বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৩৫ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ আশির দশকে দেশে যখন দুর্ভিক্ষ তখন বাবা কুটি মিয়ার সঙ্গে ফরিদপুর থেকে যশোর শহরে আশ্রয় নেন শাহিন কবির। প্রথমে মণিহার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় টোকাই ছিলেন। পরে তার বাবা গ্যারেজে দেন কাজ শেখার জন্য। শাহিন কবির প্রথমে আব্দুল মান্নানের গ্যারেজে কাজ করার পর নিজেই ভালো মিস্ত্রিতে পরিণত হন। নব্বইয়ের দশকে বকচর এলাকায় নিজেই গড়ে তোলেন গ্যারেজ।
তবে শাহিন কবির তার পেশা সম্পর্কে বলেন, ‘আমার বাবার তরকারির আড়ৎ ছিল। আমার বাবা নামকরা ব্যবসায়ী ছিলেন। আমি কোনোদিন টোকাই ছিলাম না। তবে আমি গ্যারেজের মিস্ত্রি ছিলাম।’
এদিকে, গ্যারেজ করলেও খুব বেশি অর্থ না হওয়ায় রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন শাহিন। ১৯৯৫ সালের দিকে গাড়ি চুরির দিকে নজর পড়ে তার। গাড়ি চুরির জন্য সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়ি চুরি করে এনে তার গ্যারেজে ভাঙতে শুরু করেন। গাড়ি চুরির অপরাধে পুলিশের হাতে আটকও হয়েছেন। থানায় হয়েছে মামলা। কিন্তু টাকার জোরে সব সময় পার পেয়ে গেছেন শাহিন কবির। চুরি জায়েজ করতে গড়ে তোলেন যশোর অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ মালিক সমিতি।
এ ব্যাপারে শহিন কবির বলেন, ‘আমি কোনো চোর সিন্ডিকেটের সঙ্গে নেই। আমি যদি চোর সিন্ডিকেট চালাতাম তাহলে পুলিশ-র্যাব আমাকে ধরত না? আমি একজন ভালো মানুষ।’
এদিকে, সমিতিকে ব্যবহার করে শাহিন কবির নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছেন দিনের পর দিন। তার অত্যাচারে সমিতির সদস্যরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদাবাজিরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গাড়ি চুরি করে সেই গাড়ি নতুন করে তৈরি করে ছেড়েছেন বিভিন্ন রুটে। এতে হয়েছেন পরিবহন মালিক। শাহিন কবিরের সব অপকর্মের সহায়তা করে আসছেন সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুজ্জামান শেখ। জনশ্রুতি রয়েছে সমিতির সভাপতি বাবুকে মদপান করিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর সহ-সভাপতি বাবুল হোসেন বাবুকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। কিন্তু বাবুও শাহিন কবিরের অত্যাচারে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
অটোমোবাইল সম্পর্কে শাহিন কবির বলেন, ‘অটোমোবাইল ওয়ার্কার্স মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটি নেই। আমাদের যশোরে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। আমি কাউকে দিয়ে কোনো চাঁদাবাজি করায় না। আমি একজন ভালো ব্যবসায়ী। ব্যবসার কারণে আমি চীন থেকে ঘুরে এসেছি। আমি কোনো দিন কাউকে মাদক সেবন করায়নি।’
টোকাই থেকে কোটিপতি হওয়া শাহিন কবিরের রয়েছে অঢেল সম্পদ। বর্তমানে তার রয়েছে পাঁচটি পরিবহনসহ বিভিন্ন রকমের কয়েকটি গাড়ি। যশোর-খুলনা রুটে তার দুটি পরিবহন চলে। যশোর-রাজশাহী রুটে চলে একটি, বেনাপোল-শরীয়তপুর রুটে একটি, খুলনা-কালনা রুটে একটি পরিবহন চলে। যশোর শহরের মুড়লি মোড়ে রয়েছে তার আলিশান বাড়ি। শহরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে কয়েক বিঘা জমি। মুড়লি মোড়ে রেল ক্রসিংয়ের পাশে রয়েছে বিশাল জমি। এছাড়া কয়েকটি ফ্ল্যাটও রয়েছে তার নামে ও বেনামে। তবে শাহিন কবির তার সম্পদ সম্পর্কে বলেন, আমি ব্যবসা করে সম্পদ করেছি। এটাও কি আমার অপরাধ?
এসব অপকর্মের কারণে শাহিন কবিরকে যশোর মিনিবাস ও বাস মালিক সমিতি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সংগঠনের যুগ্ম-সম্পাদকসহ যশোর-খুলনা সড়কের সড়ক সম্পাদক পদ ও সাধারণ সদস্যপদ থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসঙ্গে যশোর মিনিবাস ও বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অসীম কুণ্ডু তার বিরুদ্ধে যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শাহিন কবির বলেন, ‘আমাকে জোরপূর্বক বহিষ্কার করা হয়েছে। যে অভিযোগে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে তার কোনো ভিত্তি নেই। আমার সব কিছু বৈধতা থাকার পরও মালিক সমিতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। যশোর মিনিবাস-বাস মালিক সমিতির নেতারা যে কর্মকাণ্ড করছে তার কোনো বৈধতা নেই।’
Leave a Reply