সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ ডিপ টিউবওয়েলের সুপেয় পানির ব্যবস্থা না থাকায় ঝালকাঠির পোনাবালিয়া ইউপির মির্জাপুর গ্রামের নয়াবাড়িতে গ্রামবাসীরা নিজেদের অর্থায়নে স্যালো টিউবওয়েল স্থাপন করেন। কয়েক বছর আগে স্যালো টিউবওয়েলটি স্থাপনের সময়ই পানির রং লালচে আকার ধারণ করে। কিন্তু পানির স্বাদ ও গন্ধ ঠিক থাকায় সেই পানি পানসহ যাবতীয় কাজে ব্যবহার করেছে কয়েকটি পরিবার।
পানির বিবর্ণ হওয়ায় শঙ্কা ও ঝুঁকি দেখা দিয়েছে ওই পানি ব্যবহারকারী পরিবারগুলোতে। তাদের ধারণা পানিতে আর্সেনিক থাকতে পারে। তাই প্রথমে স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ঝালকাঠির কোথাও আর্সেনিক পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় পরিবারগুলো ঝুঁকি নিয়েই সেই পানি পানসহ যাবতীয় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
মির্জাপুর গ্রামের সন্তান ও রাজাপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের তথ্য আপা পদে কর্মরত শারমিন আক্তার সারা জানান, শুধু তাদের বাড়িই না এভাবে অনেক বাড়িতেই গৃহস্থালীর প্রয়োজনে স্যালো টিউবওয়েল স্থাপন করে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করছেন। স্যালো টিউওয়েল মানেই আর্সেনিকের ঝুঁকি নেই বলে তারা মনে করলেও এখন পরীক্ষার উপায় না পেয়ে ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম জানান, একজনের শরীরে আর্সেনিকের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৬ মাস থেকে ২০ বছর অথবা এর চেয়েও বেশি সময় লাগে এবং তিনটি পর্যায়ে লক্ষণগুলো দেখা দেয়।
আর্সেনিকে আক্রান্ত হলে করণীয় সম্পর্কে তিনি জানান, আর্সেনিক রোগের উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তার অথবা স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মীর সঙ্গে দেখা করতে হবে ও তার পরামর্শ মেনে চলতে হবে। অবশ্যই আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করতে হবে। নদী, পুকুর, বিল ইত্যাদির পানি ছেঁকে ২০ মিনিট ফুটিয়ে পান করা যায়। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি পান করা যেতে পারে, এ জন্য বৃষ্টি শুরু হওয়ার ৫ মিনিট পর থেকেই পানি ধরতে হবে। আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগী সব ধরনের খাবার খেতে পারেন। তবে শাক-সবজি ও পুষ্টিকর খাবার বেশি করে খেতে হবে।
আর্সেনিক দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য করণীয় হিসেবে তিনি জানান, নলকূপ বসানোর আগে মাটির নীচের পানিতে আর্সেনিক মাত্রা পরীক্ষা করে দেখতে হবে, পুরনো নলকূপের পানিতে আর্সেনিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে, টিউবওয়েল বসানোর আগে আশেপাশের টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করতে হবে, টিউবওয়েল বসানোর পর, গোড়া বাঁধানোর আগে আর্সেনিক পরীক্ষা করাতে হবে, টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া গেলে টিউবওয়েলের মুখ লাল রং করতে হবে। পানিতে আর্সেনিক না থাকলে সবুজ রং করতে হবে। লাল রং দেখলে ওই নলকূপের পানি খাওয়া যাবে না।
আর্সেনিক দূষণ মুক্ত টিউবওয়েলের পানি প্রতি ৬ মাস পর পর পরীক্ষা করাতে হবে। আর্সেনিক যুক্ত পানি রান্না ও খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। কুয়ার পানিতে আর্সেনিক আছে কিনা পরীক্ষা করে পান করতে হবে। পুকুর বা নদীর পানি বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে। এজন্য এক কলসি (২০লিটার) পানিতে আধা চামচ (১০মিলিগ্রাম) ফিটকিরি মিশিয়ে ২-৩ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। ফিটকিরি মিশালে পানির ময়লা কলসির নীচে জমা হবে। সাবধানে পাত্রের উপরের পরিষ্কার পানি অন্য পাত্রে ঢেলে ফুটিয়ে পান করতে হবে। বৃষ্টির আর্সেনিক যুক্ত পানি ফুটিয়ে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ ফুটালে আর্সেনিক দূর হয় না বরং পানি শুকিয়ে গেলে তাতে আর্সেনিকের ঘনত্ব আরো বেড়ে যায়।
সর্বশেষে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ঝালকাঠিতে আর্সেনিক পরীক্ষার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে বরিশাল থেকে আর্সেনিক পরীক্ষা করাতে হয়। পানির বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য একটি ল্যাব স্থাপনের জন্য বরাদ্ধ হয়েছে। শীঘ্রই এর কাজ শুরু হবে। ল্যাব চালু হলে তখন পানির সবধরনের পরীক্ষা করানো সম্ভব হবে।
Leave a Reply