সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৯ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. সি এইচ রবিনের স্ত্রী রাখীর বাসায় অমানুষিক নির্যাতনের শিকার শিশু গৃহকর্মী নিপা বাড়ৈ (১১) চিকিৎসাধীন অবস্থায় উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
হাসপাতালে একটি সূত্র জানায়, শিশুটির চাচা তপন বাড়ৈ ও চাচি মুক্তি বাড়ৈ অসুস্থ শিশুকে বার বার হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চিকিৎসকের কাছে অনুরোধ জানান। চিকিৎসা চলমান থাকায় চিকিৎসকরা শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র না দিলে স্থানীয় ইউপি সদস্য নরেন্দ্র নাথ বাড়ৈ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজি হয়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিখোঁজ হয় শিশুটি।
স্থানীয় অভিযোগ করেন, উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার এক পর্যায়ে স্থানীয় হারতা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নরেন্দ্র নাথ বাড়ৈর মধ্যস্থতায় চিকিৎসক দম্পত্তি বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে নরেন্দ্রনাথ বাড়ৈর মাধ্যমে শিশুর স্বজনদের অর্থের প্রলোভন দেখানো হয়। ওই লোভে পড়ে স্বজনরা শিশুটিকে উধাও করে থাকতে পারে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শওকত আলী সাংবাদিকদের জানান, শিশুটিকে ভর্তির পর থেকেই নানান মহল থেকে নিয়ে যাবার জন্য লোকজন আসে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে একজন ইউপি মেম্বারের নেতৃত্বে কিছু লোকজন শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসে। পরে ভোররাত পাঁচটার পর থেকে শিশুটি নিখোঁজ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. সামসুদ্দোহা উজিরপুর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
উজিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউল আহসান জানান, শিশুটিকে উদ্ধার করে বুধবার রাতে উপজেলা কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এরপর তার চাচা-চাচি দেখাশোনা করার জন্য ছিলো। এ ব্যাপারে আইনানুগ প্রক্রিয়া চলছিলো। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানান, এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণতি বিশ্বাস জানান, পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করে শিশুটির জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশাল জেলা সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কিছু অসাধু লোক শিশুটিকে নিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা চালাচ্ছে। শিশুটি তার উপর নির্যাতনের যে বর্ণনা দিয়েছেন সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
ডা. সি.এইচ রবিনের স্ত্রী রাখির অমানুষিক নির্যাতনের শিকার শিশু গৃহকর্মীকে ২৩ ফেব্রুয়ারি গ্রামের বাড়িতে ফেলে রাখা হয়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। শিশুটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত হয়ে রয়েছে। হাসপাতালের চিকৎসকরা তার পুরাতন ও নতুন ক্ষত এর চিকিৎসা দিচ্ছিলেন।
Leave a Reply