টুটুল কি বরিশালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? একটি আটক গাড়ি ছাড়তে লাগবে তার সুপারিশ (!) Latest Update News of Bangladesh

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




টুটুল কি বরিশালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? একটি আটক গাড়ি ছাড়তে লাগবে তার সুপারিশ (!)

টুটুল কি বরিশালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? একটি আটক গাড়ি ছাড়তে লাগবে তার সুপারিশ (!)




শাকিব বিপ্লব ॥
একটি যাত্রীবাহী গাড়ি নিয়ে সমস্যার সমাধান টানতে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা দাবি করলেন বরিশাল-পটুয়াখালী বাস, মিনিবাস মালিক সমিতির নেতা রূপাতলীর কাওছার হোসেন শিপন। অর্থ দিতে অপারগতা প্রকাশে গাড়িটি এখন সড়কে নামতে না দিয়ে রূপাতলী গ্যারেজে জব্দ করে রেখেছে। শিপনের নিকটাত্মীয় পাথরঘাটার এক ব্যক্তির জাটকা ইলিশ মাছ বহন করার সময় পুলিশ তা আটক করায় তার খেসারত হিসেবে এই অর্থ দাবি করা হয়েছে বলে অভিযোগে জানা গেছে। মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুলের নির্দেশ মাফিক গাড়িটি আটকে রাখা হয়েছে বলে শিপন স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নবনির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ পর্যন্ত অবহিত। পক্ষান্তরে গাড়ির মালিক সোহাগ মল্লিককে একজন বিএনপিপন্থি হিসেবে অভিহিত করেন। প্রশ্ন উঠেছে, বরিশালের সবক্ষেত্রই কি এখন নিরব হোসেন টুটুল নিয়ন্ত্রণ করেন? এ প্রশ্নের যৌক্তিক কারণও রয়েছে। বরিশালের ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে প্রশাসনিক দপ্তর পর্যন্ত যে কোনো ঝুট-ঝামেলাসহ সুপারিশে টুটুলের বিকল্প নেই। এ কারণে বেশ কিছু দিন ধরে টুটুল “বরিশালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী” হিসেবে আখ্যা পেয়েছে।

তবে আলোচ্য এই গাড়ি নিয়ে ঘটনার পেছনে রয়েছে বেশ নাটকীয়তা। পরিবহণ মালিক-শ্রমিক সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সূত্র মারফত খোঁজ খবর নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, মূলত ওই পরিবহণ ভর্তি জাটকা ইলিশ ধরেছিল পুলিশ। এখন তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে কয়েক গুণ অর্থ ধার্য্য করা হলো অনেকটা চাঁদা আদায়ের ন্যায়। এই চাঁদা আদায়ে শালিস-বৈঠক বসিয়ে একতরফা বিচারে ৩০ হাজার টাকার মাছের মূল্য হয়ে গেল প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। রূপাতলী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে বিষয়টি নাটকীয়ভাবে উপস্থাপন করে সবকিছুই নিরব হোসেন টুটুল ও মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ইচ্ছা-অনিচ্ছার কথা জানিয়ে দায় চাপিয়ে দিলেন। টুটুলও একজন ইলিশ মাছ ব্যবসায়ী বিধায় ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টি অমূলক নয় বলে অনেকেরই মন্তব্য। আট মাস আগের ঘটনা কিন্তু এখন কিভাবে আবার সামনে আসলো সে কাহিনী আরেকটু নাটকীয়।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে পাথরঘাটা কাউন্টার থেকে দক্ষিণ বাংলা পরিবহণ নামক নৈশ কোচে বেশ কিছু ইলিশ ভর্তি করে ঢাকায় পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। আড়ৎ মালিক জুয়েল জানিয়েছিলেন মাছগুলো বৈধ এবং এলসি’র জন্য নির্ধারিত। পথিমধ্যে বরিশালের গৌরনদীতে পৌছালে হাইওয়ে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি করে প্রায় ৭ মণ জাটকা জব্দ করে। ওই সময়ই গাড়ির চালক-শ্রমিক গৌরনদীর পরিস্থিতি আড়ৎদার জুয়েলকে অবহিত করেছিল। কিন্তু তিনি কোন কর্ণপাত করেননি। বরং সেখান থেকে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। পুলিশের সাথে রফাদফা না হওয়ায় মাছ রেখে গাড়িটি ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হন জুয়েল। তিনি বিষয়টি বরিশাল বাস মালিক সমিতির নেতা কাওছার হোসেন শিপনকে জানান। সূত্র জানায়, শিপন ও জুয়েল উভয়ে একে অপরের আত্মীয়। দু’জনেরই দাবি ছিল- মোটা অংকের অর্থ আদায় করা। একপর্যায়ে পাথরঘাটা টু ঢাকার পথে যাতায়াতকারী দক্ষিণ বাংলা পরিবহণটি যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে গ্যারেজে কিছু দিন থাকার মাঝে ওই রুটে এই গাড়িটির চলাচল পারমিট বাতিল করে দেয়া হয়। যা আক্রোশমূলক। এক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখেন পরিবহণ মালিক সমিতির নেতা শিপন। এমনকি গাড়িটি আর এই বঙ্গে চালানোর উপায় নেই আওয়ামী লীগ ও বাস মালিক নেতা শিপনের দৌরাত্ম্যের মুখে। চলতি বছর গাড়িটি মালিকানা বদল হয়ে যায়। পটুয়াখালী লেবুখালীর বাদল গাজী গাড়িটি বিক্রি করে দেন বরিশালের বাকেরগঞ্জের সোহাগ মল্লিকের নিকট। তিনি কুয়াকাটা টু বরিশাল সড়কে গাড়িটি চলাচল শুরু করান। কিন্তু গাড়ির রং পাল্টে যাওয়ায় অনেক দিন ধরে কেউই আঁচ করতে পারেনি তাদের টার্গেটে থাকা এই গাড়ি সেই গাড়ি। অবশ্য অপর একটি সূত্র বলছে, পটুয়াখালীর একজন প্রভাবশালী নেতা সোহাগ মল্লিকের পক্ষে থাকায় গাড়িটি নিয়ে নীরব ছিলেন শিপন। সাম্প্রতিক বরিশাল আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সু-দিন আসলে শিপন আবার পিছু নেয় দক্ষিণ বাংলা নামক পরিবহণের। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে ফের গাড়িটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে গত ২০ রমজান গাড়িটি রূপাতলীর কাঠালতলীর গ্যারেজে নিয়ে আসা হয়। শিপন এ খবর পাওয়া মাত্র তার দলবল পাঠিয়ে গ্যারেজ মালিককে গাড়িটি আটকে রাখার নির্দেশ দেন। আরেকটি সূত্রের দাবি, গাড়িটি আটকের পর কৌশলী শিপন সেই মাছের ক্ষতিপূরণ আদায়ে পাথরঘাটার জুয়েলকে বরিশাল আওয়ামী লীগ নেতা নিরব হোসেন টুটুলের সাথে পরামর্শ করে মোটা অংকের অর্থ আদায়ের একটি পরিকল্পনা আঁকে। পরিস্থিতি ভালো নয় আঁচ করতে পেরে গাড়ির মালিক সোহাগ তার পূর্বেকার মালিক বাদলকে নিয়ে রূপাতলী বাস মালিক সমিতির কার্যালয়ে সালিশ-বৈঠকে শিপনের দ্বারস্থ হন। সেখানে বসে পাথরঘাটার জুয়েলের বক্তব্য প্রাধান্য দেওয়া হয় বৈধ মাছ খোয়া যাওয়া নিয়ে। অথচ ওই বৈঠক থেকেই মাছ আটকে ভূমিকা রাখা সেই গৌরনদী হাইওয়ে পুলিশ কর্তা সুমন সেলফোনে জানিয়েছেন মাছ বৈধ ছিল না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বলা হলো, নিরব হোসেন টুটুল নির্দেশ দেওয়ায় এই অর্থ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, নচেৎ এই সড়কে গাড়ি নামানো যাবে না। বাস মালিক সোহাগ কালিবাড়ি সড়কে যোগাযোগ করে সুমন সেরনিয়াবাতের মাধ্যমে জানতে পারে এক্ষেত্রে নেতা সাদিক আবদুল্লাহ অবগত এবং তার একটি নির্দেশনাও রয়েছে। কথা হল- মাছ গেল ৩০ হাজার টাকার, তাও অবৈধ মাছ। কিন্তু ক্ষতিপূরণ ধার্য্য করা হল তিন লাখ ত্রিশ হাজার টাকা। ক্ষতিপূরণ অর্থের পরিমাণের এত তারতম্য কেন, এমন প্রশ্নে শিপনের বক্তব্য- টুটুলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তাছাড়া সাদিক আবদুল্লাহ এক্ষেত্রে নমনীয় নয়। শিপনের আরো একটি বক্তব্য- গাড়ি মালিক সোহাগ বিএনপিপন্থি। তাহলে কিভাবে সে এ আমলে নিজের ইচ্ছায় চলবে। বিষয়টি নিয়ে শিপনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব মন্তব্য করেন। এ অবস্থায় গত আড়াই মাস ধরে গাড়িটি গ্যারেজেই রয়েছে। ইতিমধ্যে সাদিক আবদুল্লাহ সিটি নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হলে ফের গাড়িটি ছাড়াতে আবার তোরজোর শুরু করে। কিন্তু টুটুলের ভাষ্য- ধার্য্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া ব্যতিত গাড়ি সড়কে নামানো যাবে না। একেই তো বলে বরিশালের স্বারষ্ট্রমন্ত্রী (!) একটি গাড়ি সড়কে চলবে কিনা তার সিদ্ধান্ত দেওয়ার মালিক এখন টুটুল। পরিবহণ মালিক সমিতির নেতার মুখ থেকে এসব তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেলেও আসলে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ এবং নিরব হোসেন টুটুলের আদৌতে এক্ষেত্রে কোনো স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা এবং নির্দেশনা রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অবশ্য টুটুলের সাথে কয়েক দফা সেলফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে হয়। মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর সাথেও যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর তার ব্যক্তিগত সহকারী সুমন সেরনিয়াবাতের সাথে আলাপে জানা গেল গাড়িটি নিয়ে তারা সবাই অবহিত। সুতরাং আর বলার অপেক্ষা রাখে না- সাড়ে তিন লক্ষ টাকা আদায়ে রাজনৈতিক পরিকল্পনা কোথা থেকে কোন পর্যন্ত গড়িয়েছে। এমনকি গাড়ির মালিক এখন বিএনপিও হয়ে গেছেন!

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD