বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৫১ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বরিশাল বিভাগ জুড়ে প্রতিদিনই ঘটছে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা। এ বিভাগে চলতি জুলাই মাসে ৫ শ্রমিক, ২ শিক্ষার্থী ও কৃর্ষক দম্পতিসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানাগেছে, চলতি জুলাই মাসে এ পর্যন্ত বিদ্যুৎস্পৃষ্টে হয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে সর্বশেষ ১২ জুলাই শুক্রবার ৪ জনের মৃত্যু হয়।এর মধ্যে বরিশালের গৌরনদী পৌরসভার চরগাধাতলী মহল্লায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীনী সুরাইয়া জান্নাত খাদিজা (১৮) বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ দিন পর শুক্রবার শেবাচিম হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। সে গৌরনদী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থীনী ও একই শিক্ষা প্রতিষ্টানের সহকারী শিক্ষক মাওলানা গিয়াস উদ্দিনের কণ্যা।
অপরদিকে (১২ জুলাই) পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে সাহেব আলী সিকদার (৫০) নামের গাছকাটা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের বাড়ী পার্শ্ববর্তী বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামে। গাছ কাটার সময় অসাবধানতাবসত গাছের একটি ডাল (শাখা) গিয়ে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে সাহেব আলীর মৃত্যু হয়।
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মিলন হোসেন (৩৫) নামে এক রাজমিস্ত্রির মৃত্যু হয় ১২ জুলাই। নিহত মিলন উপজেলার সূর্য্যপাশা গ্রামের মো. আলমগীর হোসেনের ছেলে। ভবনের ছাদের ওপর কাজ করার সময় হাতে থাকা লোহার রড বিদ্যুতের তার স্পর্শ করলে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন।
একই দিন (১২ জুলাই) ওই উপজেলার বাড়ির ছাদে পল্লী বিদ্যুতের পড়ে থাকা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান মগড় ইউনিয়নে ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক বিপ্লব খান রায়হান (২৫)।
এর আগে ১১ জুলাই বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক কৃর্ষক দম্পতির মৃত্যু হয়। কৃষক কামাল হোসেন (৪০) ও তার স্ত্রী মমতাজ বেগম (৩০) নিজ বসতবাড়ি সংলগ্ন পাট ক্ষেতে বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।১০ জুলাই বানারীপাড়া থানা কমপ্লেক্স সংলগ্ন নির্মানাধীন একটি ভবনে রড তুলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শহিদুল ইসলাম খান (২৩) নামের নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
৯ জুলাই বরিশাল নগরীর রুপাতলীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান মাহাতাব হোসেন (৩৫) নামের নির্মাণ শ্রমিক। ৭ জুলাই চরফ্যাশন উপজেলার ওচমানগঞ্জ ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ডে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এনামুল হক মিয়াজী (৪০) নামের যুবকের মৃত্যু হয়।একই দিনই (৭ জুলাই) পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জে বিদ্যুতের তার জড়িয়ে কাদের আকন (৮০) নামের আরো এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।
এছাড়া ৩ জুলাই পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে জামাল হাওলাদার নামের শ্রমিকের মৃত্যু হয়। নির্মান কাজে ব্যবহত পানি সরবরাহের জন্য বৈদ্যুতিক মটরে সংযোগ দিতে গেলে বিদ্যুতায়িত হয়েছিলেন তিনি।এদিকে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অধিকাংশ দূর্ঘনার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের উদাসিনতাকে দায়ী করেছে নিহতের স্বজনরা। যথ যথ বিদ্যুৎ সংযোগ তার ছিড়ে পড়ার পর সঠিক সময়ে মেরামত না করায় মানুষ দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
তবে এমন অভিযোগ সঠিক নয় দাবী করে বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জিএম প্রকৌশলী সংকর কর বলেন, ‘বিদ্যুৎ সম্পর্কে মানুষের অধীক সচেতন হতে হবে। যে সকল খালি স্থান থেকে বিদ্যুতের তার টানা হয়েছে এখন সেই সকল স্থানে গৃহ বা ভবন নির্মাণ হচ্ছে। যার কারনে ভবনের বেলকুনি কিংবা ছাদের উপরে বিদ্যুতের তারের অবস্থান। তাই ঘটছে দূর্ঘটনা’।
তিনি বলেন, ‘ঝড় কিংবা দূর্যোগে তার ছিড়ে পড়লে আমাদের কাছে তৎক্ষনিক কোন অভিযোগ আসে না। যখন ওই ছেড়া তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে কেউ এক জন মারা যায়, তখনই কেবল আমরা জানতে পারি’।তিনি আরো বলেন, ইতো মধ্যে সারা দেশব্যাপী ইউআরআইডিএস প্রকল্পের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুতের ঝুকিপূণ সংযোগ (ঘর-বাড়ীর ছাদ ও বেলকুনি ঘেষা সংযোগ তার) গ্রহকদের বিনা খরচে সড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে করে দূর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে।
Leave a Reply