সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৬ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ পুলিশের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৫ আসামি আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।মিন্নির রিমান্ড শুনানির সময় আদালতে পুলিশ দুটি বিষয় উপস্থাপন করেছিল।
একটি হলো মিন্নির সঙ্গে আসামিদের কথোপকথনের মোবাইল কল লিস্ট। অন্যটি আদালতে দেওয়া আসামি টিকটক হৃদয়ের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি। খুনের পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নি জড়িত বলে টিকটক হৃদয় জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছে বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বরগুনার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন।
মিন্নির জামিন শুনানির দিন আদালত সূত্রে দুই আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মিন্নির সম্পৃক্ততার কথা সংবাদমাধ্যমে এসেছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শুধু দুই আসামির নাম বলেছেন। কিন্তু মিন্নি খুনের সঙ্গে কিভাবে জড়িত তা তিনি সাংবাদিকদের জানাননি।
গত ২৬ জুন রিফাত শরীফকে দিনদুপুরে শত শত লোকের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই দিন রাতেই ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন তার বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। মামলায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে এক নম্বর সাক্ষী করা হয়।
এরপর গত ১ জুলাই থেকে গ্রেপ্তারকৃতরা আসামিরা একের পর এক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু সেই সব আসামির জবানবন্দি প্রকাশ হয়নি। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী সেই জবানবন্দি প্রকাশ হওয়ার কথাও না। কিন্তু মিন্নিকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে তার দেওয়া ১৬১ ধারার জবানবন্দি একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে। এরপর আদালতে ১৬৪ ধরায় মিন্নির দেওয়া জবানবন্দি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। ওই দৈনিকটি কোন সূত্র থেকে জবানবন্দির কপি পেয়েছে, তা উল্লেখ করেনি।
এ ব্যাপারে মিন্নির পরিবার প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলছে, যারা প্রকাশ্যে রিফাতকে কোপাল, তারাও জবানবন্দি দিয়েছে। সেটি সংবাদমাধ্যমে না এসে কেন ঘুরেফিরে তাদের মেয়ের (মিন্নি) জবানবন্দি প্রকাশ হচ্ছে? কারাই বা এই জবানবন্দি সংবাদমাধ্যমকে সরবরাহ করছে? শুধু তা-ই নয়, নয়নের বাসা থেকে মিন্নির ব্যবহৃত জিনিসপত্র উদ্ধার নিয়ে তার পরিবার প্রশ্ন তুলেছে।
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘মিন্নিকে গ্রেপ্তারের পর একটি অনলাইন পোর্টালে দেখেছি, মোবাইল ফোন নিয়ে বিরোধের জের ধরে রিফাত খুন হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মোবাইল ফোন নিয়ে রিফাত ও মিন্নির মধ্যে ঘটনার দুই দিন আগে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে আমরা জানতাম। যেটি আমরা জানি না সেটি নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড? গত সোমবার একটি জাতীয় দৈনিকে মিন্নির স্বীকারোক্তি নিয়ে সংবাদ ছেপেছে। তারাও বলেছে, মোবাইল ফোন নিয়েই ঘটনার সূত্রপাত। অবাক হলাম এই ভেবে, যারা রিফাতকে কুপিয়েছে, তারা আদালতে কী বলেছে তা জানতে পেলাম না।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রভাবশালী চক্রটি নির্যাতন করে মিন্নির কাছ থেকে আদায় করা জবানবন্দি প্রকাশ্যে এনেছে। যাতে তারা প্রমাণ করতে পারে যে মিন্নির জন্যই রিফাত খুন হয়েছে। তাতে মামলা দুর্বল হবে। প্রভাবশালীদের ক্যাডাররা খুনের দায় থেকে বেঁচে যাবে।’
এ প্রসঙ্গে বরিশাল বিভাগীয় জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (স্পেশাল পিপি) লস্কর নুরুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি মামলার জন্য সবচেয়ে বড় উপাদান। এটি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত গোপন রাখা হয়। যদি আগেভাগেই তা প্রকাশ পায়, তাহলে তা মামলার তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত কিংবা ভিন্ন খাতে মামলাটি প্রবাহিত করার আশঙ্কা থাকে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বাইরে এর কপি যাওয়া আইনসিদ্ধ নয়।
Leave a Reply