রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ শাশুড়ি আলেয়া বেগমের দেওয়া মিথ্যা মামলায় পুত্রবধূ অনিতা জামান জেল হাজতে। অনিতার দুগ্ধপোষ্য ছোট ছেলে গালিফ (আড়াই বছর) এবং বড় ছেলে আলিফ (১৩) মায়ের মুক্তির দাবিতে অবস্থান ধর্মঘটে করেছে। মায়ের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা রাস্তা থেকে উঠবেন না বলে জানিয়েছেন।
শনিবার (১৭ জুলাই) সকালে বরগুনা শহরের টাউনহল এলাকার অগ্নিঝরা একাত্তরের পাদদেশে অসহায় দুই সন্তানের এ অবস্থান কর্মসূচি দেখতে ভিড় জমান উৎসুক জনতা। আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকেই। তাদের দাবি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও অনতিবিলম্বে মায়ের মুক্তি হোক। সেই সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই শিশুরা।
ভুক্তভোগী শিশু আলিফের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বাড়ি বরগুনার খেজুরতলা গ্রামে। বাবার চাকরির সুবাদে তারা গাজীপুরে বসবাস করে আসছিল। সেখানে একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে একটি পরীক্ষায় ১ম স্থান অধিকার করে মেধাবী শিক্ষার্থী আলিফ ইংল্যান্ডে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে। তার ভিসাও প্রস্তুত। অথচ এই সময়ে তার দাদির দায়ের করা মিথ্যা মামলায় কারাগারে রয়েছে তাদের মা আনিতা জামান। শিশু আলিফ আরও জানায়, তার বয়স এখন ১২ বছর অথচ মিথ্যা মামলায় তার বয়স ১৮ বছর দেখিয়ে তাকেও আসামি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পুত্রবধূকে জেলে পাঠিয়ে গত শুক্রবার শাশুড়ি আলেয়া বেগম তালা ভেঙে তার মেয়ে মনিরাকে নিয়ে ঘরে ওঠেন। তবে এই বসবাসকৃত ঘরখানা অনিতা জামানের বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে তৈরি করা হয়। মেয়ে মনিরা বেগমের একাধিক বিবাহের পরও বাবার বাড়িতে থেকে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় দুই ছেলে ও দুই পুত্রবধূকে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। ছাড়েনি মাত্র ১৩ বছরে শিশু আলিফকেও।
সূত্র জানায়, বসতঘরে পুত্রবধূ থাকলে শাশুড়ি আলেয়া বেগম ও মেয়ে মনিরা থাকবে না। তাই তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে তারা ঘরের তালা ভেঙ্গে প্রবেশ করেন। অনিতা জামানের বড় ছেলে আলিফ ঘরের তালা ভেঙে ওঠার বিষয়টি জরুরি কল সেন্টার ৯৯৯ এ ফোন করে অভিযোগ করলে বরগুনা সদর থানার কর্তব্যরত এসআই দেবাশীস ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। কিন্তু ঘরে তালা ভেঙে ওঠার বিষয়টি তেমন গুরুত্বসহকারে আমলে নেননি। কারণ মা ছেলের ঘরে তালা ভেঙে ওঠা কোন অপরাধ নয় বলে জানান।
আলিফের পিতা জুয়েল বাড়িতে আসলে তাকে ঝুলিয়ে মারবে বলে জানান। শিশু আলিফ সহযোগিতা পাবার বদলে পেয়েছে বঞ্চনা। বিষয়টি অন্যদিকে মোড় নেয়। আলেয়ার কান্নায় বরগুনা পুলিশ সুপারের মন গলে যায়, ফলে বিকেলে তার বাড়িতে গিয়ে খাবার দিয়ে আসেন। যা ফলাও করে গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে।
বিষয়টি সঠিক তদন্ত করে সঠিক বিচারের আওতায় আনাসহ অনিতা জামানের অচিরেই মুক্তি মিলবে বলে আশা করছেন বরগুনার সচেতন মহল। সবার দৃষ্টি এখন রায়ের দিকে।
এ বিষয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. নজরুল ইসলাম সিকদার জানান, ‘ভুক্তভোগী দুই শিশু আলিফ, গালিফের চাচা ও ফুফুদের ভেতরকার পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে অসহায়ত্বের শিকার হয়েছে ছোট ছোট দুই শিশু। দুগ্ধপোষ্য শিশু ও এবং করোনাকালে একজন নারীর অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলাম। আদালত জামিন না মঞ্জুর করেছেন। আগামীকাল আবারও আসামি পক্ষে জামিন আবেদন করা হবে।’
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মিসকাত সাজ্জাদ জানান, করোনাকালে গত দুই তিনমাস ধরে শিশু আলিফ ও গালিফের বাবা-মা বরগুনায় থাকছেন। জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পারিবারিকভাবে আলিফ ও গালিফের বাবা মনিরুজ্জামান জুয়েল ও তার মা-বোনদের মাঝে কলহ চলছে। আলিফের বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে বৃদ্ধ দাদিকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply