে ধানের ছড়া। বাংলাদেশে ধান চাষের ক্ষেত্রে মাটি তৈরি, সেচ ও বীজ ব্যবহারে কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও ধান কাটার ক্ষেত্রে কৃষক এখনো সনাতন পদ্ধতিতে পড়ে আছে। ধান কাটার জন্য তারা এখনো শ্রমিকনির্ভর।
সরকার গত কয়েক বছর ধরে কৃষি যান্ত্রিকতার বিকাশ ঘটানোর চেষ্টা করলেও এ পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। ফলে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলা কৃষকদের জন্য খুব সহজ নয়। এদিকে সিলেট বিভাগের হাওরগুলোতে এরইমধ্যে জমতে শুরু করেছে পানি। ধানের বান আসা নিচু হাওরগুলোতে বৃষ্টির পানির কারণে এরইমধ্যে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে ধান ভরা মাঠ।
আবহাওয়া অধিদফতরের কৃষি আবহাওয়ার বিষয়ে ২২ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত পূর্বাভাসে বলা হয়, এ সপ্তাহে ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক স্থানে অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা ধরনের (প্রতিদিন ৪ থেকে ১০ মিলিমিটার) থেকে মাঝারি ধরনের (প্রতিদিন ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার) বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সিলেট, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী (প্রতিদিন ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার) থেকে ভারী (প্রতিদিন ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোথাও অতি বর্ষণে কৃষকের ধানের মাঠ ভেসে যাওয়া মানে কেবল একলা কৃষকের ক্ষতি নয়। এ ক্ষতি পরবর্তীতে টের পাবে দেশের সব মানুষ। কারণ, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নিজের দেশের উৎপাদিত ফসল মাঠ থেকে তুলতে না পারলে সে কারণেই চরম মূল্য দিতে হতে পারে আমাদেরও।
এজন্য যেসব এলাকায় ধানকাটা শ্রমিকের সংকট রয়েছে সেসব এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে ছাত্র-শিক্ষক নির্বিশেষে এলাকার সব সুস্থ মানুষকে কৃষকের পাশে দাঁড়াতে অর্থাৎ তার ধান কাটা থেকে ঘরের উঠানে আনা পর্যন্ত আনতে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষকের পাশে এ সময় দাঁড়াতে না পারলে সেই বিপদ শুধু কৃষকের নয়, ভবিষ্যতে দেশের ওপরে চাপ বাড়াবে। করোনার কারণে বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। সঙ্গত কারণে সরকার চাইছে বোরো মৌসুমের উৎপাদন ঠিক রাখার পাশাপাশি আউশ এবং আমন মৌসুমে বেশি বেশি ফসল উৎপাদন করতে। এর কোনও একটি মৌসুমে ধানের উৎপাদন কম হলে খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশ খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে মাইজদীকোর্টে ৮৩ মিলিমিটার। এছাড়া সন্দ্বীপে ৭২, ভোলায় ৬৯, চাঁদপুরে ৫৭, রাজারহাট ও বরিশালে ৫৩, মাদারীপুরে ৪৪, গোপালগঞ্জ ও যশোরে ৩৩, খুলনায় ৪২, ফেনীতে ৩৮, রাঙামাটিতে ৩৭, সিলেটে ৩৪, হাতিয়া ও সীতাকুণ্ডে ৩২, কুতুবদিয়ায় ২৯, ডিমলায় ২৮, রংপুরে ২৭, ঢাকায় ২০, শ্রীমঙ্গলে ১৮, কক্সবাজারে ১৭, নেত্রকোনায় ১৬, নিকলিতে ১২, ফরিদপুরে ১০, পটুয়াখালীতে ৮, কুমিল্লায় ৫, তেঁতুলিয়ায় ৩ এবং চুয়াডাঙ্গা ও সৈয়দপুরে ১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
Leave a Reply